সিলেট থেকে : সিলেট সফর করে গেছেন খালেদা জিয়া। সিলেট বিএনপির নেতাদের নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠকে বসেননি তিনি। কিন্তু অনানুষ্ঠানিকভাবেই দিয়ে গেছেন দিকনির্দেশনা। এর আগে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় ছিলেন সিলেট বিএনপির নেতারা।
খালেদা জিয়াসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে সেখানে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মিলেছে রূপরেখা। এছাড়া কেন্দ্রীয় নেতারা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন সিলেট বিএনপির নেতাদের সাথে। আর সিলেট বিএনপির শীর্ষ নেতারা কেন্দ্রের নির্দেশনার আলোকে বিশেষ বার্তা দিচ্ছেন নগর-তৃণমূল সর্বত্র। সবমিলিয়ে নিরবেই ‘গোপন প্রস্তুতি’ নিয়েছে সিলেট বিএনপি।
এই ‘গোপন প্রস্তুতি’ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়কে ঘিরে। বৃহস্পতিবার ঢাকার বকশিবাজারে স্থাপিত বিশেষ আদালতে এ রায় প্রদান করে।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এ রায় প্রদানকে ঘিরে উত্তপ্ত দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। সিলেটেও বিএনপি নেতাকর্মীরা আছেন উৎকণ্ঠায়। দলটির নেতাকর্মীদের ধারণা, রায়ে খালেদা জিয়াকে সাজা প্রদান করা হতে পারে। কারণ, খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত হলে আইন অনুসারে তিনি আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য হয়ে পড়বেন। অবশ্য উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ থাকবে তার।
বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা যায়, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলার রায় ‘বিপক্ষে’ গেলে তাৎক্ষণিকভাবেই আন্দোলনে নামতে চান দলটির নেতাকর্মীরা। তবে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে এখনই শক্তিক্ষয় করতে রাজি নন খালেদা জিয়া, এমনটাই হচ্ছে দলটির অন্দরমহলের খবর। তবে সিলেট বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজপথে ‘সর্বাত্মক’ আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায়কে ঘিরে গত ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
রুদ্ধদ্বার ওই সভায় সারাদেশ থেকে যাওয়া বিএনপি নেতাদের বক্তব্য শুনেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। পরে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলার রায় ‘বিপক্ষে’ গেলে কিভাবে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করতে হবে, সে ব্যাপারে দলটির নীতিনির্ধারকরা নির্দেশনা প্রদান করেন।
এদিকে, গত সোমবার সিলেট সফর করেন খালেদা জিয়া। তিনি সিলেট বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নিয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসেননি। সূত্র জানিয়েছে, সিলেট সার্কিট হাউজে অবস্থানকালে অনানুষ্ঠানিকভাবে রায়কে ঘিরে দলীয় অবস্থান বা কর্মসূচি কী হবে, সে ব্যাপারে বিএনপি নেতাদের নির্দেশনা দেন খালেদা। এছাড়া আলোচিত এই রায়কে ঘিরে গত কয়েকদিন ধরে কেন্দ্রীয় নেতারা দফায় দফায় যোগাযোগ রাখছেন সিলেট বিএনপিসহ সারাদেশের নেতাদের সাথে।
বিএনপির দলীয় সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায় দেখে কেন্দ্র থেকে যদি আন্দোলনের ডাক দেয়া হয়, তবে সে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে ‘সকল প্রস্তুতি’ সম্পন্ন করে রেখেছে সিলেট বিএনপি। এ লক্ষ্যে ছাত্রদল, যুবদল, শ্রমিকদল, স্বেচ্ছাসেবকদলসহ বিএনপিপন্থি সকল অঙ্গসংগঠনগুলোকে দেয়া হয়েছে বিশেষ বার্তা। কিভাবে কি করতে হবে, তার রূপরেখাও নগর-তৃণমূল সকল পর্যায়ের সাধারণ নেতাকর্মীদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
তবে নিজেদের আন্দোলনের প্রস্তুতি কিংবা আন্দোলনের পদ্ধতি নিয়ে স্পষ্টভাবে কিছু বলতে নারাজ সিলেট বিএনপির নেতারা। সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা একটি সাজানো ও মিথ্যা মামলা। দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলের প্রধান খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে রাখতেই ষড়যন্ত্রের ফসল এই মামলা। এই মামলার রায়কে ঘিরে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে শান্তিপূর্ণ, অহিংস আন্দোলনে নামার সকল প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।
বিএনপির এই নেতা জানান, দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে সিলেটে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে, নির্দেশনাও আসছে। তবে সেই ‘নির্দেশনা’ কী, তা জানাতে নারাজ বিএনপি নেতা আলী আহমদ। সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, সর্বাবস্থায় আন্দোলনের জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি। কেন্দ্র থেকে ডাক এলেই আমরা ঝাঁপিয়ে পড়বো।
এমটিনিউজ/এসএস