বৃহস্পতিবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৮, ০৯:৩৩:০৪

হজযাত্রীর কাছ থেকে ৫০ কোটি টাকা নিয়ে এজেন্সি চেয়ারম্যান উধাও!

হজযাত্রীর কাছ থেকে ৫০ কোটি টাকা নিয়ে এজেন্সি চেয়ারম্যান উধাও!

হজযাত্রীদের প্রায় ৫০ কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে পালিয়ে গেছে আকবর হজ গ্রুপ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মুফতি লুৎফর রহমান ফারুকী। তবে তার স্ত্রী আবাবিল ওভারসিজের মালিক তামান্না রহমানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাকে দুই দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।

গত চার এপ্রিল গ্রেফতার করা হয় তামান্না রহমানকে। এবিষয়ে বৃহস্পতিবার পল্টন থানার উপপরিদর্শক (এস আই) আরশাদ বলেন, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে আকবর হজ গ্রুপের চেয়ারম্যান মুফতি লুৎফর রহমান ফারুকীর স্ত্রী আবাবিল অভারসিজের মালিক তামান্না রহমানকে গ্রেফতার করে কোর্টে চালান দিলে ঢাকার একটি আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

জানা গেছে, আকবর হজ গ্রুপের বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে দুই হাজার হজযাত্রীর কাছ থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু এসব হজযাত্রীর নিবন্ধন না করেই অফিস বন্ধ করে পালিয়ে গেছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ পরিস্থিতেতে হজযাত্রী ও হজ গাইডদের পক্ষে নওগাঁ জেলার আত্রাই থানার পাঁচপাকিয়া গ্রামের মো. আব্দুর রাকিব হজ অফিস বরাবর আবেদন জানান। পাশাপাশি গত ২ মার্চ বাদী হয়ে পল্টন থানায় মামলা (মামলা নম্বর-৩) করেন।

পল্টন থানায় দায়ের করা মামলায় আসামি করা হয়েছে আকবর হজ গ্রুপের চেয়ারম্যান মুফতি লুৎফর রহমান ফারুকী, তার স্ত্রী আবাবিল অভারসিজের মালিক তামান্না রহমান, মেয়ে নিয়ার অ্যান্ড ফার-এর মালিক সুমাইয়া রহমান, জামাতা আব্দুল বাকী, আকবর হজ গ্রুপের চেয়ারম্যানের পিএস মামুনুর রশিদ, হিসাব কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান, আকবর হজ গ্রুপের স্বত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর আলম, সুমাইয়া এয়ার ইন্টারন্যাশনাল-এর মালিক মোশারফ হোসেন, আকবর ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস-এর মালিক আকবর হোসেন মঞ্জু, আফতাব ট্রাভেলস-এর মালিক মুকাররম কবির, সিরাজাম মুনিরা এয়ার ট্রাভেলস-এর মালিক হারুন অর রশিদ, সান রাইজ এয়ার ইন্টারন্যাশনাল-এর মালিক মো. সাইদুর রহমান, সুন্দর এয়ার এক্সপ্রেস-এর মালিক মাকসুদুর রহমান ও মো. ইলিয়াস হোসেন, সুহাইল এয়ার ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি মালিক তানভীর আহম্মেদ সোহাইলকে।

এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের হজ পালনের জন্য আকবর গ্রুপের মাধ্যমে তিন হাজার ৫০০ হজযাত্রীর প্রাক নিবন্ধন সম্পন্ন হয়। একজন হজ গাইডের অধীনে ২০ জন থেকে ১০০ জন হজযাত্রী রয়েছেন। মোট ৩০০ জন হজ গাইড রয়েছে। প্রাক নিবন্ধনের পর সরকার ঘোষিত কোটার মধ্যে যেসব হজযাত্রী রয়েছেন তাদের মোবাইল ও হজ গাইডদের মোবাইল নম্বরে ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে মক্কায় বাড়ি ভাড়ার কথা বলে এক লাখ টাকা করে জমা দিতে বলে আকবর হজ গ্রুপ। গত বছরের নভেম্বর থেকে হজযাত্রী ও হজ গাইডদের মোবাইল কল করে ও এসএমএস দিয়ে বিভিন্ন সময় টাকার জন্য চাপ দেওয়া হয়। হজ গাইডরা হজযাত্রীদের কাছ থেকে এক লাখ টাকা সংগ্রহ করে বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে কোম্পানির অ্যাকাউন্টে জমা দিতে থাকেন। চূড়ান্ত নিবন্ধন শুরু হয় গত ৬ মার্চ থেকে।

আকবর হজ গ্রুপের আকবর হজ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস-এর স্বত্বাধিকারী আকবর হোসেন মঞ্জু চূড়ান্ত নিবন্ধনের জন্য মোবাইলে ও অফিসে উপস্থিত হয়ে হজযাত্রী প্রতি দুই লাখ ৫০ হাজার করে টাকা করে দেওয়ার কথা বলেন। হজযাত্রী ও হজ গাইডরা নিবন্ধনের আগেই এই টাকা জমা দেন।

এরপর আকবর গ্রুপের চেয়ারম্যান মুফতি লুৎফর রহমান ফারুকী, আকবর হোসেন মঞ্জু, কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসন, মোকাররম কবির, মোশারফ হোসেন নিবন্ধন করছি করছি বলে সময়ক্ষেপণ করে প্রায় দুই হাজার হজযাত্রীর নিবন্ধন করেননি। গত ১ এপ্রিল চূড়ান্ত নিবন্ধনের শেষ দিন হজযাত্রীদের মোবাইলে এসএমএস না যাওয়ায় হজ গাইড ও হজযাত্রীরা আকবর গ্রুপের অফিসে (সৈয়দ নজরুল ইসলাম সড়কের আল রাজি কমপ্লেক্স-এর চতুর্থ তলা) গিয়ে দায়িত্বরত কাউকে না পেয়ে চেয়ারম্যানের ফোন দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তিনি আত্মগোপন করে আছেন বলে হজযাত্রী ও গাইডরা জানতে পেরেছেন। এছাড়া জাহাঙ্গীর হোসেন, মোকাররম কবির, মোশাররফ হোসেনের মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলেও তারা ধরেননি।

অভিযোগে বলা হয়, নিবন্ধন না করে হাজযাত্রী ও গাইডদের ৫০ কোটি টাকা নিয়ে আকবর গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ সহযোগীরা পালিয়ে গেছেন।
এমটি নিউজ/এপি/ডিসি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে