শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৫, ০৪:৫৭:১২

আরও জোরদার হচ্ছে যৌথ অভিযান

আরও জোরদার হচ্ছে যৌথ অভিযান

সৈয়দ আতিক : আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দেশের বিভিন্ন জেলায় বর্তমানে যে যৌথ অভিযান চলছে তার পরিধি আরও বাড়ানো হয়েছে। চলমান অভিযানে প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থান থেকে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। নাশকতায় মদদদাতা হিসেবে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীও রয়েছে গ্রেফতারের তালিকায়। সম্প্রতি সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা স্পর্শকাতর জেলার একটি তালিকা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দফতরে। পাশাপাশি ওই জেলাগুলোর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার পক্ষ থেকে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের একটি তালিকা করা হয়েছে। ওই তালিকা অনুযায়ী যৌথ অভিযান চালানো হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১০-১২টি জেলায় প্রথমে অভিযান শুরু হলেও পরে পরিস্থিতির নিরিখে ২৫-২৬ জেলায় অভিযান শুরু হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিআইজি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা বলেন, সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে অভিযানের জন্য বাড়তি সতর্কতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে বাছাই করা কর্মকর্তাদের নিয়োজিত করা হয়। সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এমন কর্মকর্তাদের অভিযানিক তৎপরতা চালানোর জন্য সব ধরনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে একটি গোষ্ঠী আগের মতোই নাশকতার পরিকল্পনা করেছে। তাদের প্রতিহত করতে যেখানে যে মাত্রার অভিযান প্রয়োজন সেখানে সেটাই করা হচ্ছে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে শান্তি-শৃংখলা বজায় রাখতে তালিকাভুক্ত জেলাগুলোতে অভিযান চালানো হচ্ছে। সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে। কর্মকর্তাদের মতে, স্পর্শকাতর জেলাগুলোতে টহল জোরদার, গোয়েন্দা নজরদারি ও অনুসন্ধান বৃদ্ধি করা হয়েছে। জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে আইনশৃংখলার দায়িত্বে নিয়োজিত নিয়মিত বাহিনীর বাইরে যৌথ বাহিনীর ৪০০ থেকে ৫০০ সদস্য কাজ করছেন। ছোট আয়তনের জেলায় থাকছে ২০০ থেকে ৩০০ সদস্য। আইনশৃংখলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, যৌথ অভিযান চালানো হচ্ছে : সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, দিনাজপুর, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, লালমনিরহাট, নীলফামারী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর, রংপুর, নোয়াখালী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, পটুয়াখালী, গাইবান্ধা, ফরিদপুর, পাবনা, যশোর, খুলনা, বগুড়া, ফেনী, রাজশাহী, জামালপুর ও বরিশালে। এসব জেলায় প্রতিদিন গড়ে শতাধিক জামায়াত-শিবির ও বিএনপির নেতাকর্মী এবং নাশকতায় জড়িতরা গ্রেফতার হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এসব জেলাকে ৩টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সহিংসতাকবলিত জেলা, সন্ত্রাসকবলিত জেলা ও সরকারবিরোধীদের নাশকতার জন্য টার্গেট করা নতুন কয়েকটি জেলা। পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, জামায়াত-শিবির যাতে কোনো ধরনের বিশৃংখল পরিস্থিতি তৈরি করে মানুষের মনে ভীতি সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনী ইতিমধ্যে জোরালো অভিযান শুরু করেছে। বাছাই করা কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। জানা গেছে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ সদর দফতর ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে যৌথ বাহিনীর এ অভিযান মনিটরিং করা হচ্ছে। একই সঙ্গে নাশকতা ঠেকাতে সরকারের অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি কাজ করছে সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের অ্যাডভান্সড ইন্টেলিজেন্স টেকনোলজি। এতে একদল সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ কাজ করছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোবাইল ফোনে জামায়াত-শিবির ও জঙ্গিরা নিজেদের মধ্যে কথোপকথন নিরাপদ না ভেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বা বিভিন্ন সাইট ব্যবহার করছে। তবে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা তা জেনে ফেলতে সক্ষম হচ্ছেন। এ কারণে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় কেন্দ্রে সরকার নাশকতা ঠেকাতে সচেষ্ট হয়েছে। সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা এ বিষয়ে বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতার পরিকল্পনা করছে জামায়াত-শিবির। তারা গুরুত্বপূর্ণ জেলা ও স্থানকে টার্গেট করেছে। এসব তথ্য অ্যাডভান্সড ইন্টেলিজেন্স টেকনোলজির মাধ্যমে আগে থেকেই জেনে তা সরকারের অন্য সংস্থাগুলোকে অবগত করা হয়। এর ফলে অনেক নাশকতা মোকাবেলা করা গেছে। তবে কিছু কিছু জেলায় নাশকতার আশংকা রয়েছে। যা ঠেকাতে আইনশৃংখলা বাহিনী কাজ করছে। তিনি বলেন, যেসব এলাকায় যৌথ বাহিনীর অভিযান চালানো হচ্ছে ওই সব জেলায় নাশকতার পরিকল্পনা ছিল জামায়াত-শিবিরের। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে গোয়েন্দারা জানতে পারেন যে, নাশকতাকারীরা নিজেদের মধ্যে কয়েকটি স্থানে হামলার পরিকল্পনা করে। অ্যাডভান্সড ইন্টেলিজেন্স টেকনোলজির মাধ্যমে গোয়েন্দারা তা আগেই আঁচ করে ফেলায় তা ভেস্তে যায়। যেসব সাইটে নাশকতাকারীরা আলোচনা বা পরামর্শ করেছে সেখানে তাদের কেউ কেউ এমনও তথ্য পোস্ট করেছে যে, ‘কে যেন তাদের সঙ্গে গাদ্দারি করেছে।’ এর মানে তারা হামলা চালাতে ব্যর্থ হয়েছে। আগেই তাদের তথ্য কেউ জেনে যাওয়া এ ব্যর্থতার কারণ। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-শিবির হামলা ও নাশকতার চেষ্টা করছে। তাদের রুখতে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আইনশৃংখলা বাহিনী অভিযান চালাচ্ছে। তিনি বলেন, প্রয়োজনের নিরিখে যৌথ অভিযান পরিচালনায় আরও জনবল দেয়া হবে। তবে অভিযানে আইনশৃংখলা বাহিনীকে সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এ বিষয়ে দিনাজপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) রুহুল আমিন টেলিফোনে বলেন, বিশৃংখলা ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। অভিযান জোরদার করা হয়েছে। জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, চলমান অভিযান আরও জোরদার করা হয়েছে। জামায়াত-শিবির নাশকতা চালাতে পারে- এমন আশংকায় তারা সতর্ক রয়েছেন। তিনি আরও বলেন, যৌথ বাহিনীর অভিযানে যারা ধরা পড়ছে তাদেরকে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান আরও জোরদার করার কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার একেএম হাফিজ আক্তার।-যুগান্তর ১৪ নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/পিবি/পিপি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে