শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮, ০৯:৪০:৩০

বাংলাদেশ নিয়ে যা ইচ্ছা তাই বলা যায়?

বাংলাদেশ নিয়ে যা ইচ্ছা তাই বলা যায়?

শেখ আদনান ফাহাদ : বাংলাদেশ নিয়ে যা ইচ্ছা বলা যায়? বাংলাদেশ নিয়ে যেভাবে ইচ্ছা, নিউজ করা যায়? গত কদিনে সেনাবাহিনী প্রধান, ভারতীয় এক মন্ত্রী, আর আনন্দবাজার পত্রিকার কথাবার্তা দেখে তো তাই মনে হচ্ছে।

ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধানের দাবি, চীন ও পাকিস্তানের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ থেকে লোকজন আসামে যাচ্ছে! বিতর্কিত আনন্দবাজার পত্রিকা অমর একুশের নিউজ কাভার করতে গিয়ে অত্যন্ত বাজে উদ্দেশ্য নিয়ে মুসলমান নারীর হিজাবকে টেনে নিয়ে এসেছে।

পশ্চিমবঙ্গের এক মন্ত্রী বলেছেন, ২০/২৫ বছর পরে বাংলাদেশ আর পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে কোনো সীমানা থাকবে না! ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান বিপিন রাওয়াত দিল্লীতে সীমান্ত সুরক্ষা সংক্রান্ত এক সম্মেলনে বলেছেন, চীনের সহায়তায় পাকিস্তান ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যসমূহে প্রক্সি ওয়ার চালাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে এর অংশ হিসেবে মুসলমানদেরকে আসামে প্রেরণ করা হচ্ছে!

চীন ও পাকিস্তান ভারতের সাথে কী করছে, সেটি তাদের বিষয়। কিন্তু ভারতের সেনাবাহিনী প্রধান যখন আমার দেশের নাম নেতিবাচকভাবে উচ্চারণ করেন তখন একজন গর্বিত নাগরিক হিসেবে আমাদের সম্মানে লাগে। যদিও এত বড় অভিযোগের পর এখন পর্যন্ত আমাদের স্বরাষ্ট্র কিংবা পররাষ্ট্র  মন্ত্রণালয় থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

পাকিস্তানের সাথে মিলে ভারতের বিরুদ্ধে কাজ করছে বাংলাদেশ? এত বড় অভিযোগ! তাও ভারতের সেনাবাহিনী প্রধান বলছেন এই কথা! তাও কোন সময় বলছেন? যখন গত ৯ বছর ধরে বাংলাদেশের সরকার পরিচালনা করছেন স্বাধীন বাংলাদেশের রুপকার, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা; শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্ব মানবতার জননী হিসেবে খেতাব পাওয়া শেখ হাসিনা।

এই ৯ বছরে বাংলাদেশ যেমন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে গেছে অনেক, ভারতের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায়ও বাংলাদেশ ঐতিহাসিক অবদান রেখেছে। সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোতে বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা রুখতে বাংলাদেশের সাহসী ও দক্ষ নিরাপত্তা বাহিনীগুলো ভারতের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।

টাইমস অব ইন্ডিয়া পত্রিকায় গত ২২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয়  ‘Bangladesh influx part of Pakistan’s proxy war with China aid: Army chief’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন। সেখানে লেখা হয়েছে, ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধান বিপিন রাওয়াত বলেছেন,  চীন, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ পরিকল্পনা করে আসামসহ অন্যান্য রাজ্যে লোকজন পাঠাচ্ছে।

আসামে মুসলমানদের সংখ্যা বাড়ছে মর্মে দাবি করে ভারতের সেনাবাহিনী প্রধান এই দোষ চাপিয়েছেন বাংলাদেশের উপর। রাজনৈতিক দল অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট আসাম ইউনিটের লোকসংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে। আসামে হিন্দুর সংখ্যা বাড়ল না মুসলমানের সংখ্যা বাড়ল, সেটা একান্তই ভারতের নিজস্ব ব্যাপার। নিজেদের অশিক্ষা আর অসচেতনতাকে না দোষ দিয়ে বাংলাদেশেকে দায়ী করলেন কেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান?

তিনি দাবি করেছেন, ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তান এবং চীন উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে ছায়াযুদ্ধ পরিচালনা করছে। এই দুই সামরিক শক্তিধর রাষ্ট্র এই রাজ্যসমূহকে অস্থিতিশীল করে দখল নিতে চায়। সমাধানের একটাই পথ, সমস্যাকে চিহ্নিত করতে হবে এবং এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের দিকে নজর দিতে হবে’।

জেনারেল রাওয়াত বলেছেন, মুসলমানদের সংখ্যাধিক্য আছে এমন জেলার সংখ্যা আসামে বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ থেকে নয় এ। এই জনসংখ্যা প্রবণতাকে এখন পরিবর্তন করার কোনো সুযোগ নেই। তবে সবাইকে একত্রীকরণ করতে হবে। হিন্দু-মুসলমানদের ভেতরের দূরত্বকে কমাতে ভারত সরকার যে কোনো ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে পারে; আমরাও এমনটাই চাই।

ভারত ইতোমধ্যে পৃথিবীতে সাম্প্রদায়িক ও সহিংস রাষ্ট্রের তালিকায় চার নম্বরে অবস্থান করছে। এই তালিকায় বাংলাদেশের নামই নেই। যাইহোক, আসামে কেন ‘বাংলাদেশী মুসলমানগণ’ প্রবেশ (!) করছে, তার খুবই হাস্যকর এক যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধান। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশে থাকার জায়গা কমে যাচ্ছে। তাছাড়া অতি বন্যাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাংলাদেশ থেকে আসামে লোকজন চলে যাচ্ছে’।

ভারতের সেনাবাহিনী প্রধান কি তাহলে বিশ্ব অর্থনীতির খবরগুলো জানেন না? এমন তো হওয়ার কথা না। এত বড় সেনাবাহিনীর উনি প্রধান ব্যক্তি। বাংলাদেশ থেকে কী কারণে মূসলমানেরা ভারতে যাবে? ভারত মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে অনিরাপদ রাষ্ট্রগুলোর একটি। শুধু মুসলমান নয়, নিম্ন বর্ণের হিন্দুদের জন্যও ভারতের কোনো কোনো রাজ্য যেন এক দোযখের নাম।

সামাজিক নানা উন্নয়নসূচকেও ভারত থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ভালো।  ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘ইনক্লোসিভ ইকোনমিক গ্রোথ রেট’ রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ভারত থেকে ২৪ ধাপ উপরে। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষের বসবাস ভারতে। কোটি কোটি মানুষ এখনো টয়লেট ব্যবহার করে না। নানাবিধ সামাজিক উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ভারতের আগে। বলিউড ক্রিকেট আর পরমাণু অস্ত্র দিয়ে পুরো ভারতের অর্থনীতির অবস্থান এবং অবস্থা বোঝা যাবে না।

শুধু সাম্প্রদায়িকতা নয়, পৃথিবীর সবচেয়ে বিপদজনক রাষ্ট্রের তালিকায়ও ভারতের অবস্থান উপরের দিকে। ভারতে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এসে মুসলমানদেরকে সাধারণ হুমকি হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু ভারতের প্রায় প্রতিটি রাজ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা আছে এবং সেগুলোতে মুসলমানদের অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে। বাংলাদেশ থেকে মুসলমানেরা গিয়ে আসামসহ অন্যান্য রাজ্যে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছে বলে ভারতের সেনাবাহিনী প্রধান যে দাবি করেছেন সেটি মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।

বাংলাদেশ থেকে মুসলমানেরা ভারতের আসামে যাচ্ছে না। বরং বাংলাদেশের হিন্দুদের একটা অংশ আসামসহ নানা রাজ্যে যাচ্ছে। বাংলাদেশের হিন্দুরা যেসব কারণ দেখিয়ে ভারতে চলে যাচ্ছে, তার প্রায় সবগুলো মুসলমানদের সাথেও ঘটে। জমি দখল, বাড়ি দখল, অত্যাচার, নির্যাতন মুসলমানদের উপরও বাংলাদেশে হচ্ছে। সামাজিকভাবে দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার চলছে এখানে। অনেক মুসলমান চরম দারিদ্রের মধ্যে আছে আবার অনেক হিন্দু খুব ভালো অবস্থানে এখানে আছে।

প্রশাসন, ব্যবসা বাণিজ্যসহ নানা ক্ষেত্রে হিন্দুদের অবস্থান অনেক মুসলমান থেকে ভালো। হিন্দুদের উপর আক্রমণ হয়, মুসলমানদের উপরও হয়; হিন্দু নারী ধর্ষিত হয়, মুসলমান নারীও ধর্ষিত হয়। হিন্দুরা বরং আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলে অধিক নিরাপদ অবস্থায় থাকে। হিন্দুদের মনে ভয় ঢুকিয়ে, তাদের আত্মবিশ্বাস ধ্বংস করার রাজনীতি করছে ভারতের বিজেপি আর বাংলাদেশের জামাত। এদের পূর্বসূরিরাই ১৯৪৭ সালে হিন্দুদের জন্য ভারত আর মুসলমানদের জন্য পাকিস্তান বানাতে চেয়েছিলেন।

একমাত্র আমাদের পূর্বপুরুষরা বাঙালির জন্য আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র চেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে ভারতের হিন্দু এলিট আর পাকিস্তানের মুসলমান এলিটদের যোগসাজশ এর কথা বলা আছে। ‘উলফাঃ সন্ত্রাসেই সর্বনাশ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় ছাপা হয় ২০১৫ সালের ১৫ মে।

এই প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, গত শতাব্দীর শেষ দিকে ভারতের আসাম রাজ্যের উলফা নামের সংগঠনটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে রীতিমতো কুখ্যাতি অর্জন করে। বাংলাদেশেও পাকিস্তানের আইএসআই-এর সহযোগিতায় তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারিত ছিল। বর্তমান সরকারের উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় তা অনেকাংশে দমন করা সম্ভব হয়েছে’।

ভারতের সেনাবাহিনী প্রধানের কাছে কি পাকিস্তান আর বাংলাদেশের মধ্যে কোনো পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় না? ভারতের সেনাবাহিনী প্রধান কি জানেন না, পাকিস্তানকে পরাজিত করে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে? ভারতের সেনাবাহিনী প্রধান কি জানেন না, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ পেয়েছে স্বাধীনতা আর ভারত পেয়েছে এই অঞ্চলে তার একমাত্র নিরাপদ, বন্ধু প্রতিবেশী।

আমাদের ৩০ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছে সেই স্বাধীনতার জন্য, ভারতের অনেক সেনাও মারা গেছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সে যুদ্ধে। ৩০ লাখ মানুষের আত্মাহুতির সুফল কি শুধু আমরাই পাচ্ছি? ভারত পাচ্ছে না? ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধান কী করে নাপাক পাকিস্তানীদের সাথে আমাদের এক করে দেখলেন?

জনকণ্ঠের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে আশ্রয় পাওয়া সংগঠন এবং এসব সংগঠনের নেতারা হলেন ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট অব বোরোল্যান্ড (এনডিএফবি) এর চেয়ারম্যান রঞ্জন দাহমারী, কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন (কেএলও) ও এর চেয়ারম্যান জীবন সিংহ, ন্যাশনাল লিবারেশন অব ত্রিপুরা (এনএলএফটি) ও এর চেয়ারম্যান বিশ্বমোহন দেব বর্মা, অল ত্রিপুরা টাইগার ফোর্স (এটিটিএফ) ও এর চেয়ারম্যান রণজিৎ দেব বর্মাসহ আরও কিছু সংগঠন এবং এর নেতৃবৃন্দ।

এদিকে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সহায়তায় পাকিস্তানের আফগান সীমান্তবর্তী এলাকায় উলফার সদস্যদের নিয়মিত সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। আইএসআইয়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন জইশে মোহাম্মদ, লস্করই তৈয়াবা, হিজবুত তাহরীর, হরকাতুল জিহাদের মতো উগ্র ধর্মান্ধ জঙ্গীগোষ্ঠীর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এছাড়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠনগুলোসহ শ্রীলঙ্কার তামিল টাইগারদের সঙ্গেও।

এই সংগঠনটির সঙ্গে উলফার সম্পর্কের গভীরতার প্রমাণ পাওয়া যায় বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে কক্সবাজারে আকস্মিকভাবে ধরা পড়া অস্ত্রের বিশাল চালানটি দেখে। উলফাকে দেয়ার জন্য তামিল টাইগারদের নিয়ে আসা ওই চালানে ৫০০টি ছিল একে-৪৭, ৫০টি রকেট লঞ্চার এবং ২ হাজার পিস্তল’।

উপরে উল্লেখিত বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারা একজনও মুসলমান নন। আইএসআই যেমন ভারতের শত্রু, তেমনি আমাদেরও শত্রু। তাইতো শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখাচ্ছে। মুসলমান জঙ্গিদের বিরুদ্ধেও শেখ হাসিনার সরকারের কঠোর অবস্থান এবং সাফল্য সারা বিশ্বে প্রশংসা কুড়িয়েছে। ভারতের প্রতি বাংলাদেশের এই মহানুভবতায় ধন্যবাদ না জানিয়ে, কৃতজ্ঞতা না জানিয়ে উল্টো অন্যায়ভাবে বাংলাদেশকে জড়িয়ে কথা বলা হচ্ছে।

তাহলে মুখে মুখে এত বন্ধুত্বের কথা বলার কী মানে থাকতে পারে? রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ শুরুতে ভারতের সমর্থন পায়নি, উল্টো ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মিয়ানমারে গিয়ে গণহত্যাকারী অং সান সুচির প্রতি সমর্থন জানিয়ে এসেছেন। তিস্তাসহ ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা বাংলাদেশ অদ্যাবধি পাচ্ছে না। পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে ভারতের সেনা মারা যাচ্ছে প্রায় প্রতিদিন। অথচ এই সীমান্তে সমস্ত আইন লঙ্ঘন করে ভারতের বিএসএফ নিরীহ বাংলাদেশী হত্যা করে চলেছে। চোরাকারবারি তো একা বাংলাদেশীরা করেনা, ভারতের অংশে বিশাল সিন্ডিকেট রয়েছে চোরাকারবারের।

সিপিডির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম রেমিট্যান্স খাত। ভারতের নানা পণ্যের বিশাল বাজার বাংলাদেশে। এদেশের ঘরে ঘরে ভারতের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা অতি পরিচিত। বাংলাদেশের হাজার হাজার মানুষ ভারতে চিকিৎসা নিতে যায়, ঘুরতে যায়, শপিং করতে যায়। এদের দিয়ে আসা টাকা নিতে ভারতের অসুবিধা হয় না। তাহলে অযথা পাকিস্তানের সাথে কেন আমাদের তুলনা? ভারতের আসাম, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গসহ নানা রাজ্যের লোকজনের সাথে বাংলাদেশের মানুষের রয়েছে আত্মার সম্পর্ক।

৪৭ সালের ভূত যেন আর আমাদের মাঝে ঘৃণা ছড়াতে না পারে সেজন্য সকলকে কাজ করতে হবে। কিন্তু ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক নম্বর ব্যক্তি যখন এত বড় বদনাম দিয়ে দেন, তখন কি বন্ধুত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হয় না? ভাষা দিবস পালন করতে যশোরের বেনাপোল সীমান্তে বাংলাদেশ ও ভারতের বাঙালিরা এক মিলন মেলার আয়োজন করেছিল। সেখানে পশ্চিমবঙ্গের এক মন্ত্রী বলেছেন, ২০/২৫ বছর পর নাকি দুই বাংলা এক হয়ে যাবে! দুই বাংলা এক রেখে বাঙালির পৃথক রাষ্ট্র আমরা চেয়েছিলাম ১৯৪৭ সালে।

পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু জমিদার আর রাজনৈতিক এলিটগণ পাকিস্তানের মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সাথে মিলে বাঙালির সে রাষ্ট্র হতে দেয়নি। আজ এত বছর পর একজন রাজ্য লেভেলের মন্ত্রী কী ভেবে এমন কথা বললেন, তা নিয়ে ভাবছি। কেন্দ্র সরকার কি শুনেছে এই মন্ত্রীর কথা?  এদিকে আনন্দবাজার পত্রিকা অমর একুশের প্রতিবেদনে লিখতে গিয়ে, অত্যন্ত বাজে উদেশ্য নিয়ে হিজাবকে টেনে নিয়ে এসেছে। ‘একুশের ঢাকায় কোন আবরণ নেই হিজাবের’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।  হিন্দু নারী যেমন শাখা পড়ে হাতে, কপালে সিঁদুর দেয়, মুসলমান নারী তেমন মাথায় হিজাব পড়ে। নিছকই ধর্মীয় এবং পোশাকি বিষয়।

আনন্দবাজার অত্যন্ত কৌশলে এমন শিরোনাম করেছে। বাংলাদেশ ঐতিহাসিকভাবেই মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল। উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য এ অঞ্চলের লাখ লাখ নিম্নবর্ণের হিন্দু ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছিল। বাঙালি সংস্কৃতি আর আরবের ইসলাম মিলে বাঙালি মুসলমান নামের এক অত্যন্ত প্রগতিশীল, শান্তিপ্রিয় এবং প্রতিবাদী সম্প্রদায়ের জন্ম দিয়েছে। ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে প্রতিটি প্রগতিশীল আন্দোলনে বাঙালি মুসলমানগণ অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়েছে, অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে জিহাদ করেছে।

আনন্দবাজার কি আমাদের বাঙালি মুসলমান সমাজকে প্রগতির এই ধারা থেকে বঞ্চিত করতে চায়? হিজাব কে পড়ে না? আমাদের প্রধানমন্ত্রী পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়েন, মাথায় ঘোমটা দেন। আমাদের মা-বোনেরা শহীদদের জন্য দুই হাত তোলে আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করেন। আনন্দবাজার অত্যন্ত কৌশলে এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরকে ইতিহাসের আলোকিত ধারাবাহিকতা থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়। আমাদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করতে চায়। অত্যন্ত কৌশলে প্রগতির সাথে ইসলামের সংঘর্ষ সৃষ্টি করা হচ্ছে। ঢাকা টাইমস।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

বিঃদ্র : এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। এমটিনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।

এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে