নিউজ ডেস্ক : আগাম নির্বাচনের আলোচনা হঠাৎ করেই শুরু হয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে আলোচনায় জল ঢেলে দিয়েছেন। রাজনীতির মাঠ দৃশ্যত নীরব। তবে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পর্যায় অতিক্রম করছে রাজনীতি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনের পর অনেক কিছু পরিষ্কার হয়ে গেছে। সহসাই আরো বেশকিছু নতুন দৃশ্যপট সামনে আসবে। বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা একেবারে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
সহসাই এ মামলার রায় ঘোষণা করা হতে পারে। এ মামলাটি ঘিরে এরই মধ্যে বিএনপি’র ভেতরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। বর্তমানে কোনো আন্দোলন কর্মসূচি না থাকলেও ধরপাকড় থেমে নেই। গত কয়েকদিনে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের বিএনপি’র এবং সহযোগী সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
যদি বেগম জিয়ার সাজা হয় সেক্ষেত্রে বিএনপি’র অবস্থান কী হবে তা নিয়ে নানা আলোচনা রয়েছে। দলের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা তারেক রহমান দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তার বক্তব্য-বিবৃতি প্রকাশে গণমাধ্যমের ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সহসাই তার রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার সুযোগ নেই।
খালেদা জিয়া যদি অনুপস্থিত থাকেন সেক্ষেত্রে বিএনপি’র নেতৃত্বে কে থাকবেন সে প্রশ্নও বড় হচ্ছে। তবে তার চেয়েও বড় প্রশ্ন সেক্ষেত্রে নির্বাচনী রাজনীতিতে বিএনপি কি অংশ নেবে? নানা রকম তত্ত্ব। গত সংসদ নির্বাচনে বিএনপি’র অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত কি সঠিক না ভুল ছিল সে প্রশ্নের উত্তর এখনো খুঁজছে বিএনপি।
দলটির দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা সে নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে ছিলেন। কিন্তু দলের ভেতরের কোনো অংশ সে চেষ্টা ভণ্ডুল করে দেয় বলে আলোচনা রয়েছে। যদিও এখন বলা হচ্ছে, আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়া ছাড়া বিএনপি’র সামনে কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু সে নির্বাচনে বিএনপি শেষ পর্যন্ত অংশ নেয়ার সুযোগ পায় কি-না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে।
ঢাকার একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, সংগঠন এবং কৌশলগত দুর্বলতার কারণে ভোটের লড়াই থেকে বিএনপি ছিটকেও যেতে পারে। দেখা গেলো, পরিস্থিতি এমন দাঁড়ালো বিএনপি নির্বাচনে থাকতেই পারলো না। বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটা পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, বিএনপিকে আগামী নির্বাচনে আনতে সরকার কোনো ধরনের দেনদরবার করবে না।
এ নিয়ে কোনো ধরনের সংলাপের সম্ভাবনাও দৃশ্যত নাকচ করে দিয়েছেন সরকার প্রধান। অধিকন্তু সৌদি আরবে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া এবং তার ছেলে তারেক রহমানের কথিত সম্পদ থাকার খবর দেশের বেশির ভাগ সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী উষ্মা প্রকাশ করেছেন।
যদিও প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য নিয়ে অনলাইন সংবাদ মাধ্যম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী সম্পাদিত দ্য ডেইলি অবজারভারে এই খবরটি (সৌদিতে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সম্পদের) প্রকাশিত হয়েছিল গত ১লা ডিসেম্বর। প্রতিবেদনে সংবাদের উৎস বলা হয়েছিল, আরবভিত্তিক টিভি চ্যানেলগুলোকে উদ্ধৃত করে ‘গ্লোবাল ইন্টেলিজেন্স নেটওয়ার্ক (জিআইএন)’ এবং ‘কানাডার টিভি চ্যানেল দ্য ন্যাশনাল’ এই খবর দিয়েছে।
ইন্টারনেট ঘেঁটে ‘দ্য নাশনাল’ নামে কানাডার কোনো টিভি চ্যানেলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। কানাডার রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলে দ্য ন্যাশনাল নামে একটি নিউজ প্রোগ্রামের অস্তিত্ব পাওয়া যায়, তবে সেখানে সার্চ দিয়ে খালেদা সংক্রান্ত কোনো খবর পাওয়া যায়নি। আর গ্লোবাল ইন্টেলিজেন্স নেটওয়ার্ক নামে কোনো গণমাধ্যম ইন্টারনেটে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
‘বাংলা ইনসাইডার’ নামে একটি ইন্টারনেট সংবাদপত্রেও ‘খালেদার সম্পদের’ খবরটি ছাপা হয়েছে। সেখানে কোনো সূত্রের উদ্ধৃতি নেই। এই সংবাদপত্রটি ইতোপূর্বে ভুয়া খবর প্রকাশের জন্য আলোচনায় আসে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রাজনীতিতে নাটকীয় সমঝোতার কোন সম্ভাবনা নেই। দৃশ্যত এবার সংলাপের সম্ভাবনাও ফুরিয়ে এসেছে। পর্দার অন্তরালে পশ্চিমা কূটনীতিকরা একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পক্ষে সরব রয়েছেন। যদিও তাদের এই প্রচেষ্টায় সফলতার কোন আভাস নেই। দক্ষিণ এশিয়ায় ক্রমশ চীনের প্রভাব বাড়ছে।
তবে গণতন্ত্র নিয়ে অতীতেও দেশটির কোনো উদ্বেগ ছিল না, এখনো নেই। চীনা বিদেশনীতি বহুলাংশে অর্থনীতি নির্ভর। পাশের বাড়ির দেশটির বাংলাদেশ নীতিতেও বড় কোনো পরিবর্তনের আভাস নেই। যদিও ভুল প্রমাণ হওয়া কিছু গুজব বাজারে রয়েছে।
এই যখন অবস্থা তখন আলোচনা হচ্ছে ১৫ই ফেব্রুয়ারি অথবা ৫ই জানুয়ারির মডেল নিয়ে। ইতিহাসের কখনো পুনরাবৃত্তি হয় আবার কখনো হয় না। ১৫ই ফেব্রুয়ারি আর ৫ই জানুয়ারি পরিণতি একই হয়নি। ইতিহাস একই পথে হাটেনি। এবার কী হবে? ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হবে? নাকি নতুন কোন মডেলের নির্বাচন হবে? -এমজমিন
এমটিনিউজ/এসবি