শনিবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৫, ০৯:২৫:১৮

রেকর্ডের পথে জল্লাদ শাহজাহান

রেকর্ডের পথে জল্লাদ শাহজাহান

নিউজ ডেস্ক : যুদ্ধাপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের প্রাণভিক্ষার আবেদন রাষ্ট্রপ্রতি মঞ্জুর না করলে যেকোনো দিন হতে পারে তাদের ফাঁসি। আর ফাঁসি কার্যকরের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ‘খ্যাতনামা’ সাত জল্লাদকে। এদের মধ্যে প্রধান জল্লাদের কাজটি করবেন মো. শাহজাহান ভূঁইয়া। অন্য জল্লাদরা হলেন ইকবাল, মাসুদ, আবুল, মোক্তার, রাজু ও হযরত। শনিবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত ‘জল্লাদ শাহজাহান’ ৪৫ জনের ফাঁসি কার্যকরে জল্লাদের কাজ করেছেন। এ তালিকায় যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামানও রয়েছে। এদিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারগারের পুরাতন মঞ্চটিতেই দুটি ফাঁসিমঞ্চের প্রস্তুত রাখা হয়েছে দুই যুদ্ধাপরাধীর সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকরের জন্য। এদুজনের ফাঁসি কার্যকর করার পর হাফ সেঞ্চরু করতে আর মাত্র তিন জন প্রয়োজন। তাহলেই রেকর্ড হবে জল্লাদ শাহজাহানের। দীর্ঘ ৩৬ বছর ধরে কারাবন্দি অবিবাহিত শাহজানান এ পর্যন্ত ৪৫ জনের ফাঁসির দণ্ডে জল্লাদের কাজ করেছেন। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য ফাঁসিগুলো হলো : ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামি বজলুল হুদা, আর্টিলারি মুহিউদ্দিন, সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও ল্যান্সার মহিউদ্দিন আহমেদ। ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ কাশিমপুর ও ময়মনসিংহে জঙ্গিনেতা সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই, আতাউর রহমান সানী, আবদুল আউয়াল, খালেদ সাইফুল্লাহ ও ইফতেখার মামুন। ২০০৪ সালের ১০ মে খুলনা জেলা কারাগারে এরশাদ শিকদারের ফাঁসি। ২০০৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর রংপুর জেলা কারাগারে ইয়াসমিন হত্যা মামলার আসামি এএসআই মইনুল হক ও আবদুস সাত্তারের ফাঁসি। উল্লেখ্য : ১৯৭৯ সালে আটক হওয়ার আগে ও পরে তার নামে সর্বমোট ৩৬টি মামলা হয়। এর মধ্যে একটি অস্ত্র মামলা, একটি ডাকাতি মামলা এবং ৩৪টি হত্যা মামলা। ১৯৮৮ সালে তার যাবজ্জীবন সাজা হয়। এরপর ১৯৯৫ সালে তার ১৪৩ বছরের সাজা হয়। পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ১০০ বছর মাপ হয়ে ৪৩ বছরের জেল হয়। জেল থেকে বের হওয়ার তারিখ শাহজাহানের জেল কার্ডের ওপর লেখা আছে, ‘ডেট অব রিলিজ ২০৩৫’। যখন তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পাবেন তখন তার বয়স হবে ৮৫ বছর। কী লাভ হবে তখন কারাগার থেকে বের হয়ে? এ জন্য তিনি সিদ্ধান্ত নেন জল্লাদ খাতায় নাম লেখাতে। তিনি জানতেন একটা ফাঁসি দিলে দুই মাস চার দিনের সাজা কমে। এভাবে যদি সাজা কিছুটা কমে! জেলারের অনুমতি নিয়ে ১৯৮৯ সালে প্রথম তিনি সহযোগী জল্লাদ হিসেবে গফরগাঁওয়ে নুরুল ইসলামকে ফাঁসি দেন। ওটাই ছিল শাহজাহানের জীবনে কারাগারে কাউকে প্রথম ফাঁসি দেওয়া। তার যোগ্যতা দেখে আট বছর পর ১৯৯৭ সালে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে প্রধান জল্লাদের আসন প্রদান করে। আর প্রধান জল্লাদ হওয়ার পর ডেইজি হত্যা মামলার আসামি হাসানকে প্রথম ফাঁসি দেন তিনি। ১৯৮৯ সালে প্রথম সহযোগী জল্লাদ হিসেবে গফরগাঁওয়ে নুরুল ইসলামকে ফাঁসি দেন শাহজাহান। ওটাই ছিল শাহজাহানের জীবনে কারাগারে কাউকে প্রথম ফাঁসি দেয়া। আট বছর পর ১৯৯৭ সালে তিনি প্রধান জল্লাদ হন। কারা সূত্রে জানা যায়, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তদের রায় কার্যকর করা হয় যেসব দেশে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ১৯৭১ সালের পর এখন পর্যন্ত সাড়ে চার শতাধিক মানুষকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এক হাজারের বেশি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদি কারাগারে রয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন শতাধিক। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ছাড়াও দেশের আরো ১৪টি কারাগারে ফাঁসির মঞ্চ রয়েছে। ফাঁসি দেওয়ার জন্য প্রাক্তন দুই রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও এইচ এম এরশাদের আমলে ম্যানিলা থেকে ১০ হাজার ফাঁসির রশি আমদানি করা হয়। ওই রশি দিয়েই এ দেশের ফাঁসির কার্যক্রম চলছে। সবশেষ জল্লাদ শাহজাহান বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল তিনি তাদের ফাঁসি দিয়েছেন। তিনি আশা করেছিলেন ‘শেখের মেয়ে প্রধানমন্ত্রী, সে তার দিকে একটু সুনজর দেবেন। কিন্তু কে রাখে কার খবর? তার কথা কেউ বিবেচনা করেনি।’ তিনি বলেন, নেলসন ম্যান্ডেলা বেশি সময় জেলখানায় কাটিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিলেন। আর এখন তিনি (শাহজাহান) জীবনের ৩৬টি বছর কারাগারে কাটিয়ে দিলেন। বাইরে মানুষ হত্যা করলে জেল হয়, ফাঁসি হয়। আর এখানে এত মানুষ হত্যা করছি, কিন্তু কিছুই হয় না। এ জন্য শাহজাহান মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। কারাগারে তার ভালো লাগে না। এত কিছুর পরও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর করতে তিনি প্রস্তুত আছেন। আর এ জন্য তিনি প্রয়োজনীয় মহড়াও সেরে নিয়েছেন। ২১ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে