সোমবার, ০৫ মার্চ, ২০১৮, ০৯:০৩:৩৩

জাফর ইকবালের ওপর হামলা: এবার যেসব তথ্য জানা গেলো

জাফর ইকবালের ওপর হামলা: এবার যেসব তথ্য জানা গেলো

নিউজ ডেস্ক: ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলাকারী ফয়জুর হাসানের পুরো পরিবারই রহস্যে ঘেরা। ফয়জুর সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার জগদল ইউনিয়নের কলিয়ার কাপন গ্রামের হাফিজ আতিকুর রহমানের ছেলে। জাফর ইকবালের ওপর হামলা: এবার যেসব তথ্য জানা গেলো  তা রহস্যময়। গতকাল সরজমিন কলিয়ার কাপন গিয়ে দেখা যায় , বাড়িতে কেউ নেই। ঘরে তালা ঝুলছে। তার দুই চাচার পরিবারের লোকজন আত্মগোপনে চলে গেছেন। স্থানীয় লোকজন ও স্বজনদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে ফয়জুল হাসান ও তার পরিবারের অনেক তথ্য।

তার বাবা হাফিজ আতিকুর রহমান কওমি মাদরাসার শিক্ষক ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের অনুসারী একজন আলেম। এলাকায় তার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি পরিবার নিয়ে সিলেটে বসবাস ও সেখানে একটি মহিলা মাদরাসায় শিক্ষকতা করছেন। আতিকুর রহমানের তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে তিন নম্বর ফয়জুর। তার বড় দুই ভাই ও ছোট দুই বোন রয়েছে। হামলাকারী ফয়জুর হাসান (১৯) উপজেলার ধল দাখিল মাদরাসা থেকে ২০১৪ সালে এসএসসি পাস করে।

জন্ম সনদ অনুযায়ী তার জন্ম ১৯৯৯ সালের ৫ই জুলাই। বড় ভাই এনামুল হাসান ঢাকার একটি গার্মেন্টে চাকরি করছে। মেজ ভাই আবুল হাসান ৬ মাস হয় কুয়েত প্রবাসী।

এলাকাবাসী জানান, হামলাকারীর দুই চাচা আবদুল জাহার ও আবদুল সাদিক দীর্ঘদিন ধরে কুয়েত প্রবাসী। তারা সেখান থেকে আহলে হাদিস (লা-মাযহাবি)-এর দীক্ষায় দীক্ষিত হন। আবদুল জাহারের ঢাকায়ও বাসাবাড়ি রয়েছে, নিয়মিত তিনি ঢাকায় আসা-যাওয়া করেন। দেশে আহলে হাদিসের মতবাদ প্রচার ও প্রসারে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। এলাকায় এসেও সেই মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে গ্রামের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের সঙ্গে তাদের বিরোধ দেখা দেয়। এলাকাবাসীর বাধার মুখে তাদের মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে না পারলেও তাদের এক ভাই আবদুল কাহার লুলাই ও হামলাকারী ভাতিজা ফয়জুর হাসান তাদের টাকা পয়সার লোভে পড়ে আহলে হাদিসের অনুসারী হয়ে যায়।

চাচাদের মতাদর্শে আহলে হাদিসের অনুসারী হয়েই ফয়জুর বাবার মতাদর্শের কওমি মাদরাসা ছেড়ে ২০১১ সালে ধল সরকারি দাখিল মাদরাসায় অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। ধল গ্রামের এক বাড়িতে লজিং থেকে সেখান থেকে ২০১৪ সালে দাখিল পাস করে। এরপর থেকে সিলেটে থাকতো বলেই জানতো এলাকাবাসী। মাঝে মধ্যে গ্রামের বাড়িতে তার চাচা আহলে হাদিসের অনুসারী আব্দুল কাহার লুলাই মিয়ার বাড়িতে এসে দুয়েকদিন থেকে আবার কোথায় চলে যেত।

সর্বশেষ গত ৩-৪ মাস আগে ফেরিওয়ালা হয়ে এলাকায় এসে লুঙ্গি গামছা বিক্রি করে গেছে। প্রবাসী ভাইদের অনুসারী না হওয়ার কারণে ২০১৫ সালে আরেক ভাই কারী আব্দুল বাতিনকে টাকার বিনিময়ে নাশকতার একটি মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে বলে জানান গ্রামের মুরব্বিরা। কলিয়ার কাপন গ্রামের দিল আমিন বলেন, হামলাকারীর বাবা একজন স্বনামধন্য আলেম ও কোরআনে হাফেজ। উনি দীর্ঘদিন ধরে সিলেটে থাকেন। তার দুই চাচা বিদেশ থাকে দেশে এলে মসজিদে ভিন্নভাবে নামাজ পড়তো। সেসময় আমরা গ্রামবাসী এর প্রতিবাদ করি। তিন চার বছর হয় তার চাচারা দেশে আসলেও এলাকায় আসেনি।

শুনেছি তারা ঢাকায় আসে আবার সেখান থেকে চলে যায়। ফয়জুর কিছুদিন পর পর বাড়িতে আসে। গ্রামের সেবু মিয়া বলেন, তার বাপ একজন আলিম মানুষ, কোরআনে হাফেজ। ইউপি সদস্য ও গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি আব্দুস শীশ বলেন, তাদের পরিবারটি ভালো ছিল। ফয়জুর হাসানের দাদা তার সন্তানদেরকে আহলে সুন্নাতওয়াল জামায়াতের মতাদর্শে লেখাপড়া করিয়েছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার পর প্রবাসী দুই ছেলে এখানে এসে এ মতভেদ সৃষ্টি করেন।

লুৎফুর রহমান চৌধুরী বলেন, ফয়জুর মসজিদে লা-মাযহাবি তরিকায় নামাজ আদায় করতো। আমরা সুন্নি বিধান মতো নামাজ আদায় করি। এবিষয় নিয়ে গ্রামের মুরব্বিরা তাকে সঠিক পন্থায় নামাজ আদায় করার পরামর্শ প্রদান করলেও তারা তা মানেনি। তারা তাদের মতো করে ধর্ম করে যেত। গ্রামে সে ও তার পরিবার স্থায়ী ভাবে থাকে না।

 ঘটনার তিন চারদিন আগে সে বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলো। প্রায় চারমাস আগে সে ফেরিওয়ালার বেশে এসে গ্রামে লুঙ্গি গামছা বিক্রি করে। কলিয়ার কাপন গ্রামের জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, তিনি এ মসজিদে তিন বছর ধরে ইমামতি করছেন। তিনি আসার দুই তিনবছর আগে মসজিদে নামাজ আদায় কালে ফয়জুর ও তার চাচা আবদুল কাহার ও প্রবাসী দুই চাচার সঙ্গে মুসল্লিদের বিরোধ দেখা দিলে গ্রামবাসীর বিরোধিতার কারণে তারা আর মসজিদে মতবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেনি।

দিরাই থানার ওসি তদন্ত এবিএম দেলোয়ার বলেন, প্রাথমিক ভাবে তথ্য সংগ্রহ করে জানতে পেরেছি তারা ১০/১৫ বছর ধরে এলাকায় বসবাস করে না। ফয়জুরের বাবা সিলেটে থাকেন। কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ডের পাশে তাদের স্থায়ী বাড়ি রয়েছে। ওখানে তারা সপরিবারে থাকতো। সে মাঝে মধ্যে এলাকায় এসে ফেরিওয়ালার বেশে গামছা লুঙ্গি বিক্রি করতো। এরচেয়ে বেশি কিছু জানা যায়নি। এ ঘটনায় র‌্যাব সুনামগঞ্জ ক্যাম্পের সদস্যরা তার চাচা আবুল কাহার লুলাইকে আটক করেছে।
এমটিনিউজ২৪.কম/হাবিব/এইচআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে