ফ্রান্সের পাশে সারা বিশ্ব

নিউজ ডেস্ক: প্যারিসে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্ব নেতারা। ফ্রান্সের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ ও হামলাকারীদের ধরতে সহায়তার অঙ্গীকার করেছেন তারা- ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার শিকার ফ্রান্সের পাশে দাঁড়িয়েছে পুরো বিশ্ব। রাজধানী প্যারিসে শুক্রবার রাতের ওই হামলায় ১২৮ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা শোক ও নিন্দা জানিয়েছেন। তারা ফ্রান্সের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ ও হামলাকারীদের ধরতে সহায়তার অঙ্গীকার করেছেন। প্যারিসের একটি জনপ্রিয় কনসার্ট ভেন্যুসহ কয়েকটি স্থানে শুক্রবার গুলিবর্ষণ, আত্মঘাতী বিস্টেম্ফারণ ও মানুষজনকে জিম্মি করার ঘটনা ঘটেছে। ভয়াবহ এই হামলার নিন্দা ও নিহতদের জন্য শোক প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, 'এ হামলা বর্বরোচিত। এর নিন্দা জানানোর ভাষা নেই।' মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা হোয়াইট হাউসে এক ভাষণে এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, 'এই হামলা শুধু ফ্রান্সের জনগণের ওপর নয়, এটা সব মানবতা ও সর্বজনীন মূল্যবোধের ওপর হামলা।' সন্ত্রাসীদের বিচারের আওতায় আনতে ফ্রান্সের জনগণ ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কাজ করতে যুক্তরাষ্ট্র তৈরি আছে বলে তিনি তার ভাষণে উল্লেখ করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এ হামলাকে 'ভয়ানক জঘন্য' উল্লেখ করে বলেন, 'আমরা আবারও নিরীহ সাধারণ মানুষদের ওপর ভয়াবহ জঘন্য সন্ত্রাসী হামলা প্রত্যক্ষ করলাম। আমরা ফ্রান্স সরকার ও সেই দেশের নাগরিকদের যে কোনো ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।' মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিও এ ঘটনার নিন্দা জানান। এ হামলায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, 'ফ্রান্সের মানুষদের সাহায্য করতে যা যা করার, আমরা তা করব।' ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী শনিবার সরকারের ইমার্জেন্সি কমিটির সঙ্গে জরুরি মিটিংয়ে বসেন। তিনি এ ঘটনাকে ভয়াবহ ও বীভৎস বলে বর্ণনা করেন। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাজৈই ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে ম্যানুয়েল গর্সিয়া মার্গাল্লো 'জিহাদি হামলার' ভয়াবহতার কথা তুলে ধরেছেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান হামলায় নিহতদের জন্য শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, 'আমরা বুঝতে পারছি, ফ্রান্স আজ কী ধরনের দুর্ভোগ মোকাবেলা করছে।' শোক ও নিন্দা প্রকাশ করেছেন ইউরোপীয় কমিশন ও ন্যাটো জোটের প্রধানরা। ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান ডোনাল্ড টুস্ক বলেন, 'প্যারিসের এ ঘটনায় আমি ভীষণ মর্মাহত। আমরা ফ্রান্সের জনগণের সঙ্গে সংহতি জানাই।' ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক প্রধান ফ্রেডারিকা মোঘেরিনি এক টুইটার বার্তায় বলেন, ইউরোপ ফ্রান্স ও তাদের জনগণের সঙ্গে রয়েছে।' কায়রোর আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনি্ন ধর্মবেত্তা আহমেদ আল তাইয়েব বলেন, 'আমরা এ ঘৃণ্য ঘটনার নিন্দা জানাই। এটা কোনো ধর্মীয়, মানবিক কিংবা যৌক্তিক নীতির সঙ্গে মেলে না।' ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এটা মেনে নেওয়া যায় না। ফ্রান্সে এই সন্ত্রাসী হামলার কারণে রুহানি তার ইউরোপ সফর স্থগিত ঘোষণা করেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এই প্রথমবারের মতো তার ইউরোপ সফরে যাওয়ার কথা ছিল। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, তার দেশ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ ও ফ্রান্সের জনগণের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াবে। সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি হসিয়েন লং ফেসবুকে তার পোস্টে প্যারিসের একাধিক হামলায় শোক প্রকাশ করে হতাহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কে শানমুগাম এক বিবৃতিতে বলেন, এসব হামলার মানে বিশ্বের কোনো দেশই আর নিরাপদ নয়। এমনকি নিরাপত্তা ব্যবস্থা যতই জোরদার হোক। তিনি বলেন, আমরাও আমাদের সতর্কতার স্তর বাড়িয়ে দিয়েছি। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারসহ সীমান্তে তল্লাশি ও পাহারা জোরদার করেছি। বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, সিঙ্গাপুরকে নিরাপদ ও নিশ্চিত রাখতে প্রত্যেকেরই ভূমিকা রাখতে হবে। সতর্ক থাকতে এবং সন্দেহজনক যে কোনো কর্মকাণ্ড সম্পর্কে রিপোর্ট করতে আমরা সবাইকে উৎসাহিত করছি। এ হামলার ঘটনায় জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল প্যারিসে এই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় তিনি বিস্মিত ও হতবাক। তিনি এই অপশক্তিকে মোকাবেলার ব্যাপারে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা আহ্বান জানান। রাশিয়াও এই সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়ে ফ্রান্সের সরকার ও জনগণের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এই হামলার নিন্দা জানিয়ে হোতাদের বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানিয়েছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ফ্রান্সের পাশে থাকার কথা বলেছে ন্যাটো। জার্মান চ্যান্সেলর এই ঘটনায় শনিবার তার মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকেন। এর আগে তিনি বলেন, আমরা ফ্রান্সের পাশে আছি। সন্ত্রাস দমন ও দোষীদের খুজে বের করার কাজে আমরা তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করতে তৈরি।' শোক, নিন্দা ও সংহতি জানিয়েছে ভারত, চীন ও জাপান। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি একে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে অভিহিত করেন। এ ছাড়া এ ঘটনায় নিন্দা ও শোক প্রকাশ করেছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টাম্যালকম টার্নবুল ও ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল আবাদি। এক বিবৃতিতে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবেইর এই ঘটনাকে কাপুরুষোচিত ও বর্বরতা হিসেবে অভিহিত করেন।-সমকাল ১৫ নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/পিবি/পিপি