বৃহস্পতিবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৮, ০৯:৫৬:৪৫

সেদিন রাতে সুফিয়া কামাল হলে আসলে কী ঘটেছিল?

সেদিন রাতে সুফিয়া কামাল হলে আসলে কী ঘটেছিল?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হল ছাত্রলীগ সভাপতি ইফফাত জাহান এশার বিরুদ্ধে ছাত্রীদের ওপর নির্যাতনের যে অভিযোগ উঠেছে তা নিয়ে ফেসবুকে ব্যাপক ঝড় উঠেছে। দল থেকে তার বহিষ্কার নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।

কেউ বলছেন তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সঠিক নয়। ফলে সোমবার রাতে আসলে কী ঘটেছিল? তা নিয়ে মানুষের মধ্যে এখন দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। সবাই চাচ্ছেন এর সুষ্ঠু তদন্ত হোক।

সম্প্রতি কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে এক রকম অচল হয়ে যায় ঢাকা। পরীক্ষা-ক্লাস সব বন্ধ থাকে। এই আন্দোলনে ছাত্রীরাও অংশ নেয়। কবি সুফিয়া কামাল হলের অনেক ছাত্রীও মিছিল করে।

এমন অবস্থায় মঙ্গলবার অভিযোগ উঠেছ কবি সুফিয়া কামাল হলে আন্দোলনকারী এক ছাত্রীকে নির্যাতন করেছেন ইফফাত জাহান এশা। এতে রাতেই ক্যাম্পাস উত্তপ্ত হয়ে উঠে। সাধারণ শিক্ষার্থী এশার শাস্তি চেয়ে স্লোগান দিতে থাকে। অভিযোগ ওঠার পরপরই ছাত্রলীগ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। একই সঙ্গে বহিষ্কার করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

সেদিন রাতে হলের ভেতর থেকে কয়েকজন ছাত্রী অভিযোগ করেন, মোরশেদা বেগম নামের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এক ছাত্রীর পায়ের রগ কেটে দিয়েছেন এশা। তাকে জরুরী চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ছাত্রীদের পাঠানো ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, হলের সিঁড়ি ও রুমের মেঝেতে রক্তের ফোঁটা জমে আছে।

এরপর বিভিন্ন সূত্র থেকে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য আসতে থাকে। ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনার পর দিন ফেসবুক স্ট্যাটাসে বিষয়টির বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নীলিমা আখতার।

তিনি লিখেন, ‘গুজব যাতে না ছড়ায়, সেই জন্যই সঠিক তথ্য আমার হাতে আসায় সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রী মোর্শেদার আহত হওয়া নিয়ে পোস্ট দিয়েছিলাম। বারবার চেক করেছি আবাসিক শিক্ষকদের কাছ থেকে যারা ছাত্রীকে হাসপাতালে নিয়েছেন। কালও তো হলে সাধারণ সভা ছিল। একজন ছাত্রীও রগ কাটার অভিযোগ করেনি বলে জেনেছি।

রগ কাটার গুজব সফল হলে পরশু রাত এবং কাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ও সারা দেশে কী তাণ্ডব হতো তা বোঝাই যায় ৮ তারিখের ঘটনা থেকে। সেই সুযোগে রগ কাটার বদনাম অন্য সংগঠনের উপর চাপানোর চেষ্টা করা যেত (মশায়, অত কী আর সোজা!)।’

এর আগে নীলিমা আখতার ফেসবুকে লিখেন, ‘সুফিয়া কামাল হলের যে মেয়েটির ছবি ভাইরাল হয়েছে, ওর রগ কাটেনি। ও সেই সময় অত্যাচারিত অন্য একটি মেয়ের চিৎকার শুনে প্রতিবাদে ছাত্রলীগের নেত্রীর রুমের গ্লাসে লাথি মেরেছিল। যে শিক্ষক তাকে পাশের হাসপাতালে নিয়েছেন, তার কাছে ওই ছাত্রীই এটা বলেছে। সেই শিক্ষকের সাথে আমার কথা হয়েছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতেও পাবেন এ তথ্য। তবে, তবে, ওখানে সাধারণ ছাত্রীরা বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়েছিল। আক্রমণের স্বীকার হয়েছে। সাধারণ ছাত্রীরা ভীষণ ভয় পেয়েছে। জানলাম দোষী ছাত্রলীগ নেত্রী এষাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করেছেন উপাচার্য।’

আদেলী এদিব খান নামে একজন ফেসবুকে লিখেন, ‘এবার আসি এশা কে নিয়ে। যদি সে ভুল করে থাকে তাহলে তার বিচার আপনাদের মতই মেধাবীরা শাস্তি দেওয়ার অধিকার রাখেন না। আর সে শাস্তি পেয়ে বহিষ্কার হয়ে যাওয়া শর্তেও কিভাবে দুঃসাহস দেখান একটা মেয়ের গলায় সবাই মিলে জুতার মালা দেওয়ার??’

এশার সহপাঠীরা বলেন, এশার ক্ষেত্রে যা হয়েছে তা দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। ছাত্রলীগ নেত্রী হয়ে কিছুটা বিরূপ মনোভাব দেখাতেন এশা।

বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেত্রী এশার বাবা ইসমাইল হোসেন মেয়ের বহিষ্কার প্রসঙ্গে বলেন, আমার মেয়ের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।

তিনি দাবি করে বলেন, আমি একজন বাবা হিসেবে নয় একজন আইনের লোক হিসেবে চাই- এই ঘটনার প্রকৃত সত্য উদঘাটন করা হোক।
এমটি নিউজ/এপি/ডিসি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে