রবিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০১:০৪:১১

আ.লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত, কেন্দ্রীয় নেতাদের টিমওয়ার্ক চলছে

আ.লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত, কেন্দ্রীয় নেতাদের টিমওয়ার্ক চলছে

আলী আসিফ শাওন : সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে একাদশ সংসদ নির্বাচনের ‘অ্যাসিড টেস্ট’ হিসেবে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এই নির্বাচনগুলোয় দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করে সেই জয়ের ধারা আগামী নির্বাচনেও অব্যাহত রাখতে চান ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা।

ইতোমধ্যে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিজ নিজ বিভাগের সিটি নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করতে বলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, গত সিটি নির্বাচনের পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়ে এবারের নির্বাচনে আগভাগেই মেয়রপ্রার্থী তালিকা প্রস্তুত করেছে আওয়ামী লীগ।

সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিজ নিজ সিটিতে নির্বাচনী প্রচার চালানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে দলটির হাইকমান্ড থেকে। আগাম প্রস্তুতি নিয়ে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ৬ সিটিতে নৌকার জয় দেখতে চান ক্ষমতাসীনরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগের উন্নয়নের কারণে আসন্ন সিটি নির্বাচনগুলোয়ও ভোটাররা আমাদের প্রার্থীদের বিজয়ী করবেন বলে বিশ্বাস করি।

এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে রাজশাহী, সিলেট ও খুলনা সিটিতে আমাদের প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে। বাকি সিটিগুলোয়ও আলাপ-আলোচনা ও জরিপ চলছে। সর্বশেষ নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর মেয়র মনোনয়ন চূড়ান্ত করবে দলের মনোনয়ন বোর্ড।

আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের একাধিকসূত্রে জানা গেছে, আসন্ন সিটি নির্বাচনে রাজশাহী, খুলনা, সিলেটে দলটির পুরনো প্রার্থীরা এবারও লড়বেন মেয়র পদে। বাকি দুই সিটি গাজীপুর ও বরিশালে নতুন প্রার্থীর কথা ভাবা হচ্ছে।

রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনে আবার দলীয় মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন সাবেক সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও বদরউদ্দীন আহমেদ কামরান। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সবুজ সংকেতে নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়েছেন দুই মেয়রপ্রার্থী।

এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কৌশল অনুযায়ী রাজশাহী সিটিতে পুরোদমে কার্যক্রম চলছে। সময় যত গড়াবে নির্বাচনী তৎপরতা তত দৃশ্যমান হবে।

অন্যদিকে সিলেটের সাবেক সিটি মেয়র বদরউদ্দীন আহমেদ কামরান গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত যতটুকু সম্ভব জনসংযোগ চালানোর চেষ্টা করছি। উঠান বৈঠক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগদান, উৎসব-পার্বণে এলাকাবাসীর পাশে থাকা এভাবেই প্রতিনিয়ত প্রচার চালাচ্ছি।

খুলনা সিটিতে মেয়র পদে প্রাথমিকভাবে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের ভাবনায় ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, শেখ জুয়েল নিজেই মেয়র নির্বাচনে আগ্রহী নন। এ কারণে অন্য প্রার্থী খোঁজা হচ্ছে। দলটির হাইকমান্ডের একটি বড় অংশ মেয়র পদে চান সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেককে।

তবে বিকল্প হিসেবে আরেক সাবেক মেয়র খুলনা চেম্বারের সভাপতি কাজী আমিনের নামও রয়েছে আলোচনায়। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর সিটিতে এবার আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী হতে যাচ্ছেন গত নির্বাচনের বিদ্রোহী প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। ওই নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে শেষ মুহূর্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। তবে গত নির্বাচনের পরাজিত আজমতউল্লাহ খানের নামও রয়েছে আলোচনায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার নওফেল আহমেদ বলেন, ইতোমধ্যে গাজীপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আমরা একটি বড় কর্মসূচি সফল করেছি। আশা করছি, আসন্ন নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ গাজীপুর সিটিতে বিজয়ী হব।

সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরণ মারা যাওয়ায় বরিশাল সিটিতে নতুন প্রার্থী দিতে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে। এই সিটিতে প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর পরিবারের একজনকে ভাবা হচ্ছে প্রার্থী হিসেবে। দলটির নীতিনির্ধারকদের আলোচনায় রয়েছেন আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর ভাই আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত ও ছেলে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, বরিশালের মেয়রপ্রার্থীদের ওপর জরিপ চলছে। এই সিটিতে এবার নতুন প্রার্থী দিতে হবে আমাদের। তবে প্রার্থী এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ৫ সিটিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নৌকার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করতে চান ক্ষমতাসীনরা। এ জন্য কোমর বেঁধে মাঠে নামবেন। সরকারি দল হওয়ায় আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা নির্বাচনী প্রচারে অংশ না নিতে পারলেও সার্বণিক তদারকি করবেন। ইতোমধ্যে ৫ সিটি করপোরেশনে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন দলের চার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ৬ সাংগঠনিক সম্পাদক।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ সিলেটে, ডা. দীপু মনি গাজীপুরে, জাহাঙ্গীর কবির নানক রাজশাহী, আবদুর রহমান বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশনের দায়িত্বে রয়েছেন। একই সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে আহমদ হোসেন সিলেটে, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বরিশালে, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন খুলনায়, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী রাজশাহীতে ও ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল গাজীপুরে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করছেন।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আসছে বছরের শুরুতেই ৫ সিটিতে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি। ইসির নির্বাচনী রোডম্যাপে রংপুর সিটির পর বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী ও সিলেট এবং সবশেষে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে নির্বাচন করার পরিকল্পনা রাখা হয়েছে। -দৈনিক আমাদের সময়

এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে