বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৫, ০৪:২০:৪৫

বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ ব্যবস্থাপনায় যাচ্ছে সুন্দরবন

বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ ব্যবস্থাপনায় যাচ্ছে সুন্দরবন

নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশ অংশের ছয় হাজার বর্গকিলোমিটার আর ভারত অংশের চার হাজার বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত এলাকাজুড়ে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও এর স্বকীয়তা রক্ষায় যৌথভাবে কাজ শুরু করেছে দুই দেশ। বাংলাদেশ ও ভারত অংশের সুন্দরবনকে একীভূত করে বিদ্যমান সমস্যার সমাধান আর উন্নয়ন হবে অভিন্ন ব্যবস্থাপনায়। গোটা সুন্দরবনের উন্নয়ন, নজরদারি কিংবা রক্ষণাবেক্ষণ পরিচালিত হবে নির্দিষ্ট একটি জায়গা থেকে। সুন্দরবন যৌথ ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে এরই মধ্যে দুই দেশ তিন দফা বৈঠক করেছে। ভারতের মতো বাংলাদেশ অংশে চালু হবে ইকো-সিস্টেম ও ইকো-ট্যুরিজম। তবে পর্যটক যাতায়াতে আসবে নিয়ন্ত্রণ। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং সুপেয় পানি নেওয়া ও সংরক্ষণের জন্য চলছে নতুন কর্মপরিকল্পনা। বাংলাদেশ-ভারত সুন্দরবন রিজিওন কো-অপারেশন ইনিশিয়েটিভ (এসআরসিআই) প্রকল্পের আওতায় এসব কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। দুই দেশের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ার কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাও বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে হুমকির মধ্যে থাকা বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনকে বাঁচাতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের যৌথ ইশতেহারের আলোকে সুন্দরবনের দুই অংশকে একসঙ্গে উন্নয়নের কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানান তাঁরা। সুন্দরবনকে একীভূত করে এর সমন্বিত উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা কৌশল নিয়ে কাজ করছে দুই দেশের বেসরকারি খাত। বাংলাদেশ অংশে সুন্দরবন নিয়ে কাজ করছে বিশ্বব্যাংক, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) ও ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটার অ্যাসোসিয়েশন (আইডাব্লিউএ)। আর ভারতের অংশের কর্মপরিকল্পনা ঠিক করতে কাজ করছে সে দেশের সুন্দরবন উন্নয়ন বোর্ড, গবেষণা সংস্থা অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ) ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিসসহ (আইডিএসএ) অন্যরা।ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফরের পর থেকে সুন্দরবনকে একীভূত ও সমন্বিত ব্যবস্থাপনা নিয়ে ঢাকা ও দিল্লিতে দুই দেশের মধ্যে তিনবার বৈঠক হয়েছে। দুই দেশের সরকারি ও গবেষক পর্যায়ে আবারও বৈঠক হয় । বৈঠক হচ্ছে ঢাকায়। রাজধানীর বনানীতে পিআরআই কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়। এতে বাংলাদেশের পক্ষে থাকেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দসহ অন্যরা। আর ভারতের পক্ষে সে দেশের ডাব্লিউডাব্লিউএফ, আইডিএসএ, ওআরএফের গবেষক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকেন। এ ছাড়া আগামী ৯ ডিসেম্বর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে কপ ২১ সম্মেলনে বাংলাদেশ ও ভারতের পক্ষ থেকে দুই দেশের সুন্দরবনকে একীভূত করে এর অভিন্ন ব্যবস্থাপনা নিয়ে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হবে। একই সঙ্গে জলবায়ু সম্মেলনে দুই দেশের নীতিনির্ধারকরা এ বিষয়ে আলাদা বৈঠক করবেন বলে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। সুন্দরবনের বাংলাদেশ ও ভারতের অংশকে একীভূত করে অভিন্ন ব্যবস্থাপনায় একটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এটি পরিচালিত হবে, সে পদ্ধতি ও কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে পিআরআই ও আইডাব্লিউএর কর্মকর্তারা বলছেন, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সঙ্গে সুন্দরবনও দুই অংশে ভাগ হয়ে যায়। রাজনৈতিক কারণে সুন্দরবন ভাগ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এর বৈশিষ্ট্য, চরিত্র ও প্রাকৃতিক দৃশ্য প্রায় এক ও অভিন্ন। দেশভাগের পর থেকে দুই দেশ তাদের নিজের মতো করে সুন্দরবনের ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করে আসছে। ভারতের অংশে সুন্দরবন পরিচালনার জন্য আছে সে দেশের পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন উন্নয়ন বোর্ড। আর বাংলাদেশে সুন্দরবনের দায়িত্বে আছে বন বিভাগ। এ ছাড়া জমির মালিক ডিসি। এ জন্য দুই দেশের ব্যবস্থাপনাও ভিন্ন। প্রথমত, দুই দেশের ব্যবস্থাপনাকে একীভূত করা হবে। এ ছাড়া ভারত অংশে যেভাবে ইকো-সিস্টেম ও ইকো-ট্যুরিজম গড়ে তোলা হয়েছে, বাংলাদেশেও ঠিক একই প্রক্রিয়ায় সুন্দরবনে ইকো-সিস্টেম ও ইকো-ট্যুরিজম গড়ে তোলা হবে। একই সঙ্গে সুন্দরবনে থাকা জীববৈচিত্র্যকে সুরক্ষা দেওয়া এবং সেখানকার স্থানীয় জনগোষ্ঠী যারা সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল তাদের বিকল্প কর্মসংস্থান ও আয়ের ব্যবস্থা করে দেওয়ার কর্মপরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। পর্যটকরা নির্দিষ্ট একটি স্থান পর্যন্ত যেতে পারবে। এর ভেতরে যেতে পারবে না। এমন পরিকল্পনাও নেওয়া হচ্ছে। মধু আহরণ, গোলপাতা সংগ্রহের মতো বিষয়গুলো নিজ নিজ অঞ্চলের আওতায় রাখার চিন্তা আছে। জানতে চাইলে পিআরআই নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশ অংশে সুন্দরবনের যেটুকু আছে, তা নিয়ে অনেক সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ আছে। প্রথমত, পণ্য পরিবহনের জন্য সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে জাহাজ চলাচল। বিদ্যমান চ্যানেলে দীর্ঘমেয়াদে জাহাজ চলবে কি না, অথবা বিকল্প চ্যানেল তৈরি করা কিংবা উন্নয়নের স্বার্থে বিদম্যান প্রক্রিয়া মেনে নেওয়া হবে কি না, এগুলো নিয়ে গবেষণার কাজ চলছে। তিনি আরো বলেন, সুন্দরবনের পাশে রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে বিতর্ক থামছে না। এক পক্ষ বলছে, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে সুন্দরবনের জন্য ক্ষতিকর। সরকার বলছে, এতে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না। অথচ দুই পক্ষের কারো কাছেই কোনো গবেষণা নেই। এ বিষয়ে গবেষণা দাবি রাখে। আহসান এইচ মনসুর বলেন, দুই দেশের সুন্দরবন অংশের কিছুটা অমিল আছে, আর সেটা হলো বাংলাদেশ অংশে সুন্দরবনে মানুষ বসবাস করে না। যদিও ভারত অংশের সুন্দরবনে মানুষ বসবাস করে। তবে এখানকার সাধারণ মানুষের আয়ের উৎস সুন্দরবন। তাদের বিকল্প আয়বর্ধনমূলক কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সে বিষয়ে গবেষণার কাজ চলছে বলে জানান তিনি। আইডাব্লিউএর কমিউনিকেশন অফিসার এ জে এম জোবায়দুর রহমান শোয়েব বলেন, গাছ চুরি, চোরা শিকারিদের থেকে সুন্দরবনকে রক্ষা করতে কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। দুই দেশই সুন্দরবন নিয়ে গবেষণা করছে। এটি চূড়ান্ত হলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় প্রকল্প নেওয়া হবে। একই সঙ্গে বৈশ্বিকভাবে সহযোগিতাও চাওয়া হবে।-কালের কণ্ঠ ১৯ নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/পিবি/পিপি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে