বুধবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০১৮, ০১:১১:১০

পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হামিদ না অন্য কেউ

পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হামিদ না অন্য কেউ

নিউজ ডেস্ক : কে হচ্ছেন দেশের ২১তম প্রেসিডেন্ট? এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। রয়েছে নানা গুঞ্জনও। সরকার ঘনিষ্ঠ অনেকেই বলছেন, টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকারের শেষ সময়ে রাষ্ট্র প্রধানের পদ নিয়ে কোনো ঝুঁকি নেয়া হবে না। এক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদই দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য এ পদে থাকতে পারেন।

তবে বিকল্প নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। সামনে এসেছে কয়েকজনের নাম। আগামী ১৯শে ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত হবে দেশের ২১তম প্রেসিডেন্ট। আপাতত তিন জনের নাম নিয়েই বেশি আলোচনা হচ্ছে। তারা হলেন, বর্তমান প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আশরাফুল ইসলাম।

তবে সবকিছু নির্ভর করছে দল ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর। এদিকে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নিয়ে সংসদ সচিবালয়ে রয়েছে সবচেয়ে বেশি গুঞ্জন। স্পিকারকে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করা হচ্ছে-এমন আলোচনা মুখে মুখে। তবে সংসদ সচিবালয়ের কোনো সূত্রই এ বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য দিতে পারেননি।

এদিকে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, স্ত্রী শীলা ইসলামের মৃত্যুর পর তিনি অনেকটাই নীরবে সময় কাটাচ্ছেন। কোনো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে যেতে তিনি নিজেই হয়তো রাজি হবেন না। বর্তমান প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষে সংবিধান অনুযায়ী পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন আগামী পাঁচ বছরের জন্য।

আগামী দিনে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশেষ করে আগামী জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন দিক পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হবে। এছাড়া, বর্তমান দশম জাতীয় সংসদে যেহেতু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, সেহেতু আওয়ামী লীগের প্রার্থীই হবেন দেশের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট। আগামী ২১শে এপ্রিল তার মেয়াদ শেষ করতে যাচ্ছেন।

২০১৩ সালের ১৪ই মার্চ সংবিধানের ৫৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তৎকালীন স্পিকার আবদুল হামিদ অস্থায়ী প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও বিভিন্ন দিক থেকে দক্ষতাসম্পন্ন বলে তিনি সর্বমহলে গ্রহণযোগ্যতা পান। পরবর্তীতে তাকেই দেশের ২০তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করে জাতীয় সংসদ।

ভোটার তালিকা চেয়ে স্পিকারকে ইসির চিঠি: প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণের জন্য ভোটার তালিকা চেয়ে জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল মঙ্গলবার ইসি সচিবালয় থেকে স্পিকার বরাবর এ চিঠি পাঠানো হয়।

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন প্রস্তুত। আগামী ২৫শে জানুয়ারি কমিশন বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পর এ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে। তিনি আরো বলেন, স্পিকারের কাছে সংসদ সদস্যদের তালিকা অর্থাৎ ভোটার তালিকা চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, আজ বুধবার থেকে ২১তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষণ গণনাও শুরু হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে করণীয় ঠিক করতে বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনে বৈঠক ডাকা হয়েছে। ইসির প্রস্তুতির মাঝেই গত সোমবার রাতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তারিখ গণমাধ্যমকে জানান।

তিনি বলেন, ১৯শে ফেব্রুয়ারি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে বলে ইসির কাছে জানতে পেরেছি। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ১৯ মেয়াদে ১৬ জন প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। সেই হিসেবে আবদুল হামিদ এই পদে সপ্তদশ ব্যক্তি। সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- ‘প্রেসিডেন্ট পদের মেয়াদ অবসানের কারণে উক্ত পদ শূন্য হইলে মেয়াদ-সমাপ্তির তারিখের পূর্ববর্তী নব্বই হইতে ষাট দিনের মধ্যে শূন্য পদ পূরণের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।’

ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব জানান, বর্তমান প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৩শে এপ্রিল। সেক্ষেত্রে সাংবিধানিকভাবে কমিশনকে মেয়াদ শেষের ৬০ দিন আগেই নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। ২৪শে জানুয়ারি থেকে ২৩শে ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভোট করার প্রস্তুতি নেয়া হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে ইসি। সেক্ষেত্রে চলতি অধিবেশনেই হবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আইন ১৯৯১ অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এমপিদের ভোটে। আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাতে নির্বাচনী কর্তা হিসেবে কাজ করেন। ১৯৯১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আইনের সপ্তম ধারায় বলা হয়েছে নির্বাচনী কর্মকর্তা নির্ধারিত দিন, সময় ও স্থানে মনোনয়নপত্র পরীক্ষা করবেন। পরীক্ষার পরে একজনের মনোনয়নপত্র বৈধ থাকলে নির্বাচন কমিশন ওই ব্যক্তিকে নির্বাচিত বলে ঘোষণা করবেন।

তবে একাধিক ব্যক্তির মনোনয়নপত্র বৈধ হলে তাদের নাম ঘোষণা করবেন। সংসদীয় গণতন্ত্র চালুর পর ১৯৯১ সালে একাধিক প্রার্থী হওয়ায় একবারই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেন সংসদ সদস্যরা। পরবর্তী সময়ে ক্ষমতাসীন দল মনোনীত প্রার্থীই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী, একাধিক প্রার্থী হলে সংসদের অধিবেশন কক্ষে নির্বাচনী কর্তার সামনে নির্ধারিত ব্যালট পেপারে পছন্দের প্রার্থীর নাম ও নিজের স্বাক্ষর দিয়ে তা জমা দিতে হবে। ভোটের দিন গ্যালারিসহ সংসদ কক্ষে প্রার্থী, ভোটার, ভোট নেয়ায় সহায়তাকারী কর্মকর্তা ছাড়া সবার প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করবেন নির্বাচনী কর্তা।

ভোট শেষে নির্বাচন কমিশনার প্রকাশ্যে ভোট গণনা করবেন। সর্বাধিক সংখ্যক ভোটপ্রাপ্তকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে। আর সমান ভোট পেলে প্রার্থীদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে ফল নির্ধারণ করা হবে। -এমজমিন
 
এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে