শনিবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৫, ০২:১৯:৫২

‘বাংলাদেশের মাটিতে চুমু খেতে বলেছেন মা’

‘বাংলাদেশের মাটিতে চুমু খেতে বলেছেন মা’

নিউজ ডেস্ক : মা অসুস্থ, আসতে পারেননি। আমাকে বলেছেন, বাংলাদেশে এসেই মাটিতে চুমু খেতে। এ দেশের মাটির প্রতি তার অগাধ শ্রদ্ধা। এভাবেই বাংলাদেশের প্রতি তার মায়ের শ্রদ্ধাবোধের কথা জানালেন মহান মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাহত শিশু শিখার ২১ বছর বয়সী মেয়ে ক্যাটরিনা। শুক্রবার সকালে একাত্তরের যুদ্ধশিশুদের মাতৃসমা বনি কাপুচিনোর সঙ্গে নতুন প্রজন্মর ‘আলাপচারিতা’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাদুঘর প্রাঙ্গণে এটি অনুষ্ঠিত হয়। আবদুন নূর তুষারের সঞ্চালনায় স্মৃতিচারণ করেন বনি কাপুচিনো এবং শিখার বড় মেয়ে ক্যাটরিনা। ক্যাটরিনা বলেন, বাংলাদেশের মাটি ও মানুষকে আমি ভালোবাসি। আমার মায়েরও এদেশের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা। তিনি অসুস্থ তাই আজকের এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি। মা আমাকে বলেছেন, দেশের মাটিতে নেমেই যেন মাটিতে চুমু খাই, শ্রদ্ধা প্রকাশ করি। বনি কাপুচিনো বলেন, আমি এবং আমার স্বামী যখন প্রথম এসেছিলাম, তখন বাংলাদেশ সরকার খুবই নতুন। এখানে যুদ্ধশিশুরা ছিল অনেক গরিব ও সুবিধা বঞ্চিত। দ্বিতীয় বার ২০০২ সালে যখন আমরা ফের আসি, তখন বাংলাদেশের চট্টগ্রামে শিশুদের জন্য একটি চাইল্ড হেভেন-শিশু স্বর্গ প্রতিষ্ঠা করেছি। যেখানে শিশুরা পুষ্টিকর খাবার, নিরাপদ বাসস্থান, চিকিৎসা এবং শিক্ষা পাবে। বনি কাপুচিনো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, রাজনীতি বা বিচার নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তবে যারা বিচারপ্রার্থী বা নির্যাতিত হয়েছেন, তাদের প্রতি আমার সহমর্মিতা রয়েছে। এছাড়াও বিতর্ক, দেশাত্মবোধক গান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়। পুরো অনুষ্ঠানের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে পাকবাহিনী পরিচালিত নৃশংস অত্যাচারের স্মারক হয়ে আছে যুদ্ধশিশু, যাদের অনেকে বিদেশে বিভিন্ন পরিবারের সদস্য হয়ে নতুন জীবন গড়ে তুলেছেন। ১৯৭২ সালে কানাডার সমাজকর্মী বনি কাপুচিনো ফ্যামিলিজ ফর চিলড্রেনের পক্ষ থেকে ঢাকায় এসে যুদ্ধশিশুদের দত্তক নেয়ার আয়োজন করেন। তিনি ও তার সহকর্মীরা সে বছরের ১৯ জুলাই ১৫ জন যুদ্ধশিশু নিয়ে কানাডার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। এই পথ অনুসরণ করে যুদ্ধশিশুদের কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে দত্তক হিসেবে গ্রহণ শুরু হয়। যুদ্ধশিশুদের প্রথম দলে ছিল চার মাসের শিখা, যাকে দত্তক নিয়েছিলেন কাপুচিনো দম্পতি। এই দম্পতি শিখাকে নিজ পরিবারের কন্যা হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। তাকে স্বাভাবিক জীবন দিয়ে লালন পালন করে বড় করে তুলেছেন। বনি কাপুচিনো আজও দুস্থ শিশুদের পুনর্বাসনে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। চট্টগ্রামে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন অনাথ-আশ্রম ‘ভূস্বর্গ’। নেপাল ও ভারতে রয়েছে তার এমনি আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। ২১ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/পিবি/পিপি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে