শুক্রবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৫, ০২:৩৫:১৬

সপ্তাহে একদিন বসে যে আদালত

সপ্তাহে একদিন বসে যে আদালত

নিউজ ডেস্ক: সপ্তাহে একদিন বসা আদালতের কার্যক্রম দেখতে সমবেত হন গ্রামের অনেক সাধারণ মানুষ। যাহা বলিব সত্য বলিব, সত্য বই মিথ্যা বলিব না- এই শপথবাক্য বাদী, বিবাদী ও সাক্ষীদের পাঠ করানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিচার কাজ। এজলাসে থাকেন বিচারক, পেশকার, উকিল, পর্যবেক্ষক ও গ্রাম পুলিশ। এ চিত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম আদালতের। পুরো এজলাস তৈরি হয়েছে কাঠ দিয়ে। এক পাশে বাদী ও অন্য পাশে বিবাদী দাঁড়ানোর ব্যবস্থা আছে। বাদী ও বিবাদী যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য পছন্দ অনুযায়ী পরিষদের ১২ সদস্যের মধ্য থেকে একজন করে উকিল হিসেবে বিনাপয়সায় নিয়োগ করেন। এ ইউনিয়নে গ্রাম আদালত পদ্ধতি চালু হওয়ায় অপরাধপ্রবণতা ও মামলা-মোকদ্দমা অনেক কমে এসেছে। ১০ টাকার কোর্ট ফির মাধ্যমে বাদীর অভিযোগ গ্রহণ করে ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষ। এর পর বিবাদীকে গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে সমন জারি করা হয়। সমনে নির্দিষ্ট তারিখে বিবাদীকে হাজির হতে বলা হয়। কোনো সময় সাক্ষী আদালতে হাজির না হলে সাক্ষীর নামেও সমন জারি হয়। আদালতে বাদী-বিবাদী ও সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ৩টি তারিখের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করা হয়। যেসব মামলা নিষ্পত্তি করা যায় না সেগুলো জুডিসিয়াল আদালতে পাঠিয়ে দেয় ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষ। এ আদালতে ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করার বিধান আছে। গত ৪ বছরে এই আদালতে অভিযোগ এসেছে প্রায় ২ হাজার। নিষ্পত্তি হয়েছে প্রায় ৯০০। মারামারি, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া, পারিবারিক বিরোধ, অর্থ লেনদেন নিয়ে বিরোধ, ভূমি দখল, সংঘর্ষ, চুরি, ডাকাতি, মাদকের অভিযোগ গ্রহণ করা হয়। এলাকাবাসীর মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে এ আদালত। গ্রাম আদালতের কার্যক্রম নিয়ে ৬ মাস পরপর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রতিবেদন পাঠাতে হয়। আদালতের কার্যক্রমের সুফল পেয়েছেন এমন একজন হলেন ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর গ্রামের রাফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, ভুল বোঝাবুঝির কারণে তার সংসার প্রায় ভেঙে যাচ্ছিল। এমন সময় তার স্ত্রী গ্রাম আদালতের আশ্রয় নেন। পরে আদালতের মাধ্যমে তাদের মিলিয়ে দেওয়া হয়। এখন সন্তানদের নিয়ে সুখে-শান্তিতে বসবাস করছেন তারা। আদালতের বিচারক প্যানেল পাঁচজনের। চেয়ারম্যান এর সভাপতি। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হচ্ছেন গ্রাম আদালত প্রধান। তিনিই বিচার কাজ পরিচালনা করে থাকেন। ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে গ্রাম আদালত পদ্ধতি চালু হয় এই ইউনিয়ন পরিষদে। পরিষদের সভাকক্ষে প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার বসে আদালত। এজলাস তৈরি হয়েছে চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে। চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে গ্রাম আদালত পয়েন্টের তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করেছে সিঙ্গারবিল ইউনিয়ন পরিষদ। সফল চেয়ারম্যান হিসেবে ২০১৪ সালে সিঙ্গারবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া পেয়েছেন গান্ধী পিস অ্যাওয়ার্ডসহ বেশ কয়েকটি পুরস্কার। এর আগেও অনেক পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। গ্রাম আদালত পরিচালনা ও মামলা নথিভুক্ত করতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অ্যাক্টিভিটিং ভিলেজ কোর্টস ইন বাংলাদেশ প্রকল্প থেকে বই ও ফরম দেওয়া হয়েছে। মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, '২০১১ সালের দিকে কুমিল্লায় এক প্রশিক্ষণে গ্রাম আদালতের সুফল কী তা বিস্তারিত জানতে পারি। তখনই মনে মনে স্থির করি আমার এলাকার উন্নয়ন ও জনগণের ভোগান্তি কমাতে গ্রাম আদালত পদ্ধতি চালু করব। গ্রাম আদালত কার্যকর থাকলে এলাকার উন্নয়নের জন্য থোক বরাদ্দ বেশি পাওয়া যায়। আইন-শৃঙ্খলাও নিয়ন্ত্রণে থাকে। এলাকার ৯০ ভাগ সমস্যা গ্রাম আদালতে নিষ্পত্তি হয়। এতে মামলা-মোকদ্দমা কমে গেছে। এর সুফল এলাকাবাসী পাচ্ছেন।' ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বশিরুল হক ভূঞা বলেন, বিজয়নগর উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকার সময় সিঙ্গারবিল ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতের কার্যক্রম দেখেছেন। গ্রাম আদালত কার্যকর হওয়ায় ওই এলাকার মামলা-মোকদ্দমা অনেকাংশে কমে গেছে। সবখানে গ্রাম আদালত কার্যকর হলে আইন-শৃঙ্খলার অনেক উন্নতি হবে। ২০ নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/পিবি/পিপি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে