শুক্রবার, ৩০ মার্চ, ২০১৮, ১০:১৯:৪৯

কোন্দল নিয়ে ‘ভয়াবহ পরিণতির’ শঙ্কায় আওয়ামী লীগ

কোন্দল নিয়ে ‘ভয়াবহ পরিণতির’ শঙ্কায় আওয়ামী লীগ

তানিম আহমেদ : দলের শৃঙ্খলা নিয়ে সতর্কবার্তা দেয়া হচ্ছে বারবার। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ফলাফল নেই। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকারের যেসব এলাকায় ভোট হয়েছে, তার একটি বড় এলাকাতেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়েছেন মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা। কেউ কেউ জিতেছেন, হারের কারণও হয়েছেন কেউ কেউ।

বৃহস্পতিবার ৫১টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদের ২৮টি জিতেছে আওয়ামী লীগ। চারটি পৌরসভার তিনটিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু ফলাফল হতে পারত আরও ভালো। কারণ যে ১০ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জিতেছেন, তার মধ্যে সাত জন আওয়ামী লীগেরই নেতা। বিএনপি যে ১১টিতে জিতেছে তার মধ্যে বেশ কয়েকটিতে ক্ষমতাসীন দলের একাধিক প্রার্থীর ফায়দা লুটেছে তারা।

২০০৯ সাল থেকেই স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে বারবার একই চিত্র দেখা গেছে। আওয়ামী লীগের দুই বা ততোধিক প্রার্থী, এমনকি এক আসনে সাত জন প্রার্থীও দেখা গেছে। স্থানীয় নির্বাচনে কোন্দল সামলাতে না পারা আওয়ামী লীগ জাতীয় নির্বাচনেও দলের ভেতরের জায়গায় জায়গায় এই ‘বিদ্রোহ’ নিয়ে চিন্তিত হয়ে উঠেছে।

এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা একে অপরকে ঘায়েলের চেষ্টায় আছেন বলে তথ্য আছে আওয়ামী লীগে। অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীকে ঘায়েল করার চেষ্টায় দলেরই বদনাম হচ্ছে বলে মনে করেন ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।

সম্প্রতি জয়পুরহাটে আওয়ামী লীগের দুই জন সংসদ সদস্যের অনুসারীরা একে অপরের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছে। রাজধানীতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন এবং ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদের পরস্পরবিরোধী অবস্থানেও বিব্রত হতে হয়েছে আওয়ামী লীগকে। এই চিত্র আছে ৩০০ নির্বাচনী এলাকার কম বেশি শতাধিক আসনে।

শুক্রবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় দলের ভেতর বিদ্রোহীদের নিয়ে শঙ্কার কথাই বলা হয়েছে। বৈঠকে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়িত নেতাদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে নেতাদের সবাই মতামত তুলে ধরেন। শনিবার (৩১ মার্চ) সন্ধ্যায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে বিষয়টি নিয়ে জানানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বৈঠক সূত্র জানায়, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কোন্দলের প্রসঙ্গটি তোলেন। সাতটি ইউনিয়নে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর জয় এবং বেশ কিছু ইউনিয়নে বিদ্রোহীর কারণে নৌকার প্রার্থীর হার নিয়ে কথা বলেন তিনি। গাজীপুরে স্থানীয় একটি নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন বলেও জানান কাদের।

সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনেও দল সমর্থিত প্রার্থীরা কোন্দলের কারণে হেরেছেন বলে মত দেন তিনি। কাদের বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও বিদ্রোহী দমনে ব্যবস্থা না নিলে জাতীয় নির্বাচনে ভয়াবহ পরিণতি হবে।’

এরপর সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমসহ একে একে সব নেতা সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে ঐক্যমতে পৌঁছান এবং এর বিহিত করা উচিত বলে মন্তব্য করেন।

দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘এর আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে বিদ্রোহী প্রার্থীদের ছড়াছড়ি ছিল। তাদেরকে বহিষ্কার করা হলেও বিজয়ী হয়ে আসার পরে এসব বিদ্রোহীদের পরে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করা হয়ছে। ক্ষেত্র বিশেষে তাদের মাফ করা হয়েছে। এগুলো বিদ্রোহী প্রার্থীদের ভেতরে উৎসাহ যুগিয়েছে।’

‘বিদ্রোহেী প্রার্থী ও অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে কিন্তু কার্যত তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি নিশ্চিত করা হয়নি বিদ্রোহীরা বিজয়ী হয়ে আসলে বহিষ্কার আদেশ থাকে না বরং তারা দলীয় পদ পায়’-এমনটা বলেও ক্ষোভ ঝাড়েন নাছিম।

বৈঠকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, কেন্দ্রীয় নেতা ফরিদুন্নাহার লাইলী, হাবিবুর রহমান সিরাজ, বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ এ সময়  উপস্থিত ছিলেন। -ঢাকাটাইমস

এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে