ঢাকা : বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে’র সভাপতি ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদের জীবন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তাঁর পরিবার। দফায় দফায় রিমান্ডে নেয়ায় তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
পরিবারের অভিযোগ, তার চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদালতের আদেশ আমলে নিচ্ছে না কারা কর্তৃপক্ষ। কারাবিধি মোতাবেক দেশের সন্মানিত নাগরিক হিসেবে ডিভিশন পাওয়ার সুযোগ থাকলেও কারা কর্তৃপক্ষ তাকে সাধারণ হাজতি হিসেবে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে রেখেছে।
ফলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, ইংরেজি পত্রিকা ইকোনমিক টাইমসের সম্পাদক, মেধাবী সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদের শারিরিক অবস্থার দিন দিন অবনতি ঘটছে বলে জানিয়েছে তার পরিবার।
পুলিশ ও কারা কর্তৃপক্ষের নিষ্ঠুর আচরণে হৃদরোগ, কিডনি ও ডায়াবেটিসের রোগী শওকত মাহমুদের জীবন মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে বলেও অভিযোগ করেন তার স্ত্রী কবি ফেরদৌসী মাহমুদ।
শওকত মাহমুদের পরিবার ও তার আইনজীবী সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বসুন্ধরা সিটির সামনে থেকে শওকত মাহমুদকে গ্রেপ্তারের পর এ পর্যন্ত তাকে ২১টি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন থানার ২০টি ও কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের ১টি মামলা রয়েছে। ঢাকার ১২টি মামলায় পুলিশ মোট ১২০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। আদালত রমনা ও লালবাগ থানার ২টি মামলায় ৩দিন করে , মতিঝিল, পল্টন, খিলগাঁও, মুগদা থানার অপর ৯টি মামলায় এক দিন করে ৯দিনসহ মোট ১৫দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
এর মধ্যে ইতিমধ্যে ডিবি অফিসসহ বিভিন্ন থানায় তিনি ১৪দিন রিমান্ডে ছিলেন। রামপুরা থানার ১দিনের মঞ্জুরকৃত রিমান্ড এখনও অপেক্ষমান আছে। পল্টন থানা নতুন একটি মামলায় তাকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়েছে। রবিবার তার শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।
গ্রেফতার দেখানো ৮টি মামলায় আগেই চার্জশিট দাখিল হওয়ায় সেগুলোতে কোনো রিমান্ড আবেদন জানাতে পারেনি পুলিশ।
শওকত মাহমুদের আইনজীবী ফরিদুল ইসলাম ফরিদ জানান, আরো ১১টি মামলায় তাকে জড়ানোর প্রক্রিয়ার কথা শুনেছেন। তবে সেগুলোর রেকর্ড তার হাতে এখনও পৌঁছেনি। সেগুলোসহ মোট মামলার সংখ্যা দাঁড়াবে ৩২টিতে। এর মধ্যে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাসে পেট্রোল বোমা মারার মামলায়ও তাকে আসামি করা হয়েছে।
আইনজীবী ফরিদ আরো জানান, ইতিমধ্যে রিমান্ড ও চার্জশিট হওয়া হওয়া ১১টি মামলায় মহানগর হাকিমের কোর্টে তার জামিন আবেদন করা হলে তা নাকচ করা হয়। অন্য মামলাগুলোতেও জামিনের আবেদন করা হয়েছে। ২১ সেপ্টেম্বর কয়েকটি মামলার জামিন শুনানির দিন ধার্য্য রয়েছে।
তিনি জানান, হার্টে বাইপাস সার্জারি ও বেশ কয়েকটি রিং লাগানো থাকায় শওকত মাহমুদ চরম জীবন-ঝুঁকিতে রয়েছেন। জামিন না দেয়ায় তার জন্য ডিভিশন এবং চিকিৎসার আবেদন করলে আদালত কারাবিধি মোতাবেক ডিভিশন ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ আদালতের এ আদেশ আমলে নিচ্ছে না।
তারা চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে তাকে কাশিমপুর কারাগারে রেখেছে। এবং তীব্র গরম ও যানজটের মধ্যে তাকে প্রিজন ভ্যানে করে কাশিমপুর থেকে পুরান ঢাকার কোর্টে ও বিভিন্ন থানায় রিমান্ডে আনা-নেয়া করছে। এসময় ৫/৬ ঘন্টা এমনকি ৮ ঘন্টা পর্যন্ত তাকে প্রিজন ভ্যানে থাকতে হচ্ছে। এতে তার শারিরীক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটছে বলেও জানান দার আইনজীবী।
শওকত মাহমুদের স্ত্রী ফেরদৌসী মাহমুদ জানান, তারা আশা করেছিলেন ঈদের আগেই তিনি জামিনে মুক্তি পাবেন। কিন্তু সরকার একের পর এক নতুন মামলায় জড়িয়ে সম্পূর্ণ নিষ্ঠুর ও অমানবিক আচরণ করছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের বার বার নির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং সাংবাদিকদের শীর্ষ সংগঠন বিএফইউজের সভাপতির মত সম্মানিত ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও তাকে প্রাপ্য ডিভিশন এবং চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না বলে ক্ষোভ জানিয়ে মিসেস শওকত মাহমুদ বলেন, তার ডিভিশনের বিষয়টি ঢাকার ডিসির কার্যালয়ে অবহেলায় পড়ে আছে। সেখানে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো সাড়া দিচ্ছে না।
তিনি বলেন, তার সুগার ২৮ থেকে ৩০ এর মধ্যে। গরমের মধ্যে প্রিজন ভ্যানে আনা নেয়া করায় বুকে কফ জমে গেছে। তার মত গুরুতর হার্টের রোগীকে পুলিশ কোর্টের ১১তলায় হাঁটিয়ে তুলেছে। লিফটের জন্যও অপেক্ষা করেনি। বাসার খাবার ছাড়া অন্য খাবার খাওয়ায় তার পেটে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। শুকিয়ে কঙ্কাল হয়ে যাচ্ছেন দিন দিন।
ফেরদৌসী মাহমুদ আরও বলেন, শওকত মাহমুদ সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের জন্য নিবেদিত ছিলেন। তিনি সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য সংসারে পর্যন্ত সময় দিতেন না। তার মত সাংবাদিক প্রতি বছর জন্মায় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগে তিনি যে মেধার সাক্ষর রেখেন তা আজও কেউ ভাঙতে পারেনি। অথচ অনেকে এখন বলছেন শওকত মাহমুদ সাংবাদিকই নন। দেশের গণতন্ত্রের স্বার্থে তিনি একটি দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হওয়ায় তার সাংবাদিকতার এত বিশাল ক্যারিয়ার কি শেষ হয়ে গেছে? সাংবাদিকদের বিপদে-আপদে তিনি সব সময় পাশে দাঁড়িয়েছেন। অথচ এখন তার পাশে কেউ নেই।
ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে শওকত মাহমুদের পরিবারে বিরাজ করছে চরম হতাশা ও কষ্ট। তার বড় ছেলে নাফিজ মাহমুদ শুভ, ছোট ছেলে সুলতান মাহমুদ সিয়াম, পুত্রবধু তাজরীন আক্তার আখি, বড় মেয়ে মেহতা মামুন রাংতা, ছোট মেয়ে সেফায়েত সারওয়ার চৌধুরী রাশনা শওকত মাহমুদের জীবন নিয়ে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠায় প্রতিটি মুহূর্ত কাটাচ্ছেন।
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএম/ডিআরএ