বুধবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১৮, ১২:৪০:৩৩

বাণিজ্যমেলায় সবার নজর কেড়েছে হিজড়া ও কয়েদিদের তৈরি পণ্য

বাণিজ্যমেলায় সবার নজর কেড়েছে হিজড়া ও কয়েদিদের তৈরি পণ্য

হাফিজ মুহাম্মদ : বাণিজ্যমেলায় এবছর আলোচনায় ছিল কয়েকটি প্যাভিলিয়ন ও স্টল। ব্যতিক্রম এসব স্টলগুলো ছিল মেলার প্রথম থেকেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এমন একটি স্টলের নাম ‘সিঁড়ি হস্তশিল্প’। এটির অবস্থান এসএমই প্যাভিলিয়নের ভেতরে স্টল নম্বর ২১।

সমাজের পিছিয়ে পড়া হিজড়া জনগোষ্ঠীর দ্বারা পরিচালিত একটি সংগঠনের নামে বরাদ্দ নেয়া হয়েছে এটি। হিজড়ারা যে এখন আর পিছিয়ে নেই তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে স্টলটি। সিঁড়ি হস্তশিল্পের প্রধান সমন্বয়ক জয়িতা পুরস্কার জয়ী আরিফা ইয়াসমিন মৌলি।

জামালপুরের এ মেয়ে অনেক বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হয়েও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেছেন। পড়ালেখা শেষে জামালপুর জেলা শহরে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘সিঁড়ি সমাজকল্যাণ সংগঠন’। যার কাজ তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিয়েই। আর সিঁড়ি হস্তশিল্প স্টলের পণ্যগুলো সেসব মানুষের তৈরি।

আরিফা ইয়াসমিন মৌলি বলেন, আমার স্টলের সব পণ্য সংগঠনের লোকদের দ্বারা তৈরিকৃত। মেলায় অন-পিস, টু-পিস এবং নকশিকাঁথাসহ বিশ-বাইশটি পণ্য এনেছিলাম। বিক্রিও ভালো হয়েছে। আমাদেরকে যে সমাজ ভিন্ন চোখে দেখে আমরা সেখান থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছি। মেলার শুরুতে আমাদের স্টলে বিক্রি কম ছিল। তবে শেষ সময়ে তা বেড়েছে। বাকি দিনগুলোতে আরো বিক্রি বাড়বে।

এ বছর প্রথম বাণিজ্যমেলায় আমরা স্টল নিয়েছি। আমাদের নিপুণ হস্তশিল্প সম্পর্কে অনেকের ধারণা নেই তেমন। মানুষদের জানাতেই আমাদের মেলায় আসা। এছাড়াও আমাদের পণ্য আড়ংসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দোকানে বিক্রি করি। আরিফা আরো বলেন, সমাজ আমাদের সুযোগ দিলে আমরাও যে সমাজের অংশ হতে পারি সেটাই মেলায় তুলে ধরেছি। সুযোগ দেয়া হলে আমরা সমাজের বোঝা হবো না। আমরা আমাদের কাজ আরো বাড়িয়ে দেবো।

মেলার এসএমই প্যাভিলিয়নে আরো একাধিক ক্ষুদ্র ও হস্তশিল্প পণ্যের স্টল রয়েছে। তারমধ্যে রংপুর ক্রাফট (শতরঞ্জি), রাজশাহী নকশা ঘর, নতুনত্ব  কুটির শিল্প অ্যান্ড হস্তশিল্প। এছাড়াও বুন্টি ফুড অ্যান্ড বেভারেজ এবং কাশ্মীরি আচারের স্টলে এ বছর বেচাকেনা ছিল ভালো। শেষ সময়ে সব স্টলেই ক্রেতা-দর্শকে মুখর ছিল। বাণিজ্যমেলার এমন আরেকটি স্টলের নাম ‘কারা পণ্য প্যাভিলিয়ন’।

বাংলাদেশ জেলের এ স্টলটিতে মেলা শুরু হওয়ার পর থেকেই ছিল উপচেপড়া ভিড়। পণ্যের ব্যতিক্রম বৈশিষ্ট্য আর তুলনামূলক কম মূল্যের কারণে তাদের পণ্যের চাহিদা ছিল বেশি। এ প্যাভিলিয়নের সব পণ্যই কারাগারের কয়েদিদের হাতে তৈরি করা। বন্দিদের সারাদিন যে অলস থাকতে হয় না- এটা তার প্রমাণ। এ প্যাভিলিয়নে উপস্থাপন করা হয়েছে তাদের নিখুঁত হাতের তৈরি পণ্য-সামগ্রী। এখানে যেসব পণ্য বিক্রি হয়েছে তার একটা অংশ পাচ্ছেন সেসব বন্দিরাও।

বাংলাদেশের ৩৬টির উপরে কারাগারের পণ্য আনা হয়েছিল এ প্যাভিলিয়নে। কারা পণ্য প্যাভিলিয়নের সব বিক্রেতারাই হচ্ছেন বিভিন্ন জেলের কর্মকর্তা-কর্মচারী। এখানে দায়িত্ব পালন করছেন কয়েকজন ডেপুটি জেলার। প্যাভিলিয়ন ম্যানেজার ছিলেন চট্টগ্রাম জেলের ডেপুটি জেলার জাবেদ হোসেন।

তিনি বলেন, বাণিজ্যমেলায় আমাদের কয়েদিদের তৈরি করা পণ্যগুলো দেখানো হয়েছে। আমরা তাদেরকে যেসব প্রশিক্ষণ দেই তার মধ্যে একটি হচ্ছে বিভিন্ন রকম হস্তশিল্প বানানো। তারা এসব কাজ পূর্ব থেকেই করতেন তবে সাধারণ মানুষ তেমন জানতো না। এ বছর প্রথম মেলায় প্যাভিলিয়ন নিয়ে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। বিভিন্ন জেলের প্রায় ৩০০-এর অধিক পণ্য এনেছিলাম মেলায়।

তারমধ্যে বেশিরভাগ বিক্রি হয়ে গেছে। আগামীতে ভালোভাবে এবং বেশি পণ্য নিয়ে মেলায় আসবো। কারণ এসব পণ্য বিক্রি হলে তার একটা অংশীদার তো বন্দিরাই। এ স্টল ছাড়াও এবছরের মেলায় আরো একাধিক স্টল মানুষের নজর কেড়েছে। তারমধ্যে হচ্ছে শতরঞ্জি, তুর্কী প্যাভিলিয়ন, ঝুমঝুম সাজের ঘর। বিদেশি প্যাভিলিয়নের পণ্যও ছিল অনেক চাহিদার।

বাণিজ্যমেলায় আগত দর্শক-ক্রেতারা প্রতিনিয়ত নতুনত্ব চায়। বাণিজ্যমেলায় নতুন কি আসলো সেদিকেই তাদের চোখ। চাহিদা থাকে কমমূল্যে ভালো মানের পণ্য কেনার। আলাদা বৈশিষ্ট্যের পণ্যের কথাও তারা ভুলেন না। আর তা যদি হয় বাণিজ্যমেলার মতো বিশাল কোনো আয়োজনে তাহলে তো কথাই নেই। এক জায়গায় সব ধরনের পণ্য পাওয়া যায় বলে বাণিজ্যমেলার গুরুত্ব রয়েছে অনেক বেশি। আমাদের পাড়া-মহল্লায় সচরাচর যেসব পণ্য পাওয়া যায় ক্রেতারা মেলাতে সেসব এড়িয়ে চলেন।

এমনকি শপিংমলে যেসব পণ্য পাওয়া যায় সেসবেও বাণিজ্যমেলার দর্শক-ক্রেতাদের টানে কম। একসময় হস্তশিল্প ছিল সবার জীবনের অপরিহার্য অংশ। কালের আবর্তনে তা হারিয়ে যেতে বসেছে। শহুরে জীবনে এসব পণ্য এখন খুব একটা দেখা যায় না। কিনতে হলে নির্দিষ্ট কোনো শপিংমলে যেতে হয়। এ কারণে বাণিজ্যমেলায় একাধিক হস্তশিল্পের স্টলের পসরা সাজিয়েছিলেন। মেলার শুরুতে এসব স্টলে বিক্রি কম থাকলেও শেষ সময়ে এসে তাদের বিক্রি বেড়ে যায় কয়েক গুণ। এমজমিন   

এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে