বৃহস্পতিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮, ০৭:২১:৩৪

একমাত্র যে উপায়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন খালেদা জিয়া

একমাত্র যে উপায়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন খালেদা জিয়া

নিউজ ডেস্ক : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ে বেগম খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়েছে। তারেক রহমানসহ অন্য আসামিদের ১০ বছর করে কারাদণ্ড ঘোষণা করা হয়েছে। এই রায়ের পর দেশের বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ বিভিন্ন প্রকার প্রতিক্রিয়া জ্ঞাপন করেছেন।

দেশের প্রচলিত আইনানুযায়ী নৈতিক স্খলনজনিত কারণে দুই বছরের বেশি কারাদণ্ডে নির্বাচনে অযোগ্য হলেও আপিল করে ভোটে অংশ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার। আদালতে রায় হওয়ার আগ থেকেই তার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা-অযোগ্যতার প্রসঙ্গ ছিল আলোচনায়।

বিএনপি নেতারা এবং খালেদা জিয়া নিজেও বুধবার সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, তাকে সাজা দিয়ে সরকার আসলে ভোট থেকে তাকে বাদ দেওয়ার উদ্দেশ্যই বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে।

সংবিধান ও নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ন্যূনতম দুই বছর দণ্ডিত হলে সংসদ সদস্য হওয়ার ও থাকবার যোগ্যতা হারান যে কেউ। মুক্তি লাভের ৫ বছর পার না হওয়া পর্যন্ত ভোটে অংশ নেওয়া যায় না।

এই আইন অনুযায়ী খালেদা জিয়া ভোট করার যোগ্যতা হারিয়েছেন; তবে আপিল করলে বিষয়টি হবে ভিন্ন। সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক বলেন, “নিম্ন আদালতের সাজা নিয়ে আপিল হবে। সেক্ষেত্রে বিচারাধীন অবস্থায় ভোটে অংশ নিতে বাধা নেই।”

সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নৈতিক স্খলনজনিত কারণে অভিযুক্ত হয়ে কারও দুই বছরের অধিক সাজা হলে সাজার পরবর্তী পাঁচ বছর তিনি নির্বোচনে অযোগ্য হবেন- এই হল বিধান। কিন্তু সাজাটি সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত যেতে হবে। বিচারিক আদালত হলে হাই কোর্টে আপিল হবে, তারপর আবার আপিল বিভাগে আপিল হবে। সে পর্যন্ত গিয়ে যদি সাজা টিকে যায়, তাহলে তিনি সাজা খাটার পরবর্তী পাঁচ বছর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য হবেন।

একাদশ সংসদ নির্বাচন এই বছরই হবে বলে বাস্তব অবস্থায় এই সময়ের মধ্যে হাই কোর্ট ও আপিল বিভাগ পেরিয়ে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির সম্ভাবনা কম। শফিক আহমেদ বলেন, হাই কোর্ট কিংবা আপিল বিভাগে বিচারিক আদালতের সাজা স্থগিত হয়ে গেলে বা জামিনে থাকলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারা যায়।

সাবেক এই আইনমন্ত্রী বলেন, “তবে সর্বোচ্চ আদালতে বিচারিক আদালতের সাজা টিকে গেলে তখন যদি তিনি সংসদ সদস্য হন, তাহলে তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হয়ে যাবে।”

সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোবারক জানান, বাংলাদেশের নির্বাচনী আইনে উচ্চ আদালতে বিচারাধীন অবস্থায় অংশ নিতে বাধা না থাকলেও ভারতের নির্বাচনী আইনে নিম্ন আদালতে দোষী সাব্যস্ত হলেই নির্বাচনে অযোগ্য হওয়ার বিধান রয়েছে।

এদিকে, এই সাজা হওয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে সরাসরি উত্তর না দিয়ে তা উচ্চ আদালত এবং নির্বাচন কমিশনের উপর নির্ভর করছে বলে মন্তব্য করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

উল্লেখ্য, রায়ে বেগম খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এবং তার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ বাকিদের ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। দণ্ডবিধি ১০৯ ও ৪০৯ ধারায় খালেদা জিয়াসহ বাকিদের সাজা দেয়া হয়। বয়স বিবেচনায় খালেদা জিয়ার সাজা কমানো হয় বলে রায়ে উল্লেখ করেন আদালত।

বিশেষ আদালতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সুপ্রিমকোর্ট বারের সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন, বর্তমান সভাপতি জয়নুল আবেদীন, মীর নাসির উদ্দীন, নিতাই চন্দ্র রায়, সানাউল্লাহ মিয়া, আজিজুর রহমান খান বাচ্চু, আমিনুল ইসলাম ও জয়নুল আবেদীন মেজবাহ উপস্থিত রয়েছেন।

এ ছাড়া দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল, রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাডভোকেট খন্দকার আব্দুল মান্নান, মীর আবদুস সালাম প্রমুখও উপস্থিত হয়েছেন। বিশেষ আদালতের বিচারক ড. আখতারুজ্জামান জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় এ রায় দেন।

এর আগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার গত ২৫ জানুয়ারি যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে ঢাকার বিশেষ জজ-৫ আদালতের বিচারক আকতারুজ্জামান রায়ের জন্য দিন ঠিক করেন ৮ ফেব্রুয়ারি। উল্লেখ্য, ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই দুদক খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এ মামলাটি করে।
এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে