বৃহস্পতিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮, ০৭:৩০:৪৬

আমি ফিরবো, তোমরা কেঁদো না : খালেদা জিয়া

আমি ফিরবো, তোমরা কেঁদো না : খালেদা জিয়া

নিউজ ডেস্ক :  ‘আমি ফিরবো, কান্নার দরকার নেই।’ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আদালতের রায় ঘোষণার মিনিট কয়েক আগে অশ্রুসজল আত্মীয় স্বজন ও সমর্থকদের এই বার্তাই দিলেন খালেদা জিয়া।

প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে নিজের স্বামী জিয়াউর রহমানের নামে গঠিত এতিম তহবিলের প্রায় আড়াই লাখ ডলার তছরুফ করার অভিযোগে ৭২ বছর বয়সী তিনবারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে ৫ বছরের কারাদ- দিয়েছে ঢাকার একটি আদালত।

ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআই এক খবরে জানিয়েছে, রায় শুনতে আদালতে যাওয়ার আগে খালেদা জিয়া নামাজ আদায় করেন। কান্নারত আত্মীয় স্বজনদের স্বান্তনা দেন। গুলশানে অবস্থিত নিজের বাড়ি ফিরোজা ত্যাগ করার সময় খালেদার অনেক স্বজনই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

এ সময় খালেদা বলেন, ‘কান্নার প্রয়োজন নেই। আমি ঠিক থাকবো। তোমরা সবাই অপেক্ষা করো। আমি ফিরবো। চিন্তা করো না। শক্ত থাকো।’

আদালতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন তার বড় বোন, ভাবি, ছোট ভাই, ভাতুষ্পুত্র ও কন্যা এবং তার আইনজীবীরা। খালেদার পাশাপাশি একই মামলায় তার বড় ছেলে তারেক রহমানকে ১০ বছরের কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। তিনি বর্তমানে লন্ডনে আছেন। একই সাজা দেওয়া হয়েছে খালেদার সাবেক চার সহযোগীকে।  

বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে পিটিআই লিখেছে, দন্ডিত হওয়ায়, রোববার পর্যন্ত কমপক্ষে তিনদিন জেলে থাকতে হবে খালেদা জিয়াকে। আজই যদি আদালতের রায়ের সার্টিফায়েড পেতেন খালেদার আইনজীবীরা, তবুও তারা উচ্চ আদালতে আপিল করার সময় পেতেন না।

রোববার পর্যন্ত তাদের অপেক্ষা করতে হবে। উচ্চ আদালতই সিদ্ধান্ত নেবে খালেদাকে জামিন দেওয়ার বিষয়ে। তবে আরও বড় প্রশ্ন হলো, ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কিনা খালেদা। এই রায়ের ফলে খালেদাকে ওই নির্বাচন থেকে দূরে রাখা হতে পারে।

বাংলাদেশের ইংরেজি পত্রিকা ডেইলি স্টারের একটি প্রতিবেদনকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইনানুযায়ী দুই বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত হলেই, পরবর্তী ৫ বছর কেউ নির্বাচন করতে পারেন না। খালেদার মামলায় উচ্চ আদালত তাকে জামিন দিলেও, যদি রায় বহাল রাখে, তাহলে নির্বাচনে অংশ নিতে অযোগ্য ঘোষিত হবেন তিনি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গতবার নির্বাচনে অংশ না নিলেও, এবার অংশ নেওয়ার ব্যাপারে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। রায় ঘোষণার একদিন আগে তিনি নিজ নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে নির্দেশ দেন। এ সময় তিনি বলেন, এবার বিরোধী দল বিহীন মাঠে কাউকে গোল দিতে দেওয়া হবে না।

উল্লেখ্য, রায়ে বেগম খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এবং তার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ বাকিদের ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। দণ্ডবিধি ১০৯ ও ৪০৯ ধারায় খালেদা জিয়াসহ বাকিদের সাজা দেয়া হয়। বয়স বিবেচনায় খালেদা জিয়ার সাজা কমানো হয় বলে রায়ে উল্লেখ করেন আদালত।

বিশেষ আদালতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সুপ্রিমকোর্ট বারের সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন, বর্তমান সভাপতি জয়নুল আবেদীন, মীর নাসির উদ্দীন, নিতাই চন্দ্র রায়, সানাউল্লাহ মিয়া, আজিজুর রহমান খান বাচ্চু, আমিনুল ইসলাম ও জয়নুল আবেদীন মেজবাহ উপস্থিত রয়েছেন।

এ ছাড়া দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল, রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাডভোকেট খন্দকার আব্দুল মান্নান, মীর আবদুস সালাম প্রমুখও উপস্থিত হয়েছেন। বিশেষ আদালতের বিচারক ড. আখতারুজ্জামান জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় এ রায় দেন।

এর আগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার গত ২৫ জানুয়ারি যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে ঢাকার বিশেষ জজ-৫ আদালতের বিচারক আকতারুজ্জামান রায়ের জন্য দিন ঠিক করেন ৮ ফেব্রুয়ারি। উল্লেখ্য, ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই দুদক খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এ মামলাটি করে।
এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে