শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৫, ১২:৪১:২১

আজ বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস

আজ বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস

নিউজ ডেস্ক: আজ বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস । নীরব মহামারী ব্যাধি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে ডায়াবেটিস ।বিশ্বে প্রতি ৮ সেকেন্ডে ডায়াবেটিসে মারা যাচ্ছে একজন। প্রতি বছর দ্বিগুণ হারে বাড়ছে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা। বৃদ্ধির এ হার অব্যাহত থাকলে সারাবিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ২০৩০ সাল নাগাদ ৪০ কোটিতে পৌঁছবে। ‘সকল রোগের জননী’খ্যাত ডায়াবেটিস নীরব মহামারী ব্যাধি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। বাংলাদেশে ধনী-গরিব নির্বিশেষে এ রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। শুধু রাজধানীতে ডায়াবেটিস চিকিৎসার বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান বারডেম হাসপাতালেই প্রতিদিন গড়ে ৮শ’ নতুন ডায়াবেটিকের রোগী রেজিস্ট্রেশন করছেন। ডায়াবেটিসের এমন চিত্র সামনে রেখে আজ ১৪ নভেম্বর বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন করি, ডায়াবেটিস থেকে মুক্ত থাকি’। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যশিক্ষাই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করলে রোগী নিজেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। বিভিন্ন গবেষণা সূত্রে জানা গেছে, উন্নত বিশ্বের তুলনায় বাংলাদেশে এ রোগে আক্রান্তের বৃদ্ধির হার বেশি। বর্তমানে সারাবিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান দশম। দেশে বর্তমানে ৬০ লাখ ডায়াবেটিস রোগী রয়েছে। আগামী ২০৩০ সালে তা বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমান বৃদ্ধির হার অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ সপ্তম স্থানে চলে যাবে। নানা কর্মসূচি অব্যাহত রাখার পরও দেশের ৬০ লাখ ডায়াবেটিস রোগীর মাত্র ২৫ ভাগ রোগীকে স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনতে পেরেছে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি। চিকিৎসকরা জানান, ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগে আক্রান্ত হওয়ার নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই। সব বয়সের মানুষই এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে ভারত, বাংলাদেশ, চীন ও ব্রাজিলের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে রোগটির অগ্রযাত্রার মাত্রা বেশি। এর প্রধান কারণ হিসেবে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন, স্থূলতা, হাঁটা-চলার অভাব এবং মন্দ খাদ্যাভ্যাসই দায়ী। জানা গেছে, ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগটি দুই ধরনের হয়ে থাকে। টাইপ-১ এবং টাইপ-২। জন্ম গত ও পরিবেশগত কিছু কারণে টাইপ-১ ডায়াবেটিসের প্রকোপ দেখা যায়। সাধারণত অল্পবয়সীরা এতে আক্রান্ত হয়। টাইপ-২ ডায়াবেটিস শতকরা ৬০ ভাগেরও বেশি প্রতিরোধযোগ্য। খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপন পদ্ধতির উন্নয়ন এবং শারীরিক পরিশ্রম বাড়ানোর মাধ্যমে শতকরা ৬৫-৭০ ভাগ ক্ষেত্রে ‘টাইপ-২’ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। এ জন্য দরকার সচেতনতা। ডায়াবেটিস প্রতিরোধে শুধু নিজে সচেতন হলেই চলবে না, অন্যকেও সচেতন করতে হবে। ডায়াবেটিস রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতা না বাড়ালে এ রোগের কারণে কিডনি, চোখ, হৃৎপিণ্ড এবং পাসহ অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হতে পারে। এ রোগে অন্ধত্ব ও পঙ্গুত্ব বরণ ছাড়াও অকালে মৃত্যুবরণ করছে অনেকে। এ ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে গণসচেতনতা বাড়ানো খুবই জরুরি। আর সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করলে রোগী নিজেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রোগটি প্রতিরোধে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন। এ রোগের মহামারী ঠেকাতে নানা ধরনের কর্মসূচি সরকারি ও বেসরকারি পর্যায় থেকে নেয়া যেতে পারে। ফাস্টফুড ও কোমল পানীয়ের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। পাঠ্যপুস্তকে ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধ বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এতে করে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা রোগটি সম্পর্কে জানতে পারবে। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির মহাসচিব মো. সাইফ উদ্দিন জানান, বর্তমানে দেশে মোট ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা ৮৪ লাখ। বারডেমসহ বাডাসের বিভিন্ন অধিভুক্ত সমিতিতে রেজিস্টার্ড রোগীর সংখ্যা ৩০ লাখ। আশঙ্কাজনক তথ্য হলো ডায়াবেটিস রোগীর শতকরা ৫০ ভাগ রোগী জানেন না তারা এ রোগে আক্রান্ত। তিনি বলেন, ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতন না হলে ও তা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ডায়াবেটিক রোগীর কিডনি, চোখ, হৃৎপিণ্ড ও পা মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়ে শারীরিক জটিলতার প্রবল ঝুঁকি থাকে। বর্তমানে দেশে যে হারে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে এ হার অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সালে রোগীর সংখ্যা দেড় কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে জানান তিনি। প্রসঙ্গত, ২০০৭ সাল থেকে জাতিসংঘের মাধ্যমে সারাবিশ্বে ১৪ নভেম্বর দিবসটি পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির অনুরোধে বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘে ১৪ নভেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস পালনের প্রস্তাব দেয়। ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর জাতিসংঘে সর্বসম্মতিক্রমে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয় ১৪ নভেম্বর। এ দিনটি ইনসুলিনের আবিষ্কারক ফ্রেডেরিক ব্যান্টিংয়ের জন্মদিন। ১৯২১ সালে কুকুরের শরীরে গবেষণা চালিয়ে ইনসুলিন আবিষ্কার করেন ডা. ফ্রেডেরিক ব্যান্টিং ও তার সহকর্মী চার্লস বেস্ট; যা ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে। ১৪ নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/পিবি/পিপি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে