সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮, ১২:৩৯:০৯

হাইকোর্টে শুনানি শেষ হলেও জামিন প্রশ্নে আদেশ দেননি

হাইকোর্টে শুনানি শেষ হলেও জামিন প্রশ্নে আদেশ দেননি

নিউজ ডেস্ক : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদনের ওপর শুনানি শেষ হয়েছে। গতকাল হাইকোর্ট জামিন প্রশ্নে আদেশ দেননি। আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। শুনানির সময় খালেদা জিয়ার পক্ষে আরো উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী রফিক-উল হক, এ এফ হাসান আরিফ, জমিরউদ্দিন সরকার, মওদুদ আহমদ, জয়নুল আবেদীন প্রমুখ।

শুনানি শেষে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ উভয়পক্ষের আইনজীবীদের বলেছেন বিচারিক আদালতের নথি আসার পর জামিন প্রশ্নে আদেশ দেয়া হবে। গতকাল শুনানির শুরুতে এজলাসে অতিরিক্ত ভিড় ও হট্টগোলের কারণে উষ্মা প্রকাশ করেন হাইকোর্টের ওই বেঞ্চ।

একপর্যায়ে সিনিয়র আইনজীবীদের পরিস্থিতি ঠিক করতে বলে কিছুক্ষণের জন্য এজলাস ত্যাগ করেন বিচারপতিগণ। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় কারাদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার করা আপিল গত বৃহস্পতিবার শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্টের এই বেঞ্চ।

ওই দিন আদালত এক আদেশে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে নিম্ন আদালতের দেয়া অর্থদণ্ডের আদেশও স্থগিত করেন। পাশাপাশি খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদনের শুনানির জন্য রোববার দিন ঠিক করে এ মামলার নিম্ন আদালতের নথি তলব করেন আদালত। যা আদেশের ১৫ দিনের মধ্যে দাখিল করতে বলা হয়।

গত ৮ই ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ে খালেদা জিয়াকে ৫ বছর এবং অন্য আসামিদের ১০ বছর কারাদণ্ড দেন ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আখতারুজ্জামান। ওই রায়ের অনুলিপি হাতে পাওয়ার পর গত ২০শে ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।

১২২৩ পৃষ্ঠার এই আপিল  আবেদনে ৪২টি যুক্তি (গ্রাউন্ড) দেখিয়ে খালেদা জিয়ার খালাসের আর্জি জানান তার আইনজীবীরা। আর ৮৮০ পৃষ্ঠার জামিন আবেদনের মধ্যে ৪৮ পৃষ্ঠাজুড়ে ৩২টি গ্রাউন্ডে খালেদার জামিন চাওয়া হয়।

গতকাল শুনানির শুরুতে খালেদার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী উচ্চ আদালতের বিভিন্ন নজির উপস্থাপন করে খালেদা জিয়ার বয়স, স্বাস্থ্যগত সমস্যা ও স্বল্প সাজার বিষয়টি উল্লেখ করে তার জামিনের আবেদন করেন। তিনি বলেন, এ মামলায় পাঁচ বছরের যে সাজা দেয়া হয়েছে, তা অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত সাজা।

সংক্ষিপ্ত সাজায় জামিন দেয়ার ক্ষেত্রে এই আদালতের রীতি এবং ক্ষমতা আছে। তাছাড়া খালেদা জিয়া একজন বয়স্ক নারী। তার শারীরিক সমস্যাও রয়েছে। এসব বিবেচনায় আমরা তার জামিন চাচ্ছি। এ জে মোহাম্মদ আলীর শুনানি শেষে দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান শুনানি শুরু করেন।

তিনি বলেন, সংক্ষিপ্ত সাজায় জামিন পেতে পারেন- এটি কোনো যুক্তি হতে পারে না। তিনি (খালেদা জিয়া) অসুস্থ বলে তারা (খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা) যুক্তি দেখালেও এর সমর্থনে তারা কোনো মেডিকেল সার্টিফিকেট বা কাগজপত্র দাখিল করেনি।

তিনি বলেন, উনারা (খালেদা জিয়ার আইনজীবী) অনেক কথাই বলছেন, কিন্তু ওনাদের উচিত ছিল খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত অবস্থার বিষয়ে কাগজপত্র আদালতে দাখিল করা। ওনাদের আর্জিকে সমর্থন করার মতো কোনো নথিপত্র নেই। তাই, এখানে জামিনেরও কোনো  গ্রাউন্ড নেই।

এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানিতে বলেন, এই মামলা গুরুত্ব পাচ্ছে এ কারণে যে, এটিই একমাত্র মামলা যেখানে এতিমদের টাকা খোয়া গেছে। টাকাটা এসেছে। তা ফান্ডে গিয়েছে। সেখান থেকে আবার উইথ ড্র করা হয়েছে। ৫টি চেক দিয়ে টাকা তোলা হয়েছে। পরে টাকাটা নানা হাত ঘুরে ওইভাবেই চলে গেছে।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ঘটনাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, এতিমের টাকা চলে গেছে। সাধারণ কোনো লোক যদি করতো তাহলে কথা ছিল। এমন একটা সময় এটি হয়েছে যখন তিনি (খালেদা জিয়া) সরকার প্রধান ছিলেন। শুনানিতে এই মামলার বিভিন্ন বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের উচ্চ আদালতে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

খালেদা জিয়ার জামিনের বিরোধিতা করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আপিলের শুনানি শুরুর আর্জি জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, এই মামলাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য এমন কোনো পদক্ষেপ নেই যা তারা করেন নি।

বিচারিক আদালতে এই মামলার রায় উদ্ধৃত করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, মামলা দায়েরের পর থেকে সাড়ে ৯ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। খালেদা জিয়া ১০৯ বার সময় নিয়েছেন। উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন ২৬ বার। এখন আজকে যদি জামিন দিয়ে দেন তাহলে এই আপিলের শুনানি আর শুরু হবে না। তাই, জামিন না দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আপিল শুনানি শুরু করা হোক।

এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদের জনতা টাওয়ার মামলায় সাজা ও দীর্ঘ সময় পর জামিন পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন। এছাড়া দুর্নীতির দায়ে ভারতের বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদবের সাজার বিষয়টিও উল্লেখ করেন মাহবুবে আলম।

এ সময় আদালত বলেন, এটা আমরা দেখে কি করবো? অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, জনতা টাওয়ার মামলায় এরশাদ ৫ বছর কারাগারে ছিলেন। সাড়ে ৩ বছর পর তিনি জামিন পান।

আদালত বলেন, কে কতদিন জেলে ছিলেন। কে কতদিন সাজা খাটলেন, এটি টকশোর বিষয় হতে পারে। এখানে বেইল প্রেয়ারে কোনো অর্ডার আছে কি-না এটি বিষয় হতে পারে। আদালত বলেন, জনতা টাওয়ার মামলায় অন মেরিট কি আছে? সেখানে কি বেইল দেয়া হয়েছিল? জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, না বেইলই চাওয়া হয়নি।

এ পর্যায়ে আবারো এ জে মোহাম্মদ আলী খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি  করেন। সংক্ষিপ্ত শুনানিতে এ জে মোহাম্মদ আলী আদালতের কাছে খালেদা জিয়ার জামিনের আর্জি জানান। শুনানি শেষে হাইকোর্ট এই মামলার বিচারিক আদালতের নথি আসার পর খালেদা জিয়ার জামিন প্রশ্নে আদেশ দেয়া হবে বলে উভয়পক্ষের আইনজীবীদের জানান।

এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে