শুক্রবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৫, ০১:৪৯:৫৬

বঙ্গবন্ধু পুরস্কারের জন্য মনোনীত হলেন সবজিচাষী

বঙ্গবন্ধু পুরস্কারের জন্য মনোনীত হলেন সবজিচাষী

নিউজ ডেস্ক: সবজি চাষে বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন রাজনগরের সবজিচাষী আকলু মিয়া চৌধুরী। উচ্চ ফলনশীল টমেটো চাষ করে এবার পেলেন বঙ্গবন্ধু পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন। তিনি অবশ্য এ অঞ্চলে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে কীটনাশক তৈরির কারিগর হিসেবে পরিচিত। বছরের ১০ মাস নিজের জমিতেই চাষবাস তার। এ অঞ্চলের সবজিচাষীদের পরামর্শদাতা ও অনুকরণীয় হয়ে উঠেছেন তিনি। তার উদ্ভাবিত কীটনাশক ও সবজি চারা ব্যবহার করে উপকৃত হচ্ছেন অন্তত ১০টি গ্রামের মানুষ। ১৯৯৬ সালটি ছিল তার জীবনের উল্লেখযোগ্য দিক। এরপর থেকেই তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। কৃষি বিভাগও তার উদ্ভাবিত কীটনাশক ব্যবহারে এখন অন্য চাষীদের পরামর্শ দিচ্ছেন। প্রথমে বাড়ির পাশের সামান্য জমি নিয়ে আকলু মিয়া চৌধুরী বাণিজ্যিকভাবে উচ্চ ফলনশীল সব জাতের সবজির চাষ শুরু করেন। তখন থেকেই তিনি বুঝতে পারেন এথেকে সাফল্য পাওয়া যাবে। এরপর থেকে তিনি হাইব্রিড টমেটো, লাউ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মিষ্টিলাউ, শিম, কলা, আলু, মরিচ, বেগুনসহ বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ শুরু করেন। ধীরে ধীরে জমি বাড়াতে শুরু করেন। বর্তমানে তিনি ১০ বিঘা জমিতে এই চাষ করছেন। তিনি কয়েক বছর ধরে আগাম জাতের হাইব্রিড সবজি চাষ করে সাফল্য পেয়ে যাচ্ছেন। চলতি বছর তিনি থাইল্যান্ডের রেড কিং (প্রতি গাছে ১৫/২০ কেজি), রূপসী (১০/১২ কেজি), অভিসার (১৫/২০ কেজি) ও জাপানের ইপক নাভিজাত (২৫/৩০ কেজি) টমেটোর চাষ করেছেন। যা আগাম জাত হিসেবে পরিচিত। উচ্চ ফলনশীল টমেটোর প্রতিটি গাছে ১০ থেকে ৩০ কেজি পর্যন্ত ফলন হয়। এরই মধ্যে তিনি বিক্রিও শুরু করেছেন। তিনি এই বীজগুলো সিলেটের সুরমা বীজ সেন্টার থেকে কিনে থাকেন। যার প্রতি ৫ গ্রামের মূল্য ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। আকলু মিয়া জানান, ৫ জন রোজ কামলাসহ পুরো মৌসুমে তার খরচ হবে প্রায় ৩ লাখ টাকা। পক্ষান্তরে আগস্ট মাস থেকে শুরু করে আগামী জুন পর্যন্ত ১০ মাসে টমেটোসহ অন্যান্য সবজি মিলে ১৪ থেকে ১৫ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলে প্রত্যাশা করছেন। যা থেকে তার ভাল মুনাফা হবে। এরই মধ্যে তিনি সবজি চাষে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিতে থাইল্যান্ড ঘুরে এসেছেন। আকলু মিয়ার সবজি বাগানে কাজ করে অনেকেই ছোট পরিসরে নিজেই সবজি চাষ করে যাচ্ছেন। শ্রমিকরা জানালেন, প্রতিদিন সকালে বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা এসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার টমেটোসহ আরও ৪-৫ হাজার টাকার সবজি কিনে নিচ্ছেন। অত্র এলাকার পল্লী চিকিৎসক রিটনসহ আরও কয়েকজন দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তার এ সাফল্য দেখে পাশের ক্ষেমসহস্র, পার্সিপাড়া, বাজুয়া, মজিদপুরসহ আরও অনেক গ্রামের কৃষকরা এগিয়ে এসেছেন। তার কাছ থেকে চারা গাছ সংগ্রহ ও পরামর্শ নিচ্ছেন তারা। আকলু মিয়া চৌধুরী জানান, ২০১৪-১৫ মৌসুমে ২ লাখ ২৯ হাজার টাকা ব্যয় করে প্রায় ৭ লাখ টাকা মুনাফা করেছি। পাশাপাশি ৫ শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এখান থেকে সিলেটের বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জসহ রাজনগরের বিভিন্ন বাজার থেকে ব্যবসায়ীরা এসে সবজি কিনে নেন। এপর্যন্ত আড়াই লাখ টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। আরও ২০-২৫ হাজার টাকা বিনিয়োগের পর ১৪-১৫ লাখ টাকা মুনাফা করার আশা করছেন তিনি। এদিকে, রাজনগর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৮টির মধ্যে দুটি ছাড়া বাকি ৬টি ইউনিয়নেই বিচ্ছিন্নভাবে সবজি চাষ হচ্ছে। উপজেলায় ৪০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। যেহেতু মৌসুম আরো বাকি রয়েছে তাই আরও বেশি জমিতে চাষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রাজনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শেখ আজিজুর রহমান জানান, চলতি বছর সবজি চাষ ১ হাজার হেক্টর ছাড়িয়ে যাবে। সারা উপজেলায় ২০ থেকে ২৫টি গ্রামে এই সবজির চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে আকলু মিয়ার বাগানটি একটু ভিন্ন। আকলু মিয়া গত মৌসুমে ভাল টমেটো চাষের জন্য এ বছর তাকে বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ২০ নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/পিবি/পিপি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে