বুধবার, ০৭ মার্চ, ২০১৮, ১০:১৩:০৬

যেভাবে রেকর্ড হলো ৭ মার্চের ভাষণ

যেভাবে রেকর্ড হলো ৭ মার্চের ভাষণ

নিউজ ডেস্ক : ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি ব্যাপক কোনো প্রস্তুতি নিয়ে অভিও-ভিডিও করা যায়নি। যতটুকুও করা গেছে, ততটুকু সমন্বিতভাবে প্রচার বা প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। এর কারণ, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ঢাকা বেতার থেকে সরাসরি প্রচার হওয়ার কথা থাকলেও পাকিস্তান সরকারের হস্তক্ষেপে তা সেদিন প্রচারিত হতে পারেনি। এর চিত্রায়ণও বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। এ ধরণের ভাষণ ধারণ করার মতো প্রযুক্তিও তখন তেমন বিশেষ ছিল না। যা ছিল তা বেশ ভারি ও আয়তনসমৃদ্ধ ছিল। তা ছাড়া বঙ্গবন্ধু সেদিন কী বলবেন, তাও আগে থেকে নির্ধারিত বা ঘোষিত ছিল না।

তবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবেন, দিক নির্দেশনা দেবেন—এমন আভাস ছিল, ধারণা ছিল। দেশি-বিদেশি মিডিয়াগুলো সভাস্থলে তাই আগ্রহ নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল। তখন অবশ্য আজকের মতো ভিডিও ক্যামেরা তেমন ছিল না। ফটো সাংবাদিক এবং রিপোর্টাররা ছবি এবং সংবাদ সংগ্রহ করতেন। তেমন পরিস্থিতিতে কথা ছিল বাংলাদেশ বেতার বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি সরাসরি প্রচার করবে। তাদের সে ধরণের প্রস্তুতি ছিল। তবে বঙ্গবন্ধুর ভাষণটিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছিলেন পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম করপোরেশনের চেয়ারম্যান এ এইচ এম সালাহউদ্দিন এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আবুল খায়ের এমএনএ। তারা আগেই সিদ্ধান্ত নেন, যেভাবেই হোক ভাষণের রেকর্ডিং করতে হবে। একই সঙ্গে দৃঢ় ছিলেন সরকারের ফিল্ম ডিভিশনের (ডিএফপি) কর্মকর্তা (পরে অভিনয়শিল্পী হিসেবে খ্যাত) মরহুম আবুল খায়ের। তিনি সচল ক্যামেরা বিশেষজ্ঞ ছিলেন।

অন্যদিকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল খায়ের গোলাপগঞ্জ থেকে নির্বাচিত এমএনএ ছিলেন, তিনি ১৯৬৩ সাল থেকে ফিল্ম করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। 'জয় বাংলা' ফিচার ফিল্মের তিনি প্রযোজকও ছিলেন। তার সঙ্গে তখন অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান ছিলেন এনএইচ খন্দকার। সিদ্ধান্ত হয় যে আবুল খায়ের এমএনএ'র তত্ত্বাবধানে এনএইচ খন্দকার মঞ্চের নিচে তার যন্ত্রপাতি নিয়ে বক্তৃতা ধারণ করবেন। ডিএফপি কর্মকর্তা আবুল খায়ের মঞ্চের এক পাশে সচল ক্যামেরা নিয়ে চিত্র ধারণ করতে থাকেন। ক্যামেরার আকার বড় থাকায় খুব বেশি নাড়াচাড়া করতে তিনি পারছিলেন না।

বিশেষত ভাষণের পরিবেশ শুরু থেকে শেষ অবধি এতটাই আবেগ, উত্তেজনা ও দৃষ্টিকাড়া ছিল যে কোনো ক্যামেরাম্যানের পক্ষেই নড়াচড়া করার তেমন সুযোগ ছিল না। সে কারণে তিনি একটা দূরত্বে থেকে একই অবস্থানে দাঁড়িয়ে বক্তৃতার দৃশ্য যতটুকু পেয়েছেন ততটুকুই ধারণ করেছেন। ফলে দেখা যায় বক্তৃতার ভিডিও দৃশ্যটি ১০ মিনিটের। অন্যদিকে আবুল খায়ের এমএনএ'র তত্ত্বাবধানে মঞ্চের নিচে এ এইচ খন্দকার সম্পূর্ণ ভাষণের কথাই রেকর্ড করতে সক্ষম হলেন। বেতারের কর্মকর্তারাও ভাষণটি সরাসরি সম্প্রচার করতে না পারলেও এটির পূর্ণাঙ্গ রেকর্ড করাতে তাঁরা সক্ষম হন, যা পরদিন বেতারকর্মী এবং জনগণের দাবির কারণে বেতার থেকে প্রচারিত হয়।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে