শুক্রবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৫, ০৪:১৬:৫০

পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে সচিব কমিটির ৩১ সুপারিশ

পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে সচিব কমিটির ৩১ সুপারিশ

মিজান চৌধুরী: পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্মাণ সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি কর অবকাশ সুবিধায় আমদানির সুপারিশ করেছে সচিব কমিটি। পাশাপাশি ভূমিকম্পনের ঝুঁকি মোকাবেলায় সেতুর গুরুত্বপূর্ণ ও বড় স্থাপনাগুলোকে বীমার আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ প্রকল্প নিয়ে ৩১ দফা সুপারিশ করেছে কমিটি। বর্তমানে বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা মন্ত্রিপরিষদ সচিব থাকাকালে তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সচিব সভায় সম্প্রতি এসব সুপারিশ করা হয়। এগুলো বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট সচিবদের লিখিতভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে সেতু বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সচিব কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। সুপারিশের বেশ কয়েকটি আগেই বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সব সুপারিশ একসঙ্গে বাস্তবায়ন করা হবে না। যেগুলোর প্রয়োজন সেটা অবশ্য করছি। এসব সুপারিশ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সচিব কমিটির বৈঠকের সুপারিশের একাংশ নিয়ে বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হয়েছে। সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের জন্য এরই মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও চট্টগ্রাম বন্দরসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থায় চিঠি দিয়েছে সেতু বিভাগ। একই সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে। ৩১ দফা সুপারিশের মধ্যে সেতুর নির্মাণ কাজে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বলা হয়। এক্ষেত্রে পায়রা ও রামপাল প্রকল্পের বিদ্যুৎ পদ্মা সেতুতে ব্যবহারের জন্য সেতু বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে সঞ্চালন পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার সুপারিশ করা হয়। অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে সেতুর উভয় পাশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড উৎসাহিত করতে নীতি-প্রণোদনা এবং গ্যাস সংযোগের ব্যবস্থা, দক্ষিণে বিসিক শিল্পনগরীগুলো চালু ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলের (বেজা) মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণে কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি সেতুর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শিল্প স্থাপনের সহায়ক নীতি গ্রহণ, মাশুল আদায়ে স্বয়ংক্রিয় ইলেক্ট্রনিক ব্যবস্থা, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রবাহে ফাইবার অপটিক ক্যাবল স্থাপন, নিরাপত্তার জন্য পুলিশ তদন্ত ও থানা কেন্দ্র স্থাপনের সুপারিশ করা হয়। সচিব কমিটির সুপারিশে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সেতু প্রকল্পের ডিপিপি সংশোধনের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া মাস্টার প্ল্যানের আওতায় সেতুর উভয় পাশে উন্নয়নের ব্যবস্থা, পৃথক উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন, রেল সংযোগ স্থাপনে আগাম জমি অধিগ্রহণ, স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে লাভজনক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে উপযুক্ত কর্মসূচি গ্রহণের কথা বলা হয়। পাশাপাশি প্রকল্প এলাকায় চারটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি জাদুঘর, পর্যটক আকর্ষণে নদীর উভয় পাশে ইকোপার্ক স্থাপনের কথা বলা হয়। সুপারিশে আরও বলা হয়, পদ্মা বহুমুখী প্রকল্প একটি গর্বের প্রকল্প। এ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে নিজ নিজ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের করণীয় নির্ধারণ করে সেতুর সর্বোত্তম অর্থনৈতিক ব্যবহারের জন্য এখন থেকেই প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। সেখানে আরও বলা হয়, এ সেতু চালুর পর অভ্যন্তরীণ ও আন্তঃদেশীয় যান চলাচলের মাত্রা ও গতি বৃদ্ধি পাবে। এ পরিস্থিতিতে সড়ক-মহাসড়কে নির্বিঘ্নে যান চলাচলের সুবিধা সৃষ্টি এবং বড় বড় শহর এড়িয়ে বিকল্প পথে যান চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। সেতু সমাপ্তির পর এর মানসম্মত রক্ষণাবেক্ষণের ওপর যত্নবান হতে হবে। এছাড়া নদীর গভীরতা ও নাব্য রক্ষায় দেশীয় বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করা, ইলিশ প্রজনন রক্ষায় বিশেষ যত্নবান, নদীর ড্রেজিংয়ে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ও নদীভাঙন রোধে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়কে আরও তৎপর এবং নদী শাসনের প্রতি লক্ষ্য রেখে কার্যক্রম গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত জাজিরা সংযোগ সড়কের ভৌত অগ্রগতি ৫০ দশমিক ৫ শতাংশ, মাওয়া সংযোগ সড়ক ৫২ দশমিক ৮২ শতাংশ ও সার্ভিস এরিয়ার অগ্রগতি হয়েছে ৫৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এছাড়া মূল সেতুর ভৌত অবকাঠামোর অগ্রগতি হয়েছে ১৪ শতাংশ। মূল সেতুর ১০টি পাইলের মধ্যে তিনটি টেস্ট পাইল ড্রাইড, ভায়াডাক্টোর ১৬টি টেস্ট পাইলের মধ্যে সাতটি ড্রাইড এবং ৬৪টি অ্যাংকর পাইলের মধ্যে ২৮টি পাইল ড্রাইড সম্পন্ন হয়েছে। নদী শাসন কাজের ভৌত অগ্রগতি ৯ শতাংশ হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন খাতে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫৪১ কোটি ২৬ লাখ টাকা সহায়তা বাবদ বিতরণ করা হয়েছে। পুনর্বাসন সাইটগুলোতে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৫৯২টি প্লটের মধ্যে ১৩৪০টি প্লট ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে হস্তান্তর করা হয়। অগ্রগতি প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরিয়তপুর জেলার মোট প্রস্তাবিত প্রায় ১৬শ’ হেক্টর জমির মধ্যে অধিগ্রহণ করা হয় ১৩শ’ হেক্টর জমি। দখল বুঝে নেয়া হয়েছে ১৫১৫ হেক্টর। পরিবেশ কার্যক্রমের আওতায় সেতুর উভয় প্রান্তে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গাছ লাগানো হয়েছে ৬৭ হাজার ৫৫০টি।-যুগান্তর ২০ নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/পিবি/পিপি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে