সোমবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০১৮, ০১:২৯:১২

নেতিবাচক রায় হলে রাজপথে নামবে বিএনপি, সবার মত নিচ্ছেন খালেদা

নেতিবাচক রায় হলে রাজপথে নামবে বিএনপি, সবার মত নিচ্ছেন খালেদা

মাহমুদ আজহার : ডেডলাইন ৮ ফেব্রুয়ারি। আসন্ন এ দিনটি নিয়ে রাজনীতিতে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিএনপি-আওয়ামী লীগের পাশাপাশি সবার দৃষ্টিই বিশেষ আদালতের দিকে। ওই দিন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আলোচিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণার কথা। রায়ে কী হবে তা স্পষ্ট না হলেও নেতিবাচক ধরে নিয়ে বিএনপি ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ওই দিন দেশজুড়েই বিএনপি রাজপথে থাকবে। এ ব্যাপারে তৃণমূলে বার্তাও পাঠানো হয়েছে। কর্মসূচি কী হবে তা রায়ের পরই ঘোষণা হবে। জানা যায়, নেতিবাচক হলেই তাত্ক্ষণিক রাজপথে কঠোর কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে বিএনপি। এ নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটি, নির্বাহী কমিটি ছাড়াও ২০ দলীয় জোটের মতামত নিচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। গতকাল রাতে জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।

এর আগে রবিবার স্থায়ী কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেন বেগম জিয়া। সেটা ছিল মুলতবি সভা। আজ রাতে আবারও স্থায়ী কমিটির সঙ্গে বৈঠক করবেন বেগম জিয়া। আলোচ্য বিষয় একটিই, ৮ ফেব্রুয়ারি রায়-পরবর্তী করণীয় কী হবে। এরই মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জেলে গেলে সিনিয়র নেতারা স্বেচ্ছায় কারাবরণের হুমকি দিচ্ছেন। কেউ কেউ বলছেন, সেদিন থেকেই সরকার পতন আন্দোলন শুরু।

এটা ঠেকবে নির্বাচন পর্যন্ত। বিএনপিপ্রধানের সাজা হয়ে জেলে যেতে হলে পরবর্তীতে দল কী করবে, তা নিয়ে স্থায়ী কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছেন বেগম খালেদা জিয়া। ৩ ফেব্রুয়ারি দলের মাঠ পর্যায়ের নেতৃত্ব নির্বাহী কমিটির বৈঠকও ডেকেছেন তিনি। ৫০২ সদস্যের নির্বাহী কমিটি নিয়ে ঢাকার রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মতামত নিতে চান বেগম জিয়া।

জানা যায়, কোনো কারণে রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বরাদ্দ না পেলে কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বর্ধিত সভা করতে চান খালেদা জিয়া। সেখানেও বরাদ্দ না পেলে গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চও চায় দলটি। সেখানে দলের ভবিষ্যৎ  নেতৃত্ব ও কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হবে। নির্বাহী কমিটির নেতাদের মতামতের ভিত্তিতেই পরবর্তীতে দল পরিচালনা করবেন বেগম জিয়া।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে যদি অসত্য ও অন্যায় রায় দেওয়া হয়, তাহলে মুক্তির আন্দোলন নয়, সরাসরি সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হবে। আমরা  সেই আন্দোলন শুরু করব। আশা করি, সফলকামও হব। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’

২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছরের আগস্টে ৫০২ সদস্যের নির্বাহী কমিটি গঠিত হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি ছয় মাসে নির্বাহী কমিটির একটি বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও আড়াই বছরেও কমিটির কোনো বৈঠক এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়নি। বর্ধিত সভা হওয়ার কারণে নির্বাহী কমিটির সদস্য ছাড়াও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য, প্রতিটি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদাধিকার বলে এতে উপস্থিত থাকবেন। এর আগে ২০১২ সালে বিগত কমিটির একটি সভা রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত হয়।

জানা যায়, গত রবিবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করে পরবর্তী সময়ে দলের কর্মকাণ্ড নিয়ে মতামত নেন বিএনপিপ্রধান। এ সময় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের বড় অংশই খালেদা জিয়াকে আশ্বস্ত করেন, সরকারের প্রভাবে আদালতের রায়ে আপনাকে জেলে নিয়ে নির্বাচনে ‘অযোগ্য’ ঘোষণা করলে বিএনপি ওই নির্বাচনে যাবে না। এ নিয়ে স্থায়ী কমিটির সব নেতাই একই বক্তব্য দেন। এ সময় বেগম জিয়া জানতে চান, দলের কী হবে।

স্থায়ী কমিটির এক প্রভাবশালী সদস্য জানান, দল আপনার নেতৃত্বেই চলছে, চলবে। সেটা জেলে গেলেও। তখন কেউ কেউ গঠনতন্ত্র তুলে ধরে বলেন, ২০০৯ সালের সংশোধিত গঠনতন্ত্রের ৭ এর ‘ঘ’ ধারায় বলা আছে, কোনো দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তি বিএনপির কোনো পর্যায়ের কমিটির সদস্য পদ বা সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। এ সময় স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, এটা তো ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে সংশোধন করা হয়েছে। রাজনৈতিক কারণে কোনো মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হলে সেক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য নয়। তবে ২০১৬ সালের সংশোধিত গঠনতন্ত্র এখনো প্রকাশিত হয়নি বলে জানা গেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক প্রভাবশালী সদস্য জানান, চেয়ারপারসনকে জেলে নিয়ে তাকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হলে একাদশ নির্বাচনই হতে দেবে না বিএনপি। সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও এ বিষয়টি মেনে নেবে না। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতও বিএনপির মতো জনপ্রিয় দলকে বাদ দিয়ে নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেবে বলে মনে হয় না।

এদিকে আগামীকাল চলমান পরিস্থিতি নিয়ে কূটনীতিকদের ব্রিফ করবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গুলশান কার্যালয়ে বিকাল ৪টায় এ বৈঠক হবে। সেখানে পশ্চিমা বিশ্বের প্রভাবশালী কূটনীতিক ছাড়াও ভারত, চীন ও মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতিকরা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে। বৈঠকে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরবেন।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ না করলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয় না। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায়। সেই অংশগ্রহণের পথে বাধা সৃষ্টি করার আমরা চক্রান্ত বা অপচেষ্টা দেখছি। একেবারেই কোনো কারণ ছাড়া,  কোনো প্রমাণ ছাড়া আমাদের নেত্রীকে অভিযুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। আমাদের নেতা তারেক রহমান এবং আরও কিছু নিরীহ মানুষকে অভিযুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সে রকম কোনো কিছু হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের  যে আকাঙ্ক্ষা, যে প্রয়োজন, সেটা বিঘ্নিত হবে।’ -বিডি প্রতিদিন

এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে