শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৫, ০৫:১৬:৪৬

আমনেও কৃষকের সঙ্গী হতাশা

আমনেও কৃষকের সঙ্গী হতাশা

নিউজ ডেস্ক : এবারের আমন ধান ফলাতে কেজিপ্রতি কৃষকের খরচ বেড়েছে ৫০ পয়সা। মণে বেড়েছে ২০ টাকা। কিন্তু বাজারে ধানের যে দাম তাতে খরচ তো উঠবেই না, বরং গত বছরের চেয়েও কম দাম পাওয়ার আশঙ্কা আছে। বড় বড় মিল মালিকদের কাছে এখনো রয়ে গেছে গত মৌসুমের আমন ও বোরো ধান। সেই শুকনো ধানের মণপ্রতি দর এখন সাড়ে ৫০০ টাকার কাছাকাছি। আর নতুন ওঠা আমন ধান বিক্রি হচ্ছে ৫৩০ থেকে ৫৪০ টাকা মণ দরে। অথচ সরকারের হিসাবেই এবার এক মণ ধানের উৎপাদন খরচ দাঁড়াবে ৭৪২ টাকা। কৃষকরা বলছে, মণপ্রতি ৭০০ টাকা দর না পেলে তাদের কিছুতেই পোষায় না। কিন্তু বছরজুড়েই কখনো ধানের মণ এবার ৭০০ টাকার বেশি হয়নি, সেটা যে ধানই হোক। আসছে আমনে কৃষকের বিপদ আরো বেশি। কারণ, তাদের অনেকের ধানই অতিবৃষ্টি ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে মোটের ওপর খরচটা আরো বেশি। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশের কৃষকরা রেকর্ড পরিমাণ ধান ফলিয়েছে। বছর শেষে মোট উৎপাদন দাঁড়িয়েছে তিন কোটি ৪৭ লাখ টন। কিন্তু এত বেশি উৎপাদনের পরও দেশের বাজারে ঢুকেছে ভারতীয় চাল। আমদানি হয়েছে ১৪ লাখ ৯০ হাজার টন চাল। সব মিলিয়ে ব্যাপক সরবরাহের কারণে চালের দাম কমে গেছে। বছরজুড়ে দাম কমতির দিকে থাকায় গত আমনের পর বোরোতেও কৃষকরা লাভের মুখ দেখেনি। এবারের আমনেও তাদের মুখে হাসি ফোটার কোনো আশা আপাতত নেই। এবার বর্ষায় কৃষকরা সবজির দর ভালো পেয়েছে। পেঁয়াজ, রসুন, আলুসহ বিভিন্ন পণ্যে তাদের লাভ হয়েছে। কিন্তু ধানের দরে হতাশা কাটছেই না। ভারতীয় চাল আমদানি অবশ্য কমে গেছে। গত চার মাসে দেশে এসেছে এক লাখ ২০ হাজার টন চাল। কিন্তু গত অর্থবছরে দেশে উৎপাদন ও আমদানি মিলিয়ে যে বাড়তি জোগান এসেছে এর নেতিবাচক প্রভাব এখনো রয়ে গেছে। মিল মালিকরা জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে পুরনো ধান রয়ে গেছে। বাজারেও এখনো পুরনো ধান মিলছে। ফলে আমন মৌসুম শুরু হলে ধানের দাম বাড়বে- এমন আশা করা যাচ্ছে না। দেশের মোট চালের প্রায় ৪০ শতাংশ আসে আমন থেকে। গত আমন মৌসুমে দেশে এক কোটি ৩১ লাখ ৯০ হাজার টন চাল উৎপাদিত হয়েছিল। এবার বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে আক্রান্ত হলেও শেষ পর্যন্ত আমন আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছিল। ৫২ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তা ১০২ শতাংশ অর্জিত হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান। কিছু জেলায় ‘শর্ট ডিউরেশন’ বা কম সময়ে উৎপাদিত জাতের আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। চলতি মাসের শেষের দিকে পুরোদমে আমন ধান বাজারে আসতে শুরু করবে। আবাদের পর বড় কোনো দুর্যোগ বা বালাইয়ের কবলে না পড়ায় এবারও আমনের ভালো ফলন হবে বলে জানিয়েছে ডিএই। কিন্তু তাতে কৃষকের খুশি হওয়ার কোনো কারণ নেই। বগুড়া ও রংপুরের দুটি বড় বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানে এখন নতুন ধান বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি ৫৩০ থেকে ৫৪০ টাকা দরে। অবশ্য ওই ধানে এখনো আর্দ্রতা বেশি, অর্থাৎ ভেজা। কিন্তু গত মৌসুমের পুরোপুরি শুকনো ধান মিলছে ৫৫০ টাকা দরে। সম্প্রতি খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভায় জানানো হয়, এ বছর প্রতি কেজি আমন ধান উৎপাদনে ১৮ টাকা ৫০ পয়সা খরচ হয়েছে। সে হিসাবে প্রতি মণ (৪০ কেজি) ধানের উৎপাদন খরচ দাঁড়ায় ৭৪২ টাকা। অবশ্য এ খরচ পারিবারিক শ্রমসহ অন্য অনেক কিছু হিসাব করে করা হয়েছে। কৃষক এত কিছু বিবেচনায় নেয় না। তবে নিজের শ্রমের মূল্য না ধরেও ধানের চলতি বাজার দরে তাদের পোষাচ্ছে না। রংপুরের ফতেপুরের কৃষক আবদুল ওয়াজেদ বলেন, মণপ্রতি ৭০০ টাকা না পেলে খরচ ওঠে না। কারণ, শ্রমিকের মজুরি অনেক বেশি। একজন শ্রমিককে এখন দিনে ৩০০ টাকা মজুরি দিতে হয়। বছর দুয়েক আগেও তা ছিল ২০০ টাকা। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর (ডিএএম) গত ২৯ অক্টোবর বাংলাদেশ বেতারে প্রচারের জন্য ধানের যে দামের তালিকা পাঠিয়েছে তাতে দেখা যায়, ময়মনসিংহের নান্দাইল বাজারে প্রতি মণ মোটা বোরো ধান বিক্রি হয়েছে ৫৫০ থেকে ৫৬০ টাকা। ১৭ সেপ্টেম্বরের ওই রকম আরেকটি তালিকায় দেখা যায়, তখন নান্দাইল বাজারে একই ধানের দর ছিল মণপ্রতি ৬২০ থেকে ৬৩০ টাকা। ওই তালিকায় আরো সাতটি জেলার সাতটি বাজারে ধানের দাম উল্লেখ করা হয়েছে। এতে সর্বনিম্ন দর ৫২৫ টাকা থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত আছে বলে দেখা গেছে, যা আগের চেয়ে কিছুটা কম। রংপুরের পাইকারি ধান ব্যবসায়ী আসলাম পারভেজ বলেন, বছরজুড়েই ধানের দাম তেমন একটা বাড়েনি। বরং একসময় কমে ৪৮০ টাকায়ও নেমেছিল। এর কারণ ভারতীয় চাল। কম দামে ভারতীয় চাল বাজারে বিক্রি হওয়ায় দেশীয় চালের চাহিদায় কিছুটা প্রভাব পড়েছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, এক বছর আগের তুলনায় এখন প্রতি কেজি মোটা চালের দাম ৯.৫৯ শতাংশ ও সরু চালের দাম ৫.১৫ শতাংশ কম। তবে মাঝারি মানের চালের দাম তেমন কমেনি, আগের চেয়ে তা ১.১৮ শতাংশ কমেছে বলে উল্লেখ করছে টিসিবি। রাজধানীর কাজীপাড়ার চাল ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান গত মাসে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) রশিদ ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল বিক্রি করেছেন দুই হাজার ২৫০ টাকা দরে। গত মঙ্গলবার একই চাল বস্তাপ্রতি তিনি দাম চেয়েছেন দুই হাজার ১৬০ টাকা। জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোরবানির ঈদের আগে ট্রাকভাড়া বেড়ে যাওয়ায় চালের দাম কিছুটা বেড়েছিল। এখন সেটা কমে গেছে। রশিদ ব্র্যান্ডের মিনিকেট চালের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রশিদ অ্যাগ্রো ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী ও মিল মালিকদের সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ বলেন, মিল মালিকদের কাছে এখনো গত আমন ও বোরো মৌসুমের ধান রয়ে গেছে। এরই মধ্যে নতুন আমন ধান বাজারে আসতে শুরু করেছে। ধানের দাম না বাড়লে কৃষক আমনে চরম ক্ষতির শিকার হবে। পাশাপাশি মিলগুলোও বড় সংকটে পড়বে। তিনি বলেন, ‘আমরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ধান কিনি। কিনে রাখা ধান থেকে চাল উৎপাদন করে এখন লোকসানে বিক্রি ছাড়া কোনো উপায় নেই।-কালের কণ্ঠ ১৪ নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/পিবি/পিপি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে