শনিবার, ৩১ মার্চ, ২০১৮, ০৭:১৫:১৫

ফেঁসে যাচ্ছেন তারেক, মোশাররফ,আব্বাস, নোমানরাও

নিউজ ডেস্ক: হত্যা ও দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা পাঁচ মামলায় বিএনপির শীর্ষপর্যায়ের সাত নেতার বিচারকাজ শেষের পথে। দুর্নীতির চার মামলায় তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য-জেরা চলছে। হত্যা মামলায় যুক্তি উপস্থাপনও শেষ পর্যায়ে। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো দায়ের হয়েছে।

অপরদিকে বিএনপির আইনজীবীরা বলছেন, তারেক রহমানসহ বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে মামলাগুলো দ্রুত সম্পন্নে সরকার জোর তৎপরতা চালাচ্ছে।

বিএনপির ওই সাত নেতা হলেন- দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ কে এম মোশাররফ হোসেন, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা

তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবর ও আবদুস সালাম পিন্টুর বিরুদ্ধে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মামলা হয়। মামলায় তারেক রহমান পলাতক আর বাকি দুজন কারাগারে আছেন। আলোচিত এ মামলায় ৫১১ জন সাক্ষীর মধ্যে ২২৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। ২০ জনের সাফাই সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়েছে। এখন চলছে আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন। যুক্তি উপস্থাপন শেষে মামলাটি রায়ের জন্য দিন ধার্য হবে।

মামলার বিচারকাজ চলছে পুরনো কারাগারের পাশে ঢাকার ১নং অস্থায়ী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে। এ মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।

মামলায় অভিযোগ আনা হয়, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালায় আসামিরা। ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন।আহত হন দলের তিন শতাধিক নেতাকর্মী।ঘটনার পরের দিন মতিঝিল থানার মামলা দায়ের হয়।

মামলায় আসামিপক্ষের সর্বোচ্চ শাস্তি চান রাষ্ট্রপক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আবু জাগো নিউজকে বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানসহ সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করছি। মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। আমরা আশা করছি মামলাটি দ্রুত রায়ের জন্য দিন ধার্য হবে।

খন্দকার মোশাররফের অর্থপাচার মামলা

সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২০১৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগে মামলা করে। এতে অভিযোগে আনা হয়, মোশাররফ হোসেন মন্ত্রী হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন। তিনি লন্ডনের একটি ব্যাংক হিসাবে নয় কোটি ৫৩ লাখ ৯৫ হাজার ৩৮১ টাকা জমা রাখেন। ওই মামলার বিচার শুরু হয় ২০১৫ সালের ২৮ অক্টোবর। ঢাকার ১নং বিশেষ জজ আদালতে মামলাটির বিচারকার্য চলছে। আটজনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। এ মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি ১২ বছরের কারাদণ্ড।

মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা

সাবেক পূর্তমন্ত্রী মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে আয়ের সঙ্গে সংগতিহীন অর্থ উপার্জনের অভিযোগে দুদক মামলা করে। এতে বলা হয়, মির্জা আব্বাস সাত কোটি ৫৪ লাখ ৩২ হাজার ২৯০ টাকার সম্পদ অর্জন এবং ৫৭ লাখ ২৬ হাজার ৫৭১ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেন। এ অভিযোগে ২০০৭ সালের ১৬ আগস্ট মামলা করে দুদক। ২০০৮ সালের ১৪ মে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। মামলায় ২২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। মামলাটির বিচারকাজ চলছে ঢাকার ৬নং বিশেষ জজ আদালতে। এ মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি ১৩ বছরের কারাদণ্ড।

আবদুল্লাহ আল নোমানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা

সাবেক মৎস্য ও পশুসম্পদমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমানের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ১৯৯৮ সালের ১৯ আগস্ট ধানমন্ডি থানায় দুদক মামলাটি করে। ২০০০ সালের ৩০ মে তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয় দুদক। সাক্ষ্য হয়েছে সাতজনের। মামলাটির বিচারকাজ চলছে ঢাকার বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতে। এ মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি ১৩ বছরের কারাদণ্ড।

কে এম মোশাররফ হোসেনের নাইকো থেকে অবৈধ সুবিধা আদায়

সাবেক জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী (২০০১-০৫) এ কে এম মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি কানাডার প্রতিষ্ঠান নাইকো রিসোর্স লিমিটেড থেকে ৯৫ লাখ টাকা মূল্যের একটি গাড়ি এবং কানাডা-আমেরিকা ভ্রমণের জন্য পাঁচ হাজার ডলার নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ২০১২ সালে মামলা করে দুদক। মামলায় ২৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।মামলাটির বিচার কাজ চলছে ঢাকার ২নং বিশেষ জজ আদালতে। এ মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছরের কারাদণ্ড।

দুদকের দায়ের করা চার মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তার সাক্ষ্য ও জেরার জন্য দিন ধার্য রয়েছে। জেরা শেষে যুক্তি উপস্থাপন হবে। এরপর রায়ের জন্য দিন ধার্য হবে।

দুদকের আইনজীবী মীর আহমেদ আলী জাগো নিউজকে এ প্রসঙ্গে বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগে চার নেতার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। আমরা আশাবাদী তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারব। মামলায় তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে।

বিএনপি নেতাদের আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, তারেক রহমানসহ বিএনপির শীর্ষ নেতারা যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারেন সে জন্য দ্রুত বিচার সম্পন্নের পায়তারা করছে সরকার। মিথ্যা ও হয়রানির জন্য এসব মামলা দায়ের। ন্যায় বিচার তো দূরের কথা সাধারণ বিচারও পাচ্ছি না আমরা।

আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ জাগো নিউজকে বলেন, সরকার তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে সরানোর জন্য এ মামলায় আসামি করেছে। তারেক রহমান সম্পূর্ণ নির্দোষ। আশা করছি ন্যায় বিচার হলে আসামিরা খালাস পাবেন।

বিএনপি নেতাদের অপর আইনজীবী তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ বলেন, মিথ্যা ও হয়রানির জন্য বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ন্যায় বিচার হলে আসামিরা খালাস পাবেন।

প্রসঙ্গত, গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত।রায়ের পর থেকে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন তিনি।

১২ মার্চ খালেদা জিয়াকে চার মাসের অন্তর্বর্তী জামিন দেন উচ্চ আদালত। ১৯ মার্চ আপিল বিভাগ ৮ মে পর্যন্ত খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত করেন।এ মামলায় তারেক রহমানকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত।-জাগো নিউজ
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে