বুধবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৫, ০৩:৫১:২৭

স্থানীয় সরকার নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ক্ষমতাসীনেরা

স্থানীয় সরকার নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ক্ষমতাসীনেরা

নিউজ ডেস্ক: স্থানীয় সরকারের সকল পর্যায়ে সাংসদদের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে চাওয়ায় আইন ও শাসন বিভাগের সুনির্দিষ্ট বিভাজন অনেক ক্ষেত্রে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। একজন সাংসদ জেলা ও উপজেলা পরিষদের উপদেষ্টা। নিজ এলাকার পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদের কিছু না হলেও সেখানে সাংসদের প্রভাব অনস্বীকার্য। স্থানীয় পর্যায়ে সাংসদদের প্রভাব অক্ষুণ্ন রাখার চেষ্টা থেকেই সর্বশেষ জেলা পরিষদ আইন সংসদ থেকে প্রত্যাহারের সুপারিশ সরকারের দোদুল্যমানতা বলে মনে করছেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সালাহউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান এ বিষয়ে বলেন, স্থানীয় সরকার বিষয়ে সাম্প্রতিক বিভিন্ন উদ্যোগ সম্পর্কে এক কথায় বলা যায়, সরকার রাজনৈতিক সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। তাঁর মতে, কোনো আইন বা নীতির পেছনে রাজনৈতিক সদিচ্ছা বা অঙ্গীকার এবং জনগণের প্রত্যাশা থাকতে হয়। কিন্তু সেগুলোর কোনোটিই এখন দেখা যাচ্ছে না। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাষ্ট্র পরিচালিত হবে স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে। কিন্তু একের পর এক পছন্দমতো আইন তৈরি বা বাতিল এবং সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে সেই স্থানীয় সরকারকে দুর্বল করে দেওয়া হচ্ছে। গত প্রায় এক মাসের মধ্যে স্থানীয় সরকারের পাঁচটি আইন সংশোধনের লক্ষ্যে সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা ও একেক সময়ে একেক উদ্যোগ নানামুখী প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সাংসদ নিজের গণ্ডি অতিক্রম করে নির্বাহী বিভাগের আওতায় থাকা স্থানীয় সরকারের কর্মকাণ্ডে বেশি মনোযোগী হচ্ছেন। সরকারও বিভিন্ন আইন-কানুনের মাধ্যমে তাঁকে সেই সুযোগ করে দিচ্ছে। এর ফলে এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, এমনকি স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটি থেকে ভিজিডি-ভিজিএফ কর্মসূচি পর্যন্ত সবকিছুতেই মাথা ঘামাচ্ছেন তাঁরা। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, স্থানীয় সরকারে রয়েছে সাংসদের হস্তক্ষেপ। বিশেষ করে আর্থিক কর্মকাণ্ডে সাংসদের প্রভাব বা ভূমিকা তাঁদের এখতিয়ারে পড়ে না। এসব ক্ষেত্রে তিনি জবাবদিহির ঊর্ধ্বে থাকেন। যেসব প্রশ্নের জবাব নেই: গত ১২ অক্টোবর মন্ত্রিসভা ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন, উপজেলা ও জেলা পরিষদের নির্বাচন দলীয় প্রতীকে করার প্রস্তাব অনুমোদন করে। পৌরসভা নির্বাচন আসন্ন বিধায় এর আইনটি সংশোধন করে অধ্যাদেশ আকারে জারির সিদ্ধান্ত হয়। তিন সপ্তাহ ধরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম শেষে ২ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি ওই অধ্যাদেশ অনুমোদন করেন। এত কিছুর পর সরকার হঠাৎ নতুন করে সিদ্ধান্ত নেয়, পৌরসভা অধ্যাদেশ নয়, আইন হবে। সেই অনুযায়ী স্থানীয় সরকারের বাকি চারটি সংশোধিত আইনের সঙ্গে পৌর আইনটি বিল আকারে সংসদে উত্থাপন করা হয়। পৌরসভা নির্বাচন আসন্ন হওয়ায় আইনের বদলে অধ্যাদেশ করার বিষয়ে মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়ে তা রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নেওয়ার পর সেখান থেকে পিছিয়ে আসার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত আইনের খসড়ায় স্থানীয় সরকারের সকল স্তরে দলীয়ভাবে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার কথা বলা হয়। এর এক মাসের মাথায় সেখান থেকে পিছিয়ে আসে সরকার। এখন কিছুটা দলীয়, কিছুটা নির্দলীয় পন্থায় নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়ায় তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা গত সোমবার সংসদীয় কমিটির সভা শেষে বলেন, ‘আমার মতে, একই পরিষদে দুই ধরনের আইন হতে পারে না। এ নিয়ে পরে আদালতে মামলা হলে পুরো নির্বাচনই আটকে যাবে। কিন্তু আইনমন্ত্রী বলেছেন, এ নিয়ে কোনো আইনি জটিলতা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা নেই।’ অধ্যাপক সালাহউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেন, জন্ম থেকে জেলা পরিষদকে কোনো সরকার কার্যকর করতে চায়নি। সাংসদেরাও এটা চাননি, আমলাতন্ত্র বিরোধিতা করেছে। তা ছাড়া, জেলা পরিষদের কাজ ও ভূমিকা কী হবে, তা নিয়েও জেলাবাসী ওয়াকিবহাল নয়, যেমনটি উপজেলা ও ইউনিয়নের কাজ নিয়ে মানুষের ধারণা আছে। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, একই পরিষদে কেউ দলীয়, কেউ নির্দলীয় হলে এর ফল মোটেও ভালো হবে না। তাঁর প্রশ্ন, নির্দলীয়ভাবে নির্বাচিত একজন কাউন্সিলর রাজনৈতিকভাবে নির্বাচিত মেয়রের অনুপস্থিতিতে প্যানেল মেয়রের দায়িত্ব কীভাবে পালন করবেন? উপজেলায় অনেক জ্বালা: এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি কাটাছেঁড়া হয়েছে উপজেলা পরিষদে। উপজেলা চেয়ারম্যানের ক্ষমতা কতটুকু থাকবে, তা নিয়ে বেশির ভাগ সাংসদের মাথাব্যথা রয়েছে। একই ভোটারের ভোটে সাংসদ নির্বাচিত হন, আবার উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হন। যে কারণে বেশির ভাগ উপজেলায় সরকারদলীয় সাংসদ ও উপজেলা চেয়ারম্যানের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব থাকছে। তোফায়েল আহমেদ বলেন, উপজেলা পরিষদে সাংসদকে উপদেষ্টা করে এমন কিছু দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যা পরিষদের ক্ষমতা খর্ব করে এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে পরিষদ সাংসদের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল। উপজেলায় সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যেও বিভাজন রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা মানতে চান না। এ নিয়ে আন্দোলন করছে প্রকৃচি-বিসিএস সমন্বয় কমিটি। তবে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা উপজেলা চেয়ারম্যান ও নির্বাহী কর্মকর্তার যৌথ স্বাক্ষরে বেতন-বিলের অর্থ উত্তোলনের সিদ্ধান্তটি ইতিবাচক বলে মনে করছেন। রাজনৈতিক পরিস্থিতির শিকার: স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। তাঁদের বেশির ভাগই হতাশার মধ্যে সময় পার করছেন। সরকারবিরোধী, বিশেষ করে বিএনপি বা জামায়াত-সমর্থক জনপ্রতিনিধিদের কেউবা পলাতক, কেউ বরখাস্ত, কেউবা পদ টিকিয়ে রাখতে চুপচাপ। তা ছাড়া সরকারি দলের সমর্থক অনেক জনপ্রতিনিধিও দলের কোন্দলে বা সাংসদের সঙ্গে বিরোধে কোণঠাসা হয়ে আছেন।-প্রথম আলো ১৮ নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/পিবি/পিপি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে