মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১৮, ০২:০৩:৪৪

আমারও প্রশ্ন, তাহলে কি নেতাদের কোনো চৈতন্য নেই : কাদের সিদ্দিকী

আমারও প্রশ্ন, তাহলে কি নেতাদের কোনো চৈতন্য নেই : কাদের সিদ্দিকী

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম : এমন লেখা খুব একটা লিখিনি। শুরু বাবর রোডের বাসা থেকে, শেষ ত্রিশালের নজরুল একাডেমি ভবনে। সংশোধন করেছিলাম সখীপুরে দীপ-কুঁড়ি-কুশি কুটিরে। ভেবেছিলাম, টাঙ্গাইল গিয়ে লেখাটি পাঠিয়ে দেব। নলুয়া-বেড়বাড়ীর কাছাকাছি হঠাৎ দীপের আম্মুর ফোন, অভাবনীয় কান্নাজড়িত গলা। স্ত্রীর অমন গলা শুনেছিলাম বাবার মৃত্যু খবর দিতে এক গভীর রাতে।

আবার ঠিক সেই একই রকম কান্না, ‘জানো, এইমাত্র দুলাভাই মারা গেছেন।’ শেরপুর-নখলার বাছুর আগলার এ কে এম শহীদুল হক ছিলেন আমার স্ত্রীর পরিবারে পিতার মতো। আমার বিয়েতেও নাসরীনের বড় ভাই ফারুক কোরায়েশী ও শহীদুল হক বর্ধমানে গিয়েছিলেন। হঠাৎ তার মৃতুসংবাদ পেয়ে মনটা খুবই ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। মানুষ মরণশীল। সবাই মরবে। কিন্তু আচমকা মৃত্যুসংবাদ মানুষকে বড় নাড়া দেয়।

সকালে ভালোভাবে নাস্তা করে কাপড়-চোপড় পরে তিনি শহরে বেরিয়েছিলেন। নিয়মিত ক্লাবে আড্ডা দেওয়া ছিল তার স্বভাব। ক্লাবেই একসময় পড়ে যান। সেখান থেকে হাসপাতালে নিলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা দেন। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, আল্লাহ যেন তাকে বেহেশতবাসী করেন।

গত শুক্রবার ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় গিয়েছিলাম। যেহেতু সব সামর্থ্যবানের কারবার, সেহেতু অতিথির চেয়ে গাড়ির সংখ্যা বেশি ছিল। মনে হচ্ছিল সারা দেশ ভেঙে পড়েছে। গাড়ির লম্বা লাইন, অনেক দূর ঘুরে কনভেনশন সিটিতে ঢুকতে হয়েছিল। ২ নম্বর হল, রাস্তা থেকে অনেকটা দূর। পুরোটাই দু-তিন সারিতে গাড়ি ছিল। বড় ধীরগতিতে গাড়ি এগোচ্ছিল। পশ্চিমে গিয়ে পুব দিকে এসে গাড়ি থেকে অতিথিরা নামছিলেন। অনেক দূর থেকে লাঠি হাতে ড. কামাল হোসেনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলাম।

একটা লোকও ছিল না তার আশপাশে। আমি খুবই অস্বস্তিবোধ করছিলাম। দূর থেকে মনে মনে স্থির করেছিলাম তার গাড়ি আসতে অবশ্যই দেরি হচ্ছে। বয়সী মানুষ, কতক্ষণ না কতক্ষণ দাঁড়িয়ে আছেন, অন্তত তার গাড়ি পর্যন্ত আমার গাড়ি দিয়ে এগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। গাড়ি থেকে নেমে তার হাত ধরতেই আমার বলার আগেই তিনি বললেন, ‘অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি। আপনার গাড়ি করে একটু এগিয়ে দেন তো।’

বড় ভালো লেগেছিল তার কথায়। ড. কামাল হোসেন সবসময় নিচু গাড়িতে চড়েন। আমার জিপ খুব উঁচু, তার খুব অসুবিধা হচ্ছিল। অনেক কষ্টে তাকে গাড়িতে তুলেছিলাম। গাড়িতে উঠতেই যখন বললাম, ‘স্যার! আপনাকে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে আসুক।’ তিনি সঙ্গে সঙ্গে বললেন, ‘ঠিক আছে তাই হোক।’ হলে মেটাল ডিটেক্টরের ভিতর দিয়ে যেতে হয়। যাওয়ার পথে কেউ একজন বললেন, কার্ড দেখি। আমার আবার কার্ড দেখানোর খুব একটা স্বভাব নেই। তাও আবার নিজের দেশে।

তবু একটি বন্ধুপ্রতিম দেশের প্রজাতন্ত্র দিবস, তাই পকেট থেকে কার্ড বের করেছিলাম। ১০-১২ বছর আগে কার্ড ছাড়া যাওয়ায় ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামকে গেটে ঢুকতে দিচ্ছিল না। বড় মর্মাহত হয়েছিলাম। যদিও তখন বীণা সিক্রি ছিলেন হাইকমিশনার। ভিতরে গিয়ে বলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি ছুটে এসে নিয়ে গিয়েছিলেন। এবার আমি আমার ক্যামেরা নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ভাবসাব দেখে ক্যামেরার কথা আর বলিনি। সামনেই হাইকমিশনার দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি আমাকে ভালো করে চেনেন কিনা জানি না।

একে তো মুক্তিযুদ্ধের সময় ছোট ছিলেন, তারপর আমি যখন নির্বাসনে দার্জিলিংয়ে কয়েকবার গেছি তখন কোথায় ছিলেন ভালো করে জানি না। এর মাঝে কয়েকবার দেখা হয়েছে। খুব সম্ভবত গতবার সোনারগাঁওয়ে। এক-দুবার সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সফরে। তবে তেমন আলাপ-আলোচনা হয়নি। হলের ভিতরে বসার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। সবাই দাঁড়িয়ে। অল্প বয়সীদের হয়তো তেমন কোনো অসুবিধা ছিল না। কিন্তু অনেক বয়সীদের সত্যিই অসুবিধা ছিল। যাওয়ার আগে নঈম নিজামকে বিমানবন্দর থেকে ফোন করেছিলাম।

ছোট ভাই মোশারফ হোসেন মন্নু ১৮ বছর পর আমেরিকা থেকে দেশে এসেছিল। সে, তার স্ত্রী নাসিম মোশারফ, নাসিমের ভাই ১০-১৫ দিন দেশে কাটিয়ে চলে গেল। তাদের প্লেনে তুলে দিতে বিমানবন্দরে গিয়েছিলাম। বিমানবন্দরে খুব যত্ন করেছে। অফিসারদের বা ক্ষমতাসীনদের যেভাবে যত্ন করে আমাকে মনে হয় সেভাবে করে না। অনেকে মনের দিক থেকে ভালোবেসেই করে। নঈম নিজাম বলছিল, রাস্তায় খুবই যানজট। বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে সত্যিই ঢাকার দিকে প্রচণ্ড যানজট দেখেছিলাম। কিন্তু ৩০-৪০ মিনিট পর যখন বসুন্ধরা কনভেনশন সিটিতে যাওয়ার উদ্দেশে বিমানবন্দর থেকে বেরিয়েছিলাম তখন কোনো যানজট ছিল না।

কত আর হবে ১০-১৫ মিনিটেই বসুন্ধরা কনভেনশন সিটির সামনের রাস্তায় এসে গিয়েছিলাম। বরং মূল রাস্তা থেকে হলের দরজা পর্যন্ত পৌঁছতে প্রায় এক ঘণ্টা লেগেছিল। হলে ঢুকে দেখি সারা ঘর গমগম করছে। কত রংবেরঙের মানুষ। ততক্ষণে হাইকমিশনার গিয়ে মঞ্চে উঠেছিলেন। সঙ্গে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী। হলের মধ্যে যেতে যেতেই ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ ও ‘জনগণমন ভারত ভাগ্য বিধাতা জয় হে’ দুই দেশের জাতীয় সংগীত গাওয়া এবং ভারতের মান্যবর হাইকমিশনারের স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।

বাংলাদেশের, ভারতের জাতীয় সংগীতের সময় উভয় দেশের জাতীয় পতাকা পর্দায় বড় চমৎকার দেখাচ্ছিল। প্রথমে মান্যবর ভারতীয় হাইকমিশনার, পরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রজাতন্ত্র দিবসে বক্তব্য দেন। অনেকেই পেট পুরে খাওয়া-দাওয়া করছিলেন। কেউ কেউ কথাবার্তা বলছিলেন। আমি চিন্তায় ছিলাম এত দূর থেকে বাড়ি ফিরব কী করে। বড় লোকের জায়গায় গরিবের গাড়ি সিএনজি পাওয়া যাবে কিনা কে জানে? কারণ আমি খুব একটা বাইরের গাড়িতে চড়ি না। ভালো থাকুক খারাপ থাকুক নিজের গাড়িতেই চলাচল করি।

দু-তিন জনকে বলেছিলাম ড. কামাল হোসেনকে গাড়ি দিয়ে দিয়েছি, এখন বাড়ি যাব কী করে? কিন্তু কারও মধ্যে কোনো আকার-বিকার দেখিনি। ৮-১০ জন তো হবেই, যাদের আমার অসুবিধা জানিয়েছিলাম কিন্তু কারও মধ্যে কোনো উৎসাহ দেখিনি। অথচ সবাই গাড়ি করে এসেছেন। ও রকম গাড়ি ছাড়া ঘটনা গত বছর ১৫ আগস্ট ঘটেছিল। ছেলেমেয়ে, বউসহ আমি ৩২ নম্বর গেলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং বোন রেহানার সঙ্গে দেখা হয়। এসএসএফ আমার গাড়ি কোথায় পাঠিয়ে দিয়েছিল ৩২ নম্বর থেকে বেরিয়ে হদিস পাচ্ছিলাম না। হেঁটে সোবহানবাগ মসজিদ পর্যন্ত এসেছিলাম। ড্রাইভারকে ফোন করে পাওয়া যাচ্ছিল না। কারণ তার কাছে ফোন ছিল না।

ঠিক সে সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাবেক সহকারী অ্যাডভোকেট কাউসারকে যেতে দেখি। হাত তুলে ডাক দিতেই গাড়ি থেকে নেমে ছুটে এসে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে। মাথা তুলেই জিজ্ঞাসা করে, ‘লিডার! কী করতে হবে?’ একটা মাইক্রোবাসে ও একাই ছিল। বললাম, গাড়ি পাচ্ছি না। আমরা ছয়-সাত জন। সবাইকে তুলে বাবর রোডের বাসায় পৌঁছে দিয়ে মিষ্টি খেয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ভারতীয় প্রজাতন্ত্র দিবসে অতিথিদের কারও মধ্যে সামান্য সাহায্যের মানসিকতা দেখছিলাম না। মনে হয় ওই অবস্থায় আমার মাথা ঠিক কাজ করছিল না। যাই হোক বন্ধুবান্ধব-হিতৈষী এখনো খুব একটা কম নেই। তবু কারও কথা মনে পড়ছিল না।

বাড়িতে বেগমকে ফোন করেছিলাম। ছোট মেয়ে কুশি ধরেছিল। আম্মুকে দাও বলতেই সে ফোনটা মাকে ধরিয়ে দেয়। আমি কথা বললে বেগম বার বার বলছিল, ‘কে বলছেন?’ আমি যতই বলি দীপের বাবা সে আমায় চিনতে পারেনি। দু-এক বার মনে করেছেন কিশোরগঞ্জের দীপের বাবা কিনা। যাই হোক, হঠাৎ করে ঘুম থেকে উঠে আঁতকে আমার ফোন বুঝতে পারছিল না। পরে বোঝাপড়া হলে বলেছিলাম, কামাল ভাইকে গাড়ি দিয়ে দিয়েছি। দেখো তো গাড়ি পাঠাতে পারো কিনা? বসুন্ধরা কনভেনশন সিটিতে আছি। বড় মেয়ে কুঁড়ি ১০-১২ দিন হবে লন্ডন থেকে এসেছে। সে গুলশান ২ নম্বরে তার কোনো বান্ধবীর বাড়ি গিয়েছিল। ফোন করতেই ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে গাড়ি হাজির।

বসুন্ধরা কনভেনশন সিটির ২ নম্বর হলে যখন এদিক-ওদিক ঘোরাফেরা করছিলাম তখন হলের ভিতর চার-পাঁচ শ মানুষের কম ছিল না। ছোট বড় রংবেরঙের কত মানুষ। আওয়ামী লীগের শত নেতা তো হবেই, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিক্ষক, ব্যবসায়ী বেশুমার। কত জনের কত বউ, কিন্তু আমার বউ নিয়ে যেতে সাহস করিনি। কার্ডটা খুব ভালোভাবে ছিল না।

লেখা ছিল,  Mr. Abdul Kader Siddiqui, Bangladesh Krishak Shramik, 20/30, Babar Road, Mohammadpur, Dhaka.  এভাবে কারও নাম হয়? বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক বলে কোনো দল নেই। একসময় সারা দুনিয়ায় বাংলাদেশের চেয়ে বঙ্গবন্ধুকে বেশি জানত। আমাকেও ভারতে বাংলাদেশের পরে খুব একটা কম জানত না। সেখানে আমার দলের পাঁচজন নেতার নামেও কোনো আমন্ত্রণ নেই, কোনো দাওয়াত নেই। আমার স্ত্রীর নামে চিঠি নেই। কিন্তু হলের ভিতরে নাম না জানা কত মানুষ দেখে সত্যিই কিছুটা বিস্মিত হয়েছি। তখন ছিল ২৬ তারিখ ৮টা বা সাড়ে ৮টা।

২৫ তারিখ সকাল ৭টায় রওনা হয়ে নাটোরে গিয়েছিলাম। নাটোরে শহীদ মুন্সীর নেতৃত্বে জেলা সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। নাটোরের লালপুরের কাউসার ও গুরুদাসপুরের শহীদ মুন্সী বহুদিনের কর্মী। অ্যাডভোকেট জুবায়ের নাটোরের সাবেক মেয়র। নব্বইয়ে আমার সঙ্গে বেশ কিছু দিন জেল খেটেছিল। আরও অনেকেই ছুটে এসেছিল। বেশ কিছু দিন পর নাটোর গিয়েছিলাম বলে যে নেতারা দেশ বানিয়েছেন সেই সাইফুল ইসলাম, আবদুস সাত্তার খান মধু মিয়া, মজিবুর রহমান সেন্টু, শ্রী শঙ্কর গোবিন্দ চৌধুরী, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার, আহাদ আলী সরকার, অ্যাডভোকেট সাজেদুর রহমান এমনকি মোখড়ার জলিল যার যার নাম মনে পড়ছিল উল্লেখ করেছিলাম।

এমনকি চলনবিলের সংসদ সদস্য আবদুল কুদ্দুসের কথাও বাদ যায়নি। বিশেষ করে আবদুল কুদ্দুসের অনুরোধে আমি একবার প্রায় ১০-১২ দিন নাটোরে সাংগঠনিক সফর করেছিলাম। কোনো উপজেলা ছিল না যেখানে যাইনি, কোনো কোনো জায়গায় দু-তিন বার গেছি। লালপুরের মমতাজ শত্রুর হাতে নিহত হয়েছে, সেই মমতাজের বাড়ি গিয়েছিলাম। কতজনের কত বাড়ি গেছি। জনাব কুদ্দুসের মেয়ে কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি লম্বাচূড়া মেয়ে। কিন্তু অসাধারণ সুন্দর তার চালচলন, ব্যবহার। সবাইকে সেবার পেয়েছিলাম।

গুরুদাসপুরের ফারুক, মোহাম্মদ আলী আরও অনেককে কাছ থেকে দেখেছি। জলিলের স্ত্রী, সে যে কী যত্ন নিয়ে চলনবিলের কই মাছ খাইয়েছে তার কোনো তুলনা হয় না। মিটিং শেষে এমপি শিমুল এসেছিল। ভালোই লেগেছে। দেখতে-শুনতে সুন্দর হ্যান্ডসাম, কথাবার্তা সাবলীল। কিন্তু কেন যেন অনেকেই তাকে পছন্দ করে না। বছর তিনেক আগে একবার নাটোরে গিয়ে সার্কিট হাউসে ১ নম্বর রুম বন্ধ পেয়েছিলাম। এনডিসি বা অন্য কেউ বলছিলেন, প্রতিমন্ত্রী আসবেন। তার জন্য রাখা হয়েছে।

আমার কাছে ১, ২, ৫-১০ নম্বরের কোনো পার্থক্য নেই, সবই সমান। কেন যেন হঠাৎই বলেছিলাম, প্রতিমন্ত্রীর জন্য তালা মেরে রাখা হয়েছে, ওই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তো আমার বড় ভাই। আর সব মন্ত্রীর মন্ত্রী আমার বোন। কেন যেন একটু পরে ১, ২ নম্বর, সব নম্বর খুলে দিয়েছিল। কী কারণে বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী ফোন করেছিলেন। যখনই হোক তুই ঢাকায় ফিরে আমার সঙ্গে দেখা করবি। বুঝতে পারছিলাম না। তার কয়েক মিনিট পর রেহানার ফোন পেয়েছিলাম। তার কিছু পরে আরও কয়েক নেতা-নেত্রীর ফোন এসেছিল।

আমি ওই রাতেই নাটোর থেকে ঢাকা ফিরেছিলাম। প্রতিমন্ত্রী পলককে ব্যাপারটা জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তোমার জন্য কি নাটোরের সার্কিট হাউসের রুম আটকা থাকে? খুব সরলভাবে বলেছিল, ‘কী বলেন লিডার! সেদিন আমার যাওয়ার কোনো কথা ছিল না। আর আমার জন্য কখনো রুম বরাদ্দ রাখার প্রয়োজন পড়ে না।’ ঠিক সেবারের মতো এবারও নাটোর থেকে রাত ১২টায় সরাসরি ঢাকা ফিরেছিলাম। শহীদ মুন্সী পুরনো বাসস্ট্যান্ডে শামিয়ানা টানিয়ে চমৎকার আয়োজন করেছিল। ৫-৬ ফুট উঁচু বিশাল মঞ্চ আমার পছন্দ হয়নি।

অত উঁচু মঞ্চ আবার সামনে টেবিল দেওয়া হয়েছিল। যদিও টেবিল সরিয়ে দিয়েছিলাম। তার পরও মঞ্চটা ছিল খুবই উঁচু। আমি সাধারণত ৩০ ইঞ্চির ওপরে মঞ্চ উঁচু হলে পছন্দ করি না। খুবই খারাপ লাগে। সাধারণ মানুষ মাটিতে বসলে মঞ্চে বসা নেতাদের পা তাদের চেয়ে এক ইঞ্চি ওপরে উঠুক তা আমার কাম্য নয়। তাই সাধারণত মানুষ মাটিতে বসলে গড় উচ্চতার মানুষ আড়াই ফুটের ২-৩ ইঞ্চি ওপরে ওঠে। তাই মঞ্চের উচ্চতা ২৪ ইঞ্চির মধ্যে হলেই ভালো, ৩০ ইঞ্চির ওপরে নয়। ৩০ ইঞ্চির বেশি হলে নেতা-নেত্রীর পা জনতার মাথার ওপরে উঠে যায়।

যাই হোক, ব্যাপারটাকে কর্মিসভাও বলা যেত। আসলে কর্মীদের বাইরেও অনেক লোকসমাগম হয়েছিল বিশেষ করে আমার বক্তৃতার সময়। জীবনের ওপর অনেক ঝুঁকি গেছে। আর কদিনই বা বাঁচব। অবিবেচকের মতো কথা বলতে মন সায় দেয় না, তাই বলিও না। ভুলত্রুটি যে হয় না, তা নয়। কিন্তু ইচ্ছা করে কাউকে ছোট করতে চাই না, সেদিকে যাইও না। অনেক কথার মাঝে বলেছিলাম, সঠিকভাবে নির্বাচন হলে আগামীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যেতে পারবে না। যদি ক্ষমতায় যায় তাহলে হাতে চুড়ি পরব। মনে হয় যেন বাজ পড়েছে।

ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে বসুন্ধরা কনভেনশন সিটিতেও হাতে চুড়ি পরার রেশ কাটছিল না। কত আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে দেখা, তাদের একই কথা, আপনি অমন করে বললেন! আমারও প্রশ্ন, তাহলে নেতাদের কি কোনো চৈতন্য নেই? সুষ্ঠু নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জিতলে আমার মতো মানুষের হাতে যদি চুড়ি পরতে হয়, তাহলে আমার চুড়ি পরার আগে মরে যাওয়া অনেক ভালো। আগে-পিছে বিচার-বিবেচনা না করে অমন কথা বলা সম্ভব? আমি তো শুধু আওয়ামী লীগকে সাবধান করেছি। জানি, পাছার তলের গদির গরমে অনেকেই ভালো-মন্দ বিচার করেন না। একই কথা বলার কারণে ভালো হয়, আবার অনেক ক্ষেত্রে মন্দ ভালো হয়।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যাকে আমি ভাইয়ের মতো ভালোবাসি, শুভ কামনা করি। এই সেদিন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে দণ্ড দেওয়া আদালতের এখতিয়ার।’ এ কথাই যদি তিনি বলতেন ‘খালেদা জিয়াকে দণ্ড দেওয়া, না দেওয়া আদালতের এখতিয়ার’ তাহলে কেমন হতো, কেমন শোনাত? দেওয়া আর না দেওয়ার মধ্যে কত পার্থক্য! এখন দণ্ড দিলে নিশ্চয়ই বিএনপি সমর্থকরা বলবেন, এটা আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। কারণ সাধারণ সম্পাদক আগেই বলেছেন ‘দণ্ড দেওয়া আদালতের এখতিয়ার।’ এইখানে দণ্ড দেওয়া, না দেওয়া বললে কথাটি অনেক দোল খেত, নিরপেক্ষতা ফুটে উঠত। -বিডি প্রতিদিন

লেখক : রাজনীতিক।

এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে