শুক্রবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৫, ০৩:৫৫:৪৩

কী 'বার্তা' নিয়ে ফিরছেন খালেদা জিয়া

কী 'বার্তা' নিয়ে ফিরছেন খালেদা জিয়া

লোটন একরাম: লন্ডন থেকে কী 'বার্তা' নিয়ে দেশে ফিরছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া? এ প্রশ্ন বিএনপির নেতাকর্মী, রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ সাধারণ মানুষের মনে। লন্ডনে অবস্থানরত দলের দ্বিতীয় নীতিনির্ধারক ও বড় ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং দল পুনর্গঠনের বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে আসবেন বলে মনে করেন অনেকে। সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দীর্ঘ দুই মাস পর আগামীকাল শনিবার লন্ডন থেকে দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া। বেশ কয়েক দফা দেশে ফেরার তারিখ পরিবর্তনের পর গতকাল বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে দলের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার তারিখ ঘোষণা করা হয়। সবার মনে প্রশ্ন_ লন্ডন থেকে কী সিদ্ধান্ত নিয়ে আসছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। আগামী দিনগুলোতে কী হবে বিএনপির রাজনৈতিক কৌশল? দেশি-বিদেশিদের চাপে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে দলের অধিকাংশ শীর্ষ নেতা অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ত্যাগের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপি? দল পুনর্গঠনেই কি নতুন কোনো চমক থাকছে? আগামীতে দল পরিচালনায় দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভূমিকাই বা কী হবে? চলতি বছরে কি ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল হবে? দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কি ভারমুক্ত হবেন? দলীয় প্রতীকে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত কী হবে ইত্যাদি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, দেশে ফিরে দল ও জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে আনুষ্ঠানিকভাবে পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করবেন তিনি। পর্যায়ক্রমে সময় ও সুযোগ বুঝে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা করবে দলটি। বিএনপির ঢাকা ও লন্ডনের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে দেশে ফিরে আবারও জাতীয় সংলাপের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করবেন বিএনপি নেত্রী। যদিও কয়েক দিন আগে তিনি লন্ডনে দলীয় সমাবেশে সংলাপের আহ্বান জানানোর পরের দিন প্রত্যাখ্যান করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এর পরও সরকারকে সংলাপে বসতে অব্যাহতভাবে চাপ প্রয়োগ করে যাবেন তিনি। একই সঙ্গে দেশে ফিরে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের বাইরের রাজনৈতিক জোটগুলোকে নিয়ে 'বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের' ডাক দেবেন খালেদা জিয়া। এ লক্ষ্যে দেশে ফিরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী, নানা শ্রেণী-পেশার নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পৃথকভাবে আলোচনা শুরু করবেন তিনি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি চেয়ারপারসনের দেশে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন। চিকিৎসা নিয়ে তিনি দেশে ফিরে দল পুনর্গঠনের পাশাপাশি সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশকে গভীর সংকট থেকে উত্তরণে খালেদা জিয়া আবারও জাতীয় সংলাপের আহ্বান জানাবেন। একই সঙ্গে দল ও মতের ঊধর্রন উঠে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ার আহ্বান জানাবেন বিএনপি নেত্রী। সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে আসছেন বিএনপিপ্রধান। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশসহ পশ্চিমা প্রভাবশালী দেশ ও দাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারে বিএনপি। বর্তমান বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক অব্যাহত রাখার ব্যাপারে পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হবে বিএনপি। জামায়াতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে গোপন সম্পর্ক ও কট্টর মৌলবাদী রাজনীতির অভিযোগে চতুর্মুখী চাপে জামায়াতকে নিয়ে নতুন করে হিসাব-নিকাশ কষতে শুরু করছে দলটি। সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া দেশে ফিরে দল পুনর্গঠনের সর্বশেষ পরিস্থিতি অবহিত হয়ে কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে চলতি বছরের মধ্যে তৃণমূল থেকে পুনর্গঠন করে জাতীয় কাউন্সিল করা দলটির জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে শুধু রাঙামাটিতে সম্মেলন করতে সক্ষম হয়েছে। অধিকাংশ জেলা, উপজেলা ও পৌরসভার শীর্ষ নেতারা মামলা মাথায় নিয়ে কেউ কারাগারে, কেউ আত্মগোপনে রয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শিগগির শেষ করতে পারবেন না খালেদা জিয়া। এ ছাড়া বি. চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারাকে জোটে এবং কর্নেল (অব.) অলির নেতৃত্বাধীন এলডিপিকে বিএনপিতে একীভূত করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। আগামী ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ঢাকার পাশে একটি বড় সমাবেশ করার পরিকল্পনাও নিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব করার ব্যাপারে তারেক রহমানেরও সমর্থন পেয়েছেন খালেদা জিয়া। এ ছাড়া দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি থেকে বেশ কয়েকজন বয়োজ্যেষ্ঠ নেতাকে বাদ নিয়ে নতুন মুখ আনার ব্যাপারে একমত হয়েছেন খালেদা-তারেক। একই সঙ্গে জাতীয় নির্বাহী কমিটি, বিভিন্ন মহানগর, জেলাসহ সর্বস্তরের দলের পুনর্গঠিত কমিটিতে তুলনামূলক তরুণ, ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের আনারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। লন্ডনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎকারী দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা বলেন, দেশে ফিরে খালেদা জিয়া বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবেন। বিশেষ করে জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে দলকে ঢেলে সাজাবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মহাসচিব হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সম্ভাবনাই বেশি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশে ফিরে খালেদা জিয়া বিভিন্ন দল ও বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার ডাক দেবেন। সফর নিয়ে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ :খালেদা জিয়ার লন্ডনে অবস্থানের মধ্যেই বাংলাদেশে দুই বিদেশি নাগরিক খুন হয়েছেন এবং তল্লাশি চৌকিতে হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে দুই পুলিশকে, যেসব ঘটনার জন্য বিএনপি নেত্রীকেই দায়ী করে আসছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরিই বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার 'বানচালের উদ্দেশ্যে' বিদেশে বসে খালেদা জিয়া বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার 'ষড়যন্ত্র' করছেন। অন্যদিকে বিএনপি বলে আসছে, সরকার নিরাপত্তা দিতে 'ব্যর্থ হয়ে' এখন তাদের ওপর 'দায় চাপাচ্ছে'। চিকিৎসা নিয়ে কোরবানির ঈদের পর খালেদা জিয়া দেশে ফিরবেন বলে এর আগে জানিয়েছিলেন বিএনপি নেতারা। কিন্তু দুই মাসেও তিনি না আসায় খালেদা আদৌ ফিরবেন কি-না, সে সন্দেহ প্রকাশ করতে শুরু করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। নৌমন্ত্রী শাজাহান খান গত সপ্তাহেও এক অনুষ্ঠানে বলেন, 'বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার কথা বলে স্বেচ্ছায় নির্বাসনে গেছেন। তিনি আর দেশে আসবেন না।' গত ১৬ নভেম্বর সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, 'দেশে আসাতে (খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান) কোনো বাধা দেব না, স্বাগত জানাব।' একই দিন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রংপুরে বলেছেন, খালেদা জিয়া দেশে ফিরলে গ্রেফতার হতে পারেন। তিনি ভয়ে তিনি দেশে আসছেন না। দেশের সংকটেই খালেদার ফেরার সিদ্ধান্ত_ বিএনপি :দেশের 'পরিস্থিতি' বিবেচনা করে 'চিকিৎসা শেষ না করেই' খালেদা জিয়া আগামীকাল শনিবার লন্ডন থেকে দেশে ফিরছেন বলে জানিয়েছে তার দল বিএনপি। দলের মুখপাত্র আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন বৃহস্পতিবার বিকেলে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ২১ নভেম্বর বিকেল ৫টায় এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজে খালেদা জিয়ার ফেরার কথা রয়েছে। দেশের ক্রান্তিকাল ও রাজনীতির সংকট বিবেচনা করেই দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া চিকিৎসা অসমাপ্ত রেখে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর আগে দুপুরে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানি শেষে আদালত থেকে বেরিয়ে খালেদার আইনজীবী মাহবুবউদ্দিন খোকন ও সানাউল্লাহ মিয়া সাংবাদিকদের একই কথা বলেন। গত ১৫ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সেখানে তিনি চোখ ও বাতের চিকিৎসা নিচ্ছিলেন বলে বিএনপি নেতারা বলে আসছেন। দুই মাস ধরে লন্ডনে বড় ছেলে তারেক রহমান ও তার পরিবারের সঙ্গেই আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।-সমকাল ২০ নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/পিবি/পিপি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে