সোমবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৫, ০৭:৫৪:০২

ঘরে ফিরছেন বঙ্গবন্ধু পরিবারের ঘনিষ্ট সহচর রুমি

ঘরে ফিরছেন বঙ্গবন্ধু পরিবারের ঘনিষ্ট সহচর রুমি

ঢাকা : ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটির সাবেক সদস্য এম এম শাহরিয়ার রুমী প্রায় ১৪ বছর পরে নিজ দলে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এজন্য তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যপদ ও ফরিদপুর জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতির পদও ছেড়ে দিয়েছেন। রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিএনপি থেকে পদত্যাগের কথা জানিয়েছেন রুমি। এতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপনের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠানোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। রুমির বিএনপি ছেড়ে ফের আওয়ামী লীগে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তার নির্বাচনী এলাকা ফরিদপুর ও ভাংগা উপজেলায় কোন প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়নি। রুমির ফের আওয়ামী লীগে যোগদানের বিষয়টি আওয়ামী লীগের নেতারা স্বাভাবিক ভাবে নিলেও স্থানীয় বিএনপির নেতারা বিষয়টি ভিন্ন ভাবে দেখছেন। স্থানীয় বিএনপির নেতাদের দাবি, রুমি সব সময়ই সুযোগ সন্ধানী নেতা। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপিতে যোগ দেন। এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় তাই সে আওয়ামী লীগে ফিরে গেলেন। বিএনপি নেতারা বলেন, রুমি এখন রাজনীতির মাঠের মৃত ঘোড়া। মৃত ঘোড়া দিয়ে কোন কাজ হয়না। রুমিকে দিয়েও আওয়ামী লীগের কোন কাজ হবেনা। শাহরিয়ার রুমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের পরিবারের ঘনিষ্ট, সাবেক জেলা গভর্নর মরহুম সামসুদ্দিন মোল্যার বড় ছেলে। ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী রুমি এক সময় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রচার ও অর্থ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটির সদস্য হওয়া রুমী রাজনীতিক ২০০১ সালের নির্বাচনে ফরিদপুর-৫ (ভাঙ্গা) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে পরাজিত হন।পরে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। রোববার রুমি তার পাঠানো প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন, “২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর বিশেষ উদ্ভুত এক পরিস্থিতিতে আমি আমার আজীবনের ভালোবাসার দল আওয়ামী লীগ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলাম। কিন্তু এই দেশ, এই জাতীকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও প্রগতিশীলতার দিকে সঠিক নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের কোন বিকল্প নেই, সে কথা বিশ্বাস করেই আমি বিএনপি ত্যাগ করছি।” রুমি আরো বলেন, “২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে আমি ফরিদপুর-৫ (ভাংগা) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে অংশ নেই। চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের কাছে স্বল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হই। বিজয়ী প্রার্থীর কর্মীরা আমার কর্মীদের উপর তুমুল নির্যাতন চালানো শুরু করে। আমি তখন বাধ্য হয়ে ভাংগার জনগনকে রক্ষার স্বার্থে, জনগনের কল্যান, মঙ্গল ও উন্নয়নের স্বার্থে বিএনপিতে যোগ দেই। কিন্তু আমি বুঝি বিএনপিতে যোগদানের বিষয়টি সঠিক ছিল না। তিনি বলেন, যারা আমাকে চেনেন, তারা জানে, আমার রক্তে মিশে আছে আওয়ামী লীগ। এদেশের প্রতিটি গনতান্ত্রিক আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর প্রতিরোধ আন্দোলনসহ প্রত্যেক স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অংশ গ্রহন করা একজন প্রত্যক্ষ সাক্ষী হিসাবে বিপরীতমুখী রাজনীতির সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখা ঠিক হচ্ছে না বলে মনে হয়েছে। তাই, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠা করার সংকল্প নিয়ে যেমন- লড়াই সংগ্রাম করেছি, আগামীতেও বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাকি জীবন দেশ ও দশের সেবায় নিয়োজিত রাখবো।” রুমির বিএনপি থেকে পদত্যাগ প্রসংগে ভাংগা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী হেদায়েতউল্যাহ সাকলায়েন বলেন, রুমি দলবদলকারী একজন নেতা। তার বাবা সারা জীবন আওয়ামী লীগের সাথে যুক্ত ছিলেন। রুমি মোল্যাও একসময় আওয়ামী লীগ করতেন। একসময় বিএনপিতে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি যদি সব ভুলে আওয়ামী লীগে ফিরে আসতে চান তাহলে আমরা স্বাগত জানাব। রুমির বিএনপি থেকে পদত্যাগ করা প্রসংগে ভাংগা উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক হাবিবুর রহমান তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, রুমি কখনোই বিএনপির জন্য কাজে লাগেননি। বিএনপির দুর্দিনে তাকে পাওয়া যায়নি। এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় তাই তিনি লাভের আশায় আওয়ামী লীগে ফিরে গেছেন। ভাংগা উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার ইকবাল হোসেন সেলিম বলেন, রুমি সাহেব বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে হালুয়া-রুটি খাবার আশায় বিএনপিতে যোগ দিয়েছিলেন। এখন আওয়ামী লীগ থেকে হালুয়া-রুটি খাবেন বলে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। রুমির দলত্যাগ করায় বিএনপির কোন ক্ষতি হবেনা। ফরিদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া বলেন, বিএনপি একটি বিশাল দল। এ দলে অনেকেই আসবেন, আবার অনেকেই চলে যাবেন। এতে বিএনপির কোন ক্ষতি হবেনা। তিনি বলেন, শাহরিয়ার রুমি কয়েকদিন আগেও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যেভাবে কথা বলেছেন তাতে আবার তিনি কি করেন, কি বলেন তা দেখার বিষয়। ১৬ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএম/ডিআরএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে