নিউজ ডেস্ক : আগামী জাতীয় নির্বাচনে তৃতীয় রাজনৈতিক জোট হিসেবে অংশ নেয়ার লক্ষ্য নিয়েই এগোচ্ছে যুক্তফ্রন্ট। সোমবার জোট গঠনের সিদ্ধান্তের দিনেই এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন নেতারা। দীর্ঘ দিন থেকে ঝুলে থাকা তৃতীয় রাজনৈতিক জোট গঠনের উদ্যোগ এতদিন আলোর মুখ দেখেনি উদ্যোক্তা দলগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে।
এছাড়া, জোটের লক্ষ্য নিয়েও মতভেদ ছিল নেতাদের মধ্যে। সর্বশেষ জোট গঠনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে নেতারা জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখেই দেশে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় কর্মসূচি ঠিক করে মাঠে নামবে যুক্তফ্রন্ট। নেতারা জানিয়েছেন সামগ্রিক দিক দিয়ে বিদ্যমান দুই রাজনৈতিক জোট ব্যর্থ। দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী তৃতীয় জোট গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।
সোমবার বিকল্পধারা বাংলাদেশ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ও নাগরিক ঐক্যের নেতারা ‘যুক্তফ্রন্ট’ নামে জোট গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। জেএসডি সভাপতি আসম আবদুর রবের উত্তরার বাসায় এক বৈঠক শেষে অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে চেয়ারম্যান করে জোট গঠনের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
রাজনৈতিক জোট গঠনের লক্ষ্যে এর আগে আরো কয়েকটি বৈঠক হয়। এসব বৈঠকে গণফোরামের নেতারা অংশ নিলেও নতুন জোটে তারা থাকছেন না। চারটি দল নিয়ে যুক্তফ্রন্টের যাত্রা শুরু হলেও আরো কয়েকটি দল জোটে অংশ নিতে আগ্রহী বলে যুক্তফ্রন্টের উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন। এদিকে নতুন জোট গঠনের বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অনেকে। গতকাল আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নতুন জোট গঠনকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন রাজনীতিতে নতুন জোটের আত্মপ্রকাশ গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।
যুক্তফ্রন্টের উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, সামনে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেশবাসীর চাওয়া। মানুষের সেই প্রত্যাশা পূরণে কর্মসূচি দেয়া হবে জোটের পক্ষ থেকে। একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জনদাবি পূরণে কাজ করবে জোট। একই সঙ্গে নির্বাচনের পরিবেশ হলে প্রধান দুই রাজনৈতিক জোটের বিপরীতে তৃতীয় জোট হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবে যুক্তফ্রন্ট। নেতারা মনে করেন সামগ্রিক দিক দিয়ে বিদ্যমান দুই জোটের প্রতি মানুষের আস্থা নেই।
মানুষ তৃতীয় জোটের অপেক্ষায় রয়েছে। যুক্তফ্রন্ট মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারবে বলেও মনে করেন তারা। এদিকে জোট গঠনের সিদ্ধান্তের কথা জানালেও আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের বিষয়ে আলোচনা চলছে। কর্মসূচি ঠিক করে সামনে সংবাদ সম্মেলন করে বা সম্মেলন ডেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জোটের যাত্রা শুরু হতে পারে। সংবাদ সম্মেলনের চেয়ে সম্মেলন করে আত্মপ্রকাশের বিষয়ে নেতাদের আগ্রহ বেশি।
যুক্তফ্রন্ট গঠনের বিষয়ে জেএসডি সভাপতি আসম আবদুর রব বলেন, জোট গঠনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন করা। সুশাসন, আইনের শাসন ও মানুষের শান্তিপূর্ণ জীবন প্রতিষ্ঠা করা। এ লক্ষ্যে আমরা জোট গঠন করেছি।
তিনি বলেন, নির্বাচন এখনো সুদূর পরাহত। আমরা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করবো। ক্ষমতায় থেকে ২০১৪ সালের নির্বাচন কেউ গ্রহণযোগ্যতা দেয়নি। জনগণ ভোট দিতে পারেনি। আমরা দাবি করছি, এই সরকারকে পদত্যাগ করে নির্বাচন দিতে হবে। আরপিওতে থাক বা না থাক সংবিধান সংশোধন করে হলেও নির্বাচন করতে হবে। বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে।
তিনি বলেন, বড় দুই জোটের প্রতি জনগণের কোনো আস্থা নেই। যারা ক্ষমতায় ছিলেন এবং আছেন তাদের প্রতি জনগণ বিরক্ত। চালের কেজি ৭০ টাকা, একটি পিয়াজের দাম ছয় টাকা। ঘরের মধ্যে থেকেও মানুষ জীবনের নিরাপত্তা বোধ করছে না। চারদিকে অপহরণ, গুম, খুন ও ধর্ষণ। এই অবস্থায় দেশে দুই জোটের প্রতি মানুষের কোনো আস্থা নেই। জনগণ শঙ্কিত। এ কারণে দুই জোটের বিপরীতেই আমরা জোট গঠন করেছি। আগামী নির্বাচনের অনেক সময় আছে। পরিস্থিতি দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।
জোটের অন্যতম উদ্যোক্তা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না জানিয়েছেন, জোটের শুধু নাম ও প্রধান ঠিক করা হয়েছে। পরবর্তী কর্মসূচি, পরিকল্পনা ঠিক করতে আমরা বৈঠক করবো। তিনি বলেন, সামনে যেহেতু নির্বাচন এটি নিয়েও আলোচনা হবে। ঢাকা সিটি করপোরেশন নিয়ে জোট কিছু ভাবছে কিনা- এ বিষয়ে তিনি বলেন, পরবর্তীতে জোটের সব সিদ্ধান্তই দেশবাসীকে জানানো হবে।
বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরী বলেন, জোটের কাঠামো কেমন হবে, কর্মসূচি কি হবে- তা এখনো ঠিক করা হয়নি। সিনিয়র নেতারা বসে তা ঠিক করবেন। তবে গণতন্ত্র এবং নির্বাচনই আমাদের লক্ষ্য। আমরা মনে করি দেশের বিদ্যমান দুই জোটের বিকল্প শক্তি হবে যুক্তফ্রন্ট। কারণ দুই জোটের প্রতি মানুষের আস্থা নেই। মানুষ নতুন একটি বিকল্পের অপেক্ষায় আছে।
ভবিষ্যতে জোটের আকার বাড়বে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেএসডি’র সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন বলেন, আরো কিছু দল এবং সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। এসব দলের অনুষ্ঠানে যুক্তফ্রন্টের নেতারা যাচ্ছেন। এসব দল সামনে জোটে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরা আশা করি নির্বাচনের আগে জোটের পরিধি বাড়বে।
এদিকে জোটের আলোচনায় থাকলেও যুক্তফ্রন্টে গণফোরাম না থাকার পেছনে জোট গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে মতভেদ কাজ করেছে। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন দলটি সর্বশেষ বৈঠকে যায়নি। দলটির নেতারা তৃণমূল থেকে জনমত তৈরি করে কেন্দ্রীয়ভাবে জোট ঘোষণার পক্ষে ছিলেন। তাদের এ পরামর্শ গ্রহণ না করায় যুক্তফ্রন্টে যাননি তারা।
নতুন জোটকে অভিনন্দন জানিয়ে গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেছেন, আমরা যেভাবে চেয়েছিলাম সেভাবে না হওয়ায় জোটে যাইনি। সামনে নির্বাচন আসছে। জোট আরো বড় হতে পারে। আমরাও থাকতে পারি। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে দুই জোটের প্রতি মানুষের আস্থা নেই। শক্তিশালী একটি তৃতীয় জোট জনগণেরও চাওয়া।
উল্লেখ্য, অধ্যাপক বি. চৌধুরী, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ও আসম আবদুর রব ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে এনডিএফ নামে একটি জোট গঠন করেছিলেন। এই জোট বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন বর্জন করেছিল।
এদিকে তৃতীয় একটি জোট গঠনের বিষয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনা চলছিল। সম্প্রতি আসম আবদুর রবের বাসায় এক বৈঠকে পুলিশ বাগড়া দিলে তা আলোচনায় আসে। পরে বি. চৌধুরীর বাসায় আরো একটি বৈঠক হয়। ওই দুই বৈঠকে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী উপস্থিত না থাকলেও সোমবারের বৈঠকে তিনি অংশ নেন। আগের দুই বৈঠকে থাকা গণফোরামের প্রতিনিধি সর্বশেষ বৈঠকে যাননি।
এমটিনিউজ/এসবি