শুক্রবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৫, ০২:২৯:০৩

‘ঐশীকে সংশোধনের সুযোগ দেওয়া উচিত’

‘ঐশীকে সংশোধনের সুযোগ দেওয়া উচিত’

জিন্নাতুন নূর : পুলিশ দম্পতি মাহফুজুর রহমান ও স্বপ্না রহমানের হত্যাকারী সন্তান ঐশীকে সংশোধনের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন দেশের আইনজীবী, সমাজবিজ্ঞানী ও মানবাধিকারকর্মীরা। তারা একই সঙ্গে আশা করছেন যে, উচ্চ আদালতে ঐশীর রায় পুনর্বিবেচনা করা হবে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘ঐশীর মা-বাবার হত্যাকাণ্ড আমাদের জন্য বিশাল একটি ‘‘অ্যালার্ম’’। এ ক্ষেত্রে সন্তানের মা-বাবা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ একটি শিশুর বেড়ে ওঠার পেছনে যতগুলো প্রতিষ্ঠান জড়িত, তারা সবাই সচেতন হবেন। তবে ঐশীর জন্য যে রায়ই নির্ধারণ হোক না কেন, হোক তা মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন দুটোই বড় শাস্তি। অবশ্যই শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে সমাজে সন্তানের মাধ্যমে অভিভাবকদের হত্যার ঘটনা আরও বৃদ্ধি পাবে।’ বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, ‘ঐশী যে অপরাধ করেছে এর জন্য গোটা সমাজ দায়ী। তার মৃত্যুদণ্ডের রায়ে আমি মর্মাহত। ঐশীর নৈতিক অধঃপতনের জন্য আমরা সবাই দায়ী। বিশেষ করে গোটা সমাজ এবং ঐশীর পরিবার, যাদের দায়িত্ব ছিল তাকে সঠিক পথ দেখানো। তাদের দায়িত্বে অবহেলার কারণেই আজ ঐশীর এই পরিণতি। ঐশীকে তার মা-বাবা সঠিকভাবে লালন-পালন করেননি। সে মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে। অথচ অভিভাববক হিসেবে ঐশীর মা-বাবা মেয়ের এই অবক্ষয় ঠেকাতে পারেননি। এ কারণে ঐশীর এই করুণ অবস্থায় পৌঁছানোর জন্য দায়ী তার মা-বাবাও। তারা এ দায়িত্ব এড়াতে পারেন না।’ সালমা আলী বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোতে যেখানে মৃত্যুদণ্ডের জন্য পেনাল রিফর্ম করা হচ্ছে, যেখানে বয়স্কদের ক্ষেত্রেও মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি কমানোর বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে, সেখানে ঐশীর মতো একটি মেয়ে, যে কিনা সদ্য কৈশোর অতিক্রম করেছে, তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, এটি মেনে নেওয়া কষ্টকর। আর সঠিকভাবে শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে বেড়ে না ওঠায় ঐশীর এই অধঃপতন হয়। উচ্ছৃঙ্খল ঐশীকে তার অভিভাবকরা সহযোগিতা করতে পারেননি। আমি মনে করি মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে ঐশীকে সংশোধন কেন্দ্রে রেখে তার দোষত্র“টিগুলো সংশোধন করা উচিত। কিন্তু এর পরিবর্তে মৃত্যুদণ্ড দেওয়াকে কোনোভাবেই সমর্থন করতে পারছি না। আমি আশা করছি উচ্চ আদালতে ঐশীর রায় পুনর্বিবেচনা হবে। কারণ ঐশী যখন অপরাধ করেছে, ওই সময় সে স্বাভাবিক ছিল না। এই হিসেবে তার শাস্তি আরেকটু কমানো উচিত।’ বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, ‘আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কথা বলে দেখেছি, যখন ঐশী এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়, তখন সে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিল না। ঐশী সরাসরি এ হত্যার সঙ্গে জড়িত এবং আদালত যাচাই-বাছাই করেই এ রায় দিয়েছেন। আমি মনে করি ঐশীর শাস্তি যদি নিশ্চিত না হয় তবে তা হবে মর্মান্তিক। আর সমাজে এ ধরনের ঘটনা আরও বৃদ্ধি পাবে। এ জন্য সন্তানদের ব্যাপারে অভিভাবকদের আরও সচেতন হতে হবে। তবে উচ্চ আদালতে ঐশীর ব্যাপারে যে রায়ই নির্ধারিত হোক, মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন আমি চাই তাকে রেহাই না দিয়ে অবশ্যই শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।’ আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী দিলরুবা শারমীন বলেন, ‘সমাজ ভাবে, এ ধরনের হত্যাকারীদের শাস্তি দেওয়া হলেই অপরাধ কমে আসবে। কিন্তু এ ধারণা সব সময় ঠিক না। অপরাধীকে কিছু ক্ষেত্রে সংশোধনের সুযোগ দিতে হবে। বিশেষ করে ঐশীর বিপথে যাওয়ার জন্য তার পরিবার দায়ী। ঐশীর নিহত মা-বাবার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আমি বলতে চাই, তাদের উচিত ছিল সন্তান কাদের সঙ্গে মিশছে এবং কী করছে সেদিকে নজর রাখা। যেখানে রাজন-রাকিবদের মতো শিশুহত্যায় জড়িতদের কেউ কেউ খালাস পেয়ে যাচ্ছে, সেখানে ঐশী, যে কিনা হত্যাকাণ্ডের সময় অস্বাভাবিক ছিল, তার মৃত্যুদণ্ডের রায়ে আমি বিস্মিত।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, ‘ঐশী যখন এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল তখন সে প্রাপ্তবয়স্ক ছিল এটি ডিএনএ পরীক্ষায় পাওয়া গেছে। এ রায়ের মধ্য দিয়ে আমাদের সমাজ ও পরিবারগুলোর অনেক কিছু শেখার আছে। এখন দেশের সর্বত্র যেভাবে মাদকের বিস্তার ঘটছে, এতে সমাজে নানা রকম অস্থিরতা ও হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনাও বেড়ে গেছে। আমার মতে, ঐশীকে এ অবস্থায় আসতে সমাজ ও তার পরিবার বাধ্য করেছে। সে তার পরিবারের কাছ থেকে ইচ্ছামতো টাকা নিত, যা তাকে উচ্ছৃঙ্খল করেছে। ঐশীর মা-বাবার হত্যাকাণ্ড আমাদের জন্য বিশাল অ্যালার্ম। এ ক্ষেত্রে সন্তানের মা-বাবা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ একটি শিশুর বেড়ে ওঠার পেছনে যতগুলো প্রতিষ্ঠান জড়িত, তারা সবাই সচেতন হবেন। একই সঙ্গে সন্তানের সঙ্গে মা-বাবার যে বন্ধুত্বপূর্ণ আলাপ-আলোচনার প্রয়োজন, এ বিষয়টিও অভিভাবকদের বুঝতে হবে।’ বিডি-প্রতিদিন ১৩ নভেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে