শনিবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৫, ০২:৩৮:৩৫

প্রাণভিক্ষা নয়তো যে কোন সময় ফাঁসি

 প্রাণভিক্ষা নয়তো যে কোন সময় ফাঁসি

নিউজ ডেস্ক : এখন অপেক্ষা শুধু প্রাণভিক্ষা চাওয়া ও জবাবের। রাষ্ট্রপতির কাছে যুদ্ধাপরাধের দুই শিরোমণি প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন কি-না_সেই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেলেই শেষ ধাপে পৌঁছবে ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টি। প্রাণভিক্ষা না চাইলে সরকারের নির্বাহী আদেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর স্বাক্ষরের পর যে কোনো সময় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা যাবে। আর প্রাণভিক্ষা চাইলে তা রাষ্ট্রপতির মতামতের জন্য পাঠানো হবে। পূর্ণাঙ্গ রায় শোনার পর বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার সকালে কারা কর্তৃপক্ষ পৃথকভাবে দুই দফায় একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদনের ব্যাপারে জানতে চায়। দু'জনই বলেছেন, তারা আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পরে সিদ্ধান্ত জানাবেন। এখনও সাকা-মুজাহিদ প্রাণভিক্ষার আবেদন করেননি। নানা অজুহাতে গড়িমসি করে কালক্ষেপণ করছেন তারা। তবে কারা কর্তৃপক্ষ তাদের জানিয়েছে, প্রাণভিক্ষার সিদ্ধান্ত নিতে আইনজীবীর সঙ্গে দেখার করার আইনগত কোনো সুযোগ নেই। এ সিদ্ধান্ত তাদেরই নিতে হবে। সবার মনে এখন একটা প্রশ্ন_ সাকা-মুজাহিদের ফাঁসি কবে কার্যকর হচ্ছে? তারা কি প্রাণভিক্ষা চাইবেন? নাকি জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লা ও মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের মতো এই শীর্ষ দুই যুদ্ধাপরাধীও প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন না। যদিও চূড়ান্ত রায় প্রকাশের পর প্রাণভিক্ষা চাওয়া-না-চাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে পাঁচ দিন গড়িমসি করে সময়ক্ষেপণ করেছিলেন কামারুজ্জামান। আর যেদিন রিভিউ আবেদন খারিজ হয়, সেই দিনই কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দু-একদিনের মধ্যে সাকা-মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর হতে পারে। অতীতে শুক্রবারে দেশে উল্লেখযোগ্য কোনো দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির ফাঁসি কার্যকর হয়নি। প্রাণভিক্ষার আবেদন চাওয়া-না-চাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাতে সাকা-মুজাহিদকে বেশি সময় দিতে চায় না কারা কর্তৃপক্ষ। গত বুধবার সাকা ও মুজাহিদের রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন আদালত। বৃহস্পতিবার বিকেলে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর রাতে তা পাঠানো হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। বৃহস্পতিবার রাতে সাকা-মুজাহিদকে রায় পড়ে শোনানোর পর প্রাণভিক্ষার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, 'সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আইন অনুযায়ী তারা প্রাণভিক্ষা চাইতে পারেন; তবে এখনও চাননি। যদি প্রাণভিক্ষা না চান, তাহলে দ্রুততম সময়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে। প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি-না সেই প্রশ্নের জবাব এখনও পাওয়া যায়নি। সর্বোচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছেন, এর প্রক্রিয়া শেষ করে আইন অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। আইনের প্রতিটি ধাপ মেনেই আমরা সবকিছু করছি। আইনের ব্যত্যয় ঘটছে না।' স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের রায় বাস্তবায়ন হবেই। এই রায় বাস্তবায়ন কেন্দ্র করে যদি কোনো অশুভশক্তি আইন-শৃঙ্খলার অবনতির চেষ্টা করে তাহলে জনগণই তাদের প্রতিহত করবে। এ ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক রাখা হয়েছে। ডিআইজি (প্রিজন) গোলাম হায়দার বলেন, 'ট্রাইব্যুনাল থেকে রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পর ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দু'জনকে পড়ে শোনানো হয়। ক্ষমা চাইবেন কি-না জানতে চাওয়া হয়েছে। তারা বলেছেন, সিদ্ধান্ত পরে জানাবেন।' এরই মধ্যে সাকা ও মুজাহিদের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের সব আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুধু তারা নিজেদের অপরাধের বিষয়টি স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন। তারা প্রাণভিক্ষার আবেদন না করলে রায় কার্যকরের ব্যবস্থা নেবে কারা কর্তৃপক্ষ। এর পরই নিয়ম অনুযায়ী নির্বাহী আদেশের ফাইল তৈরি করে পাঠানো হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেই আদেশের ফাইলে স্বাক্ষর করার পরই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে। প্রাণভিক্ষার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাননি সাকা-মুজাহিদ :সূত্র জানায়, শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবীর, জেলার নেছার আলমসহ চার কারা কর্মকর্তা কনডেম সেলে গিয়ে সাকা ও মুজাহিদের কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদনের ব্যাপারে জানতে চান। এ সময় তারা দু'জনই জানান, আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা করে সিদ্ধান্ত জানাবেন। পরে কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, এ ব্যাপারে আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ নেই। এর পরই সাকা বলেন, 'পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে চাই।' উত্তরে কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, 'প্রাণভিক্ষার সিদ্ধান্ত দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের নিজ থেকেই নিতে হবে। এ ব্যাপারে পরিবারের সদস্যদের দেখা করার সুযোগ নেই।' এর পরই কিছুটা উচ্চবাচ্য করে সাকা চৌধুরী বলেন, 'এমন পরিস্থিতিতে এর আগে আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়েছিল।' কারা কর্মকর্তারা বলেন, 'আগে সেই সুযোগ দেওয়া হলেও এবার তা হচ্ছে না।' কারা সূত্র আরও জানায়, বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে সাকা ও মুজাহিদের রায় পড়ে শোনানো হয়। এ সময় সাকা কনডেম সেলে (রজনীগন্ধা) মাথা নিচু করে ছিলেন। আর মুজাহিদ কনডেম সেলের লোহার শিক ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। রায় শোনার সময় দু'জনই চুপচাপ ছিলেন। কনডেম সেলের পাশে বসানো হয়েছে সিসিটিভি :কারা সূত্র জানায়, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলের (রজনীগন্ধা) কাছাকাছি দুটি কক্ষে সাকা ও মুজাহিদ বন্দি রয়েছেন। কনডেম সেলের পাশে লাগানো হয়েছে সিসিটিভি। আশপাশের নিরাপত্তাও বাড়ানো হয়েছে। কারাগারে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে ফাঁসির মঞ্চ। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে দুটি ফাঁসির মঞ্চ থাকলেও এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত একই মঞ্চে দণ্ড কার্যকর করা হবে। সরকারের নির্বাহী আদেশের পর যাতে দুই ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা সম্ভব হয়, সেভাবেই সব আয়োজন সম্পন্ন হচ্ছে। ফাঁসির মঞ্চের নতুন শামিয়ানা টানানো হয়েছে। সাকা-মুজাহিদের নিরাপত্তায় কনডেম সেলে তিন শিফটে তিনজন করে কারারক্ষী দায়িত্ব পালন করছেন। সাক্ষাতের সুযোগ না পেয়ে ফিরে গেলেন সাকার দুই পুত্র ও আইনজীবী :সাকা চৌধুরীর সাক্ষাৎ পেতে আবেদন নিয়ে গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে কারা ফটকে যান তার দুই আইনজীবী অ্যাডভোকেট হুজ্জাতুল ইসলাম ফেসানী ও অ্যাডভোকেট জাকারিয়া ইউনূছ। বিকেল ৫টা পর্যন্ত দুই আইনজীবী কারা ফটকে থাকলেও কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে না পেরে ফিরে গেছেন। কারা ফটকে হুজ্জাতুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বৃহস্পতিবার সাকার স্বজনরা কারাগারে তার সঙ্গে দেখার করার পর তিনি আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চেয়েছেন। তাই আমরা আবেদন নিয়ে কারা ফটকে যাই। তবে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও কারও সঙ্গে দেখা করতে পারিনি। এছাড়া রাত সাড়ে ৯টার দিকে কারা ফটকে যান সাকার দুই ছেলে ফয়েজ কাদের চৌধুরী, হুম্মাম কাদের চৌধুরীসহ পাঁচজন। ভেতরে যাওয়ার অনুমতি না পাওয়ায় কিছু সময় তারা ফিরে যান। এ সময় সাকার ছেলে হুম্মাম কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ''বৃহস্পতিবার আমরা বাবার সঙ্গে দেখা করেছিলাম ওইটা ছিল 'ক্যাজুয়াল ভিজিট'। বাবা ক্ষমা চাইবেন কি চাইবেন না সে বিষয়ে কিছু বলেননি। শুধু বলেন, আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সিদ্ধান্ত নেবেন। যেহেতু বাবা একটা বড় সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন, যার বিষয়ে আমরাও জানি না। তাই আমরা এসেছি, বাবা কী চিন্তা করছেন, তা জানতে।'' সাকা-মুজাহিদের মেডিকেল চেকআপ :বৃহস্পতিবার রাতে সাকা চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মেডিকেল চেকআপ সম্পন্ন হয়েছে। দু'জন কারা চিকিৎসক তাদের শারীরিক পরীক্ষা সম্পন্ন করেন। কারা সূত্র জানায়, সাকা-মুজাহিদ সুস্থ আছেন। বড় ধরনের কোনো শারীরিক সমস্যা ধরা পড়েনি। রাতে যা খেলেন সাকা-মুজাহিদ :সাদা ভাতের সঙ্গে গরু ও মুরগির মাংসসহ চার পদের তরকারি দিয়ে রাতের খাবার খেয়েছেন সাকা ও মুজাহিদ। তাদের খাবারের মেন্যুতে গরু ও মুরগির মাংস ছাড়াও ছিল রুই মাছ এবং সবজি। শুক্রবার রাত ৮টা ১০ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলে দু'জনের পাশাপাশি কক্ষে এ খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তারা খাবার খান। কারাগারের পক্ষ থেকে তাদের জন্য এই 'বিশেষ খাবারের' ব্যবস্থা করা হয়েছে। দিনভর অপেক্ষা :শুক্রবার সকাল থেকেই পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দীন রোডের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটকে কয়েকশ' গণমাধ্যম কর্মী উপস্থিত ছিলেন। কারাগারের আশপাশের এলাকায় ছিল পুলিশ, র‌্যাব ও কারারক্ষীদের সতর্ক পাহারা। কারা ফটকের পাশে প্রস্তুত ছিল পুলিশের আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি)। সন্ধ্যার পর ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। কারাগারের আশপাশের কয়েকটি সড়কে যান চলাচলও সীমিত ছিল। এ ছাড়া কয়েক দফায় কারাগারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করেছেন। আজ মুজাহিদের পরিবারের সংবাদ সম্মেলন :যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের পরিবারের পক্ষ থেকে আজ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে। মুজাহিদের ছেলে আলী আহমেদ মাবরুর সমকালকে জানান, আমাদের পক্ষের আইনজীবীরা ১৯ নভেম্বর একটি লিখিত আবেদন করেছিলেন বাবার সঙ্গে দেখা করার জন্য। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় কারা কর্তৃপক্ষের জানানোর কথা ছিল; কিন্তু তারা জানাননি। সার্বিক বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের অডিটোরিয়ামে শনিবার দুপুর ১২টায় পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হবে। ২১ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/পিবি/পিপি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে