শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৫, ০১:২০:৩৫

ভাড়াটিয়াদের তথ্য এবার পুলিশের কাছে

ভাড়াটিয়াদের তথ্য এবার পুলিশের কাছে

নিউজ ডেস্ক: রাজধানীতে প্রতিটি বসবাসকারী নগরবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সব বাড়ির মালিকদের কাছে ভাড়াটিয়াদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে। যদিও ২০১৩ সাল থেকেই বেশ ক’বার এভাবে বাড়িওয়ালাদের কাছ থেকে ভাড়াটিয়াদের তথ্য নেয়া হয়েছিল কিন্তু সেই প্রক্রিয়া পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি, আংশিকভাবে তথ্য সংগ্রহের মধ্যেই ছিল সীমাবদ্ধ। সম্প্রতি বাড়ি ভাড়া নিয়ে জঙ্গি কর্মকাণ্ড, বাড়ির মালিকের স্বজনদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় ও বাড়ির মালিকের বাসায় ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। তাই আবারো ভাড়াটিয়াদের কাছে এ প্রক্রিয়ায় নতুন করে তথ্য সংগ্রহ শুরু করা হয়েছে। এ বিষয়ে ডিএমপির প্রতিটি থানায় কড়া নির্দেশও দেয়া হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের মাসিক ক্রাইম কনফারেন্সে আলোচনা হয়। সম্প্রতি রাজধানীতে কয়েকটি সিরিয়াস অপরাধ সংঘটিত হওয়ায় ঢাকাবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান মহানগর পুলিশের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তবে তিনি নাম প্রকাশ করতে চাননি। ক্রাইম কনফারেন্সে ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া নগরবাসীর তথ্য সংগ্রহের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখার নির্দেশনা দেন বলে বৈঠকে উপস্থিত এ কর্মকর্তা জানান। তিনি জানান, মহানগর পুলিশের কাছে রাজধানীর বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের তথ্য থাকলে অপরাধী শনাক্ত করা সহজ হবে। ২২ অক্টোবর রাতে ঢাকার গাবতলীতে তল্লাশি চৌকিতে ছুরিকাঘাতে পুলিশের এএসআই ইব্রাহিম মোল্লাকে ছুরিকাঘাতে খুন করা হয়। ওই সময় মাসুদ রানা নামে একজনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার মাসুদ রানা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, এএসআই ইব্রাহিমকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়। বগুড়ার আদমদীঘি থানার ছাত্রশিবির সভাপতি এনামূল হক ওরফে কামাল ছিল মূল হোতা। মাসুদের দেয়া তথ্যে ওই দিনই গভীর রাতে কামরাঙ্গীরচর থেকে জঙ্গিদের অস্ত্র ভাণ্ডার খুঁজে পায় পুলিশ। সেখান থেকে দেশে তৈরিসহ বিভিন্ন ধরনের গ্রেনেড ও বোমা উদ্ধার করা হয়। গোয়েন্দা তথ্য ছিল দুর্গাপূজার প্রতিমা বিসর্জনের সময় সন্ত্রাসীরা বড় ধরনের নাশকতা করবে। এ ছাড়া তাদের টার্গেট ছিল কয়েক গুরুত্বপূর্ণ (ভিআইপি) ব্যক্তি। যদিও তারা তা করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক থাকায়। তবে এখনো এএসআই ইব্রাহিমের ঘাতকের নাগাল পায়নি পুলিশ। এ ঘটনার পরদিন ২৩ অক্টোবর দিনগত রাত ২টার দিকে হোসেনী দালানে শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় বোমা হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় একজন নিহত ও শতাধিক আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা গ্রেনেডের সঙ্গে আগের রাতে কামরাঙ্গীরচর থেকে উদ্ধার করা গ্রেনেডের মিল রয়েছে। প্রায় ৪০০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানে প্রথমবার এমন নাশকতার ঘটনা হলো। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কয়েক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন সময় গ্রেফতার জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, তারা ছদ্ম নামে বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে। এরপর সুযোগ বুঝে অপরাধ কর্মকাণ্ড করে বাড়ির ভাড়া পরিশোধ না করেই পালিয়ে যায়। অনেক সময় বাড়ি মালিকরাও তাদের বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মিরপুর এলাকার এক ভাড়াটিয়া অভিযোগ করে বলেন, তথ্য সংগ্রহের জন্য পুলিশ থেকে যে ফর্ম দেয়া হয়েছে তাতে মহানগর পুলিশের কোনো মনোগ্রাম বা সিল নেই। এক্ষেত্রে যারা তথ্য সংগ্রহ করতে আসবেন তারা আসলেই পুলিশ কি না এবং প্রকৃত অর্থেই তথ্য সংগ্রহ করছেন কি না সে বিষয়ে সংশয় দেখা দেয়। কারণ যে পুলিশ কর্মকর্তারা তথ্য সংগ্রহ করতে আসেন তাদের বেশিরভাগই পোশাক পরে আসেন না। এ বিষয়ে মহানগর পুলিশের জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার উপ-কমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, ২০১৩ সালে এ কার্যক্রম শুরু হলেও মাঝে কিছু সময় স্তিমিত ছিল। কিন্তু এখন বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। আর ফরমে পুলিশের মনোগ্রাম বা সিল থাকার প্রয়োজন নেই। যদি কারো সন্দেহ হয় তিনি নিকটস্থ থানায় যোগাযোগ করে বিষয়টি যাচাই করতে পারবেন। আর যেসব পুলিশ কর্মকর্তা ফরম বিতরণ ও তথ্য সংগ্রহ করতে যাবেন তাদের পোশাক (ইউনিফর্ম) পরে এবং নিজেদের পরিচয় দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নগরবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থেই পুলিশের কাছে এসব তথ্য থাকা উচিত। তাতে অপরাধীদের ধরতেও সুবিধা হয়। ১৪ নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/পিবি/পিপি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে