সোমবার, ০৯ এপ্রিল, ২০১৮, ০৯:০৮:১৩

খালেদা জিয়ার জন্য বিপজ্জনক আড়াই ফুটের খাট!

খালেদা জিয়ার জন্য বিপজ্জনক আড়াই ফুটের খাট!

ঢাকা: কারাগারে ডিভিশন পেলেও তা যথাযথ মনে করছেন না বিএনপি নেতারা।তাছাড়া কারাগারে যে চিকিৎসক রয়েছেন তিনি অবিজ্ঞ নয় বলে মন্তব্য করেন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) সদস্যরা।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হওয়ার পর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের সাবেক ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন । কারাগারে তাকে সাধারণ কয়েদি হিসেবে রাখা হয়েছে বলে বিএনপির অভিযোগের পর খালেদা জিয়াকে জেলকোড অনুসারে ডিভিশন দিতে নির্দেশ দেন আদালত।এর পর ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে খালেদা জিয়াকে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ডিভিশন দেয়া হয়।

এ বিষয়ে আলাপকালে ড্যাব মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ বলেছেন, খালেদা জিয়াকে আড়াই ফুটের একটি খাট দেয়া হয়েছে, কিন্তু এই বয়সের এমন একজন রুগীর জন্য তা বিপজ্জনক। এ ধরণের খাটে সাধরণ নড়াচড়া করাও সম্ভব নয়।

ইতোপূর্বে তাঁর দুই হাঁটু প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। সম্প্রতি তিনি লন্ডনে চোখের অপারেশনও সম্পন্ন করেছেন। তিনি কোন সাধারণ রোগী নয় উল্লেখ করে ডা. জাহিদ বলেন , যেধরনের কম্বলে খালেদা জিয়াকে থাকতে দেয়া হয়েছে তা যথাযথ নয়, তবে চেয়ারপারসনকে ‘কম্ফোর্টেবল বেড’ দেয়ার সুপারিশ করেছে মেডিকেল বোর্ড।কারা কর্তৃপক্ষ এখনো আরামদায়ক বিছানা ও খাট সরবরাহ করেছে কি-না আমরা জানিনা।

এছাড়া খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রশাসনিক তৎপরতাকে ‘লোক দেখানো’ বলে মনে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক ডা. সাইফুল ইসলাম।

সোমবার(৯মার্চ) সকালে ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা নিয়ে ‘বিশিষ্ট চিকিৎসক সমাজ’এর ব্যানারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, খালেদা জিয়াকে নির্জন, স্যাঁতসে্যঁতে পুরোনো ও বসবাস অযোগ্য পরিত্যক্ত স্থানে রাখা হয়েছে। যা সাধারণ কায়েদিদের জন্য পাতিত্যাক্ত ঘোষনা করে তাদের অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ডিভিশন দেওয়া হলেও তার বিছানা বালিশ ও আসবাবও অত্যন্ত নিম্মমানের ও ব্যবহার অযোগ্য।

এই ধরনের পরিবেশে একজন সুস্থ মানুষেরও নানা মারাত্মক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়্। পিচ্ছিল স্যাঁতসে্যঁতে স্থানে যে কোন সময় পড়ে গিয়ে খালেদা জিয়ার হাটু, উরুসন্ধি, হাত ও মেরুদন্ডের হাড় ভাঙ্গা সহ মস্তিষ্ক ও স্পাইনাল কর্ডে আঘাতের ফলে পক্ষাঘাত রোগ হতে পারে।

অধ্যাপক ডা. সাইফুল ইসলাম আরো বলেন, এধরণের পরিবেশে খালেদা জিয়ার হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ারও ঝুঁকিসহ ফুসফুসে সংক্রমন বা নিউমোনিয়ার আশঙ্কাও বাড়তে পারে।

বেগম জিয়া দীর্ঘদিন ধরে জটিল নানা রোগে ভুগছেন।চিকিৎসকদের পরিভাষায় তিনি একজন বিশেষ পরিচর্যা সাপেক্ষ রোগী (Patient with Special Needs) সে হিসাবে সুচিকিৎসার স্বার্থে তার একান্ত ব্যাক্তিগত পরিচর্যার সকল সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন মনে করেন এই চিকিৎসক।

ডা. সাইফুল আরো বলেন, খালেদা জিয়ার সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে ব্যাক্তিগত চিকিৎসকরাই ভালোভাবে অবগত রয়েছেন।নতুন চিকিৎসকদের পক্ষে তা সম্ভব নয়। তিনি আরো বলেন, সিটি-স্ক্যান, এম-আর-আই ইত্যাদি আধুনিক পরীক্ষা-নিরিক্ষা ছাড়াও নিবিড় পর্যবেক্ষণ এ ক্ষেত্রে রোগনির্ণয় ও সুস্থ হতে ভূমিকা রাখতে পারে।

এছাড়া খালেদা জিয়াকে এখন বিদেশে নেওয়ার প্রয়োজন নেই বলে মনে করছেন তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক ডা. শামসুজ্জামান। তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে যে তিনজন চিকিৎসক শনিবার খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন, তাদের মতামত পেলে মেডিকেল বোর্ড পরবর্তী পদক্ষেপে যাবে, জানান ডা. শামসুজ্জামান।

অধ্যাপক ডা. শামসুজ্জমান আরো বলেন, খালেদা জিয়ার শরীরে এমন কোনো রোগ নেই, যা এ দেশে চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। তার রিউমেটাল আর্থ্রাইটিস ও অস্টোআর্থ্রাইটিস রয়েছে। যদিও তার হাঁটু প্রতিস্থাপন করা আছে। এ নিয়ে তার কোনো অভিযোগ নেই।

এক্স-রেতে কী ধরনের রিপোর্ট পাওয়া গেছে জানতে চাইলে বিএসএমএমইউ’র রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. এনায়েত করিম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, খালেদা জিয়ার এক্স-রে পরীক্ষার রিপোর্ট রোববার(৮ এপ্রিল) সকালে হাসপাতাল পরিচালকের কাছে পাঠানো হয়েছে। সেখানে কী আছে সে বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। এ বিষয়ে কিছু বলার থাকলে কারা কর্তৃপক্ষ বা তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড সেটি জানাবে।
এমটি নিউজ/এপি/ডিসি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে