নিউজ ডেস্ক : বাজারে এখন এক কেজি দেশী পেঁয়াজের দাম ১৩০ টাকা। এই দামে কেনা যাচ্ছে এক কেজি আপেল, ব্রয়লার মুরগি কিংবা পাঙ্গাশ জাতীয় বিভিন্ন মাছও। মৌসুম থাকা সত্তেও নিত্য প্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম হু হু করে বেড়ে যাওয়া বিভিন্নভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ভোক্তারা।
ফলে কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টকশো, পরিবহণ, বাসাবাড়িসহ সর্বত্রই সমালোচনার শীর্ষে রয়েছে মসলা জাতীয় এই পণ্যটি।
অতিরিক্ত দামের কারণে ক্ষোভে অনেকে বিভিন্ন ধরনের স্ট্যাটাসও দিচ্ছেন ফেসবুকে।
পেঁয়াজের দাম নিয়ে সাংবাদিক আদিত্য শাহীন তার ফেসবুকে লিখেছেন, “প্রতি সাত আট দিনে বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে হাজার টাকার। প্রিপেইড মিটার কার্ড চালুতে প্রযুক্তিকে স্বাগত জানানোর উচ্ছ্বাসে ভাসছিলাম। দুই সপ্তাহেই সেই উচ্ছ্বাস মিলিয়ে গেছে। এসি, ফ্যান, ইস্ত্রি কিছুই চলছে না; এতেই মাসে চার, সাড়ে চার হাজার টাকার বিদ্যুৎ পুড়লে মধ্যবিত্তের আর পুড়তে বাকি থাকে কী?
“বাজারের সব ঝাঁঝ গিয়ে পড়েছে পেঁয়াজে। অথচ আড়াই তিন মাস আগে মরিচ যে আসমানে উঠেছে, সে কথা আমরা ভুলেই গেছি। এখনও মরিচ ১২০ টাকা। পেঁয়াজের সমান সমান। বাজারে মাছ-মাংস মুরগির তুলনায় সবজির দাম বেশি।”
তিনি আরো লিখেন, “মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির হিসাবটা আমাদের বেশ তুষ্ট করে। এ যেন ‘অর্ধেক দেহ আগুনে আর অর্ধেক দেহ বরফে রেখে নাতিশীতোষ্ণ’র সুখ। বিধাতাই জানেন, কোথায় চলেছি আমরা।”
ফরহাদ হোসাইন নামের একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী তার ওয়ালে লিখেছেন, “এক কেজি আপেল ১৩০ টাকা, এক কেজি পেঁয়াজও ১৩০ টাকা। দেশের অর্থনীতির এই দুর্বার অগ্রগতি নিজ চোখে দেখে যাওয়ার সৌভাগ্য হলো।”
বাজারে পেঁয়াজ কিনতে গেলে ভোক্তাদের এই ক্ষোভের কারণ খুঁজে পাওয়া যায়। রাজধানীর কারওয়ান বাজার হচ্ছে কাঁচামাল ও মসলা জাতীয় পণ্যের অন্যতম পাইকারি বাজার।
বৃহস্পতিবার এই বাজারে যেয়ে দেখা গেছে, প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা দরে। আর আমদানি করা (ভারতীয়) পেঁয়াজ ৮৫ টাকা ও দেশী নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৯০ থেকে ৯৫ টাকা দরে।
কিন্তু এক কেজি আপেল মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা দরে। ব্রয়লার মুরগি, পাঙ্গাশ ও হাইব্রীড কই মাছও পাওয়া যাচ্ছে কেজিপ্রতি টাকা ১২০ থেকে ১৩০ টাকা দরে। সেই হিসাবে ভোক্তাকে এক কেজি আপেল কিংবা ব্রয়লার মুরগির দামে কিনতে হচ্ছে এক কেজি পেঁয়াজ।
ব্যবসায়ীরা বলছে, বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশে বৃষ্টির কারণে পেঁয়াজের আবাদ নষ্ট হওয়ায় মজুদ ও সরবরাহ কমেছে। ফলে দাম বাড়ছে।
শ্যামবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য ও পেঁয়াজ আমদানিকারক ওয়াহিদ হাসান বলেন, বৃষ্টিতে এ বছর বাংলাদেশ ও ভারতে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে তুলনামূলক অনেক কম। তাই দেশে একদিকে মজুদ কমছে। অন্যদিকে আমদানিও হচ্ছে বেশি দামে। তাই দাম বেড়ে গেছে।
বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসা শুরু হওয়ার পরও কেন দাম বেশি জানতে চাইলে তিনি বলেন, পেঁয়াজ উঠা শুরু হয়েছে। বাজারেও আসছে। আশাকরি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই দাম কমে যাবে।
এই পেঁয়াজ আমদানিকারক আরো বলেন, বাংলাদেশে যে পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদন হয় তা দিয়ে দেশের চাহিদা মেটে না। ফলে আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশের আমদানির জন্য প্রধান বাজার হচ্ছে ভারত। কিন্তু দেশটিতে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণে বাংলাদেশেও প্রভাব পড়েছে।
ভারতের কলকাতার পেঁয়াজ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ভাগ চান্দকা এক্সপোর্ট লিমিটেডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, প্রতিষ্ঠানটির এক্সপোর্ট নির্বাহী আনসুমান আবাস্তী বলেন, ভারতে পেঁয়াজের মজুদ কমে গেছে। নতুন পেঁয়াজ এখনও বাজারে আসেনি। তবে খুব শিগগিরই নতুন পেঁয়াজ আসবে। তখন বর্তমানের চেয়ে ভারতে দাম অনেক কমে যাবে।
তিনি বলেন, “কলকাতায় বর্তমানে পেঁয়াজের কেজি ৩২ থেকে ৩৩ রুপি। যা বাংলাদেশি টাকায় (১ টাকা সমান ১ টাকা ২৯ পয়সা) প্রায় ৪২ টাকা। তবে বেনাপোল হয়ে আমরা যখন পেঁয়াজ রপ্তানি করি তখন অন্যান্য খরচসহ প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম পড়ে প্রায় ৪২ থেকে ৪৩ রুপি বা প্রায় ৫২ টাকা।”
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস