শনিবার, ০২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৭:২০:০৬

'কথা কম কাজ বেশি', তিনিই সেই আনিসুল হক যিনি আজ ইতিহাস

'কথা কম কাজ বেশি', তিনিই সেই আনিসুল হক যিনি আজ ইতিহাস

ঢাকা : সেরিব্রাল ভাসকুলাইটিস কেড়ে নিল জীবনে কখনো হার না মানা আনিসুল হককে। নন্দিত টিভি ব্যক্তিত্ব এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বাংলাদেশ টেলিভিশনে উপস্থাপক হিসেবে প্রাথমিক পরিচিতি অর্জন করলেও তাঁর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ কেটেছে ব্যবসায়ী নেতা হিসেবেই।

আনিসুল হক শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনসমূহে নেতৃত্ব দিয়েছেন। যতটা না ব্যবসা করেছেন, তাঁর চেয়ে বেশি দেখেছেন দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ। তিনি বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যান্ড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) প্রেসিডেন্ট ছিলেন ২০০৫ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত। বিজিএমইএ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য সংগঠন, যা ৩৫০০ তৈরি পোশাক কারখানা ও প্রায় ৩০ লাখ শ্রমিকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে থাকে। বাংলাদেশের রপ্তানির ৮০ শতাংশই তৈরি পোশাক। সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট থাকাকালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বিনা শুল্কে বাংলাদেশের পণ্য প্রবেশের পথ সুগম করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ইউরোপে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশের জন্য সেসময় তিনি জোর প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন।

ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) গঠিত হয়েছে দেশের ২৭৬টি অ্যাসোসিয়েশন ও ৮৪টি চেম্বার অব কমার্স নিয়ে। বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতার মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের জন্য বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি এবং জাতীয় অর্থনীতির উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে এফবিসিসিআই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এর প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি ২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত।

সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের কাজ সার্কভুক্ত দেশগুলোর বাণিজ্য ও বিনিয়োগ গতিশীল রাখা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, তরুণ উদ্যোক্তা সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন এবং মানুষে মানুষে মেলবন্ধন সৃষ্টি। ২০১০ থেকে ২০১২ পর্যন্ত এই সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট ছিলেন আনিসুল হক।

ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রোডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের (জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রসমূহের মালিকদের সংস্থা) প্রেসিডেন্ট ছিলেন আনিসুল হক। দেশের উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি বিদ্যুৎ উৎপাদনেও ভূমিকা রেখেছেন।

ব্যবসা নিয়েই বসে থাকেননি আনিসুল হক ও তাঁর স্ত্রী রুবানা হক। নিজেদের মৃত সন্তান শারাফের নামে ঢাকা ও আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে তুলেছেন ‘শারাফের পাঠশালা’, যেখানে পড়াশোনা করে তাঁদের প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের শিশুরাসহ অনেকে।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব নিয়ে নিজের ব্যবসার দিকে আর তাকাননি আনিসুল হক পরিবারের বাকি সদস্যদের হাতে মোহাম্মদী গ্রুপের দায়িত্ব তুলে দিয়ে নিজে ব্যস্ত থেকেছেন ঢাকা গড়ার কাজে। আর এর জন্য সরকারের দেয়া বেতনও তোলেননি কোনোদিন।

আনিসুল হকে প্রায় দুই দশক ধরে দেশের অর্থনীতি ও বাণিজ্য অঙ্গনে অবদান রেখেছেন। তিনি আর নেই, কিন্তু পুরো জীবনটা উদাহরণ করে রেখে গেছেন।
এমটি নিউজ/আ শি/এএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে