নিউজ ডেস্ক : সমুদ্রপথে হজ পালনের ক্ষেত্র তৈরির উপায় খুঁজছে সরকারের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। এর জন্য জোরেশোরে চলছে হজ জাহাজ চালুর কার্যক্রম। কোন প্রক্রিয়াতে এ কাজটিকে সহজতর করা যায় এ নিয়ে শুরু হয়েছে চুলচেরা বিচার-বিশ্লেষণ।
এর আগে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শাহাজান খান এ বিষয়ের সম্ভাবত্য যাচাইয়ের নির্দেশনা দেন। কিন্তু কোন বছর থেকে এই উদ্যোগের সফল বাস্তবায়ন ঘটবে তা এখনো পরিষ্কার নয়। এই প্রস্তাব সরকারের ওপর মহলে বিবেচনায় রয়েছে।
আশার খবর হচ্ছে, ইতোমধ্যে কয়েকটি দেশ এ ধরনের উদ্যোগ নিয়ে সফল হয়েছেন। তাদের নেওয়া এ ধরনের পদক্ষেপ বাংলাদেশ সরকারের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে বলে জানিয়েছেন নীতিনির্ধারকরা।
কারণ অতি প্রাচীন নৌপথকে কাজে লাগাতে শুরু করেছে আফ্রিকার দু-একটি দেশ। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতও সমুদ্রপথকে কাজে লাগাতে উদ্যোগ নিয়েছে; আগামী মৌসুম থেকেই এর কার্যক্রম শুরু হবে। ইতোমধ্যে সৌদি সরকার ভারতের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমোডর এম মোজাম্মেল হক বলেন, বাংলাদেশ থেকে হজ পালনের উদ্দেশ্যে যেসব মুসলমান সৌদি আরবে যেতে যান, তাদের কীভাবে সমুদ্রপথে পাঠানো যায়, এ নিয়ে একটা আলোচনা হয়। এটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের নির্দেশ ছিল নৌমন্ত্রীর বলেও জানান এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, দুটি মাধ্যমে এই কাজটি করা যেতে পারে যার একটি সরকারিভাবে নৌপরিবহন অধিদফতরের (ডিজি শিপিং) মাধ্যমে জাহাজ কিনে অথবা তৈরি করে হজ জাহাজ চালু করা। পাশাপশি বেসরকারি শিপিং ব্যবসায়ীরা জাহাজ কিনে সরকারের অনুমতি নিয়ে হজ জাহাজ চালু করতে পারে। কিন্তু সরকার এবং বেসরকারি সংস্থার কারোই যাত্রীবাহী জাহাজ নেই।
কারণ ডিজি শিপিং কার্গো জাহাজ, মালবাহী জাহাজসহ অন্যান্য জাহাজ কিনলেও যাত্রীবাহী জাহাজ আপাতত কেনা নেই। বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান বলেন, ১৯৮৪ সালের দিকে একটি জাহাজ কেনা হলেও সেটিও এখন সচল নয়।
তবে, এই মাধ্যমটির সঠিক ব্যবহার করা হলে বিমানে হজযাত্রী পালনে প্রতিবছর যে ধরনের ঝামেলা ও সংকট তৈরি হয়, নদীপথকে কাজে লাগানো সম্ভব হলে সরকারের এ ক্ষেত্রে অনেকটা সফলতা আসবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এতে সময় একটু বেশি লাগলেও খরচ অনেক কম হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশভাগের আগে সমুদ্রপথে মুসলিমরা এখান থেকে হজে যেতেন। প্রযুক্তি, কালের পরিক্রমায় মানুষের ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় যুগের তালে তালে সমুদ্রপথ ছেড়ে বিমানে আসা-যাওয়া শুরু হয়।
দীর্ঘ চার যুগের বেশি সময় পর পুরোনো ওই মাধ্যমকে ফিরিয়ে আনতে অনেক দেশ তৎপর হয়ে উঠেছে। চলতি বছর আফ্রিকার দেশ সুদান বিমান ও স্থলপথের পাশাপাশি নৌপথকে ব্যবহার করেছে। ২০১৭ সালে সৌদির প্রাচীনতম নৌবন্দর জেদ্দায় সুদান থেকে ৩০টি জাহাজের মাধ্যমে ১৮ হাজার হজযাত্রী এই সুযোগ গ্রহণ করেছে।
স্থল ও বিমানপথের তুলনায় খরচ সাশ্রয়ী হওয়ায় অনেকেই এই পথকে বেছে নিচ্ছেন। সূদুর আফ্রিকার দেশ সুদানের পথে হাঁটছে দক্ষিণ এশিয়ার শক্তিশালী রাষ্ট্র ভারত। বিমানপথে হজযাত্রী পাঠাতে সরকারে ভতুর্কি গুনতে হচ্ছে দেশটির সরকারকে।
সেদিক থেকে নৌপথে খরচ সাশ্রয় হওয়ায় আগামী বছর থেকে আগ্রহী হাজিদের এ মাধ্যমে সৌদি পাঠাতে অনেক ধাপ এগিয়েছে। দীর্ঘ ২৩ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৯৫ সালে সর্বশেষ সমুদ্রপথে হজে যায় ভারতের মুসলমানরা। ইতোমধ্যে দেশটির নৌমন্ত্রণালয় এ পরিকল্পনাকে অনুমোদন দিয়েছে এবং সৌদি আরবের হজ কর্তৃপক্ষ ভারত সরকারের বিবেচনাধীন এ বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছে বলে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে।
সুদান ও ভারতের মতো বাংলাদেশ সরকারও নদী পথে মুসলমানদের হজ পালনের ব্যবস্থা রাখতে এখন উপায় খুঁজছে। সম্প্রতি সমুদ্রপথে সি-ক্রুজ সার্ভিস চালু করা-সংক্রান্ত এক বৈঠকে এ বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। কোন উপায়ে সামনের দিকে অগ্রসর হলে বিমানের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে মুসলমানদের পবিত্র হজ পালন নির্বিঘ্ণ করা যায়, সে লক্ষ্যে কাজ করছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।
জানা যায়, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহাজান খান নৌপথকে কাজে লাগিয়ে হাজিদের সৌদি পাঠাতে তৎপর হয়ে উঠেছেন। এর আগে সমুদ্রপথে হজ জাহাজ চালুর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের অভিমত তিনি ব্যক্ত করেছিলেন। এখন কীভাবে ইতোমধ্যে নেওয়া উদ্যোগ আলোর মুখ দেখবে তার উপায় খুঁজছে সরকারের এ মন্ত্রণালয়।-প্রতিদিনের সংবাদ
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস