সোমবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৮, ০৬:৪৩:৫৭

‘উঠেন উঠেন বলে গায়ে হাত দেয় হেলপাররা’

‘উঠেন উঠেন বলে গায়ে হাত দেয় হেলপাররা’

মাহমুদা বীথি: বারিধারায় একটা বেসরকারি মিডিয়ায় চাকরি করি। থাকি ফার্মগেট এলাকায়। কর্মস্থলে যোগ দিতে প্রতিদিন বাসে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু ফার্মগেট থেকে অফিসের এই রুটে হাতে গোনা দু’একটি বাস আসা যাওয়া করে। যার একটি হলো মতিঝিল বনানী ট্রান্সর্পোটের ছয় নম্বর, অন্যটি দেওয়ান। কিছুদিন আগে দেওয়ান পরিবহনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী যৌন হয়রানির স্বীকার হয়েছিল। ওই ঘটনায় ভিকটিম ছাত্রীটি এ নিয়ে ফেসবুকে স্যাটাসও দেয়। সেই থেকে দেওয়ান বাসে উঠা বাদ দিয়েছিলাম। অগত্যা ছয় নম্বরেই উঠতে হয়। আর ছয় নম্বরের কথা সবাই হয়ত জেনে থাকবেন।

একদিনের ঘটনা..আমি মহিলা সিটের দ্বিতীয় সারির পাশে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ এক মেয়ের চিৎকার, ‘তোর ঘরে মা বোন নাই’। কথায় কথায় বেশ কথা কাটাকাটি।

আশপাশ থেকে শোনা যাচ্ছে, পাবলিক পরিবহনে একটু আধটু হাত লাগবেই। সহ্য করতে না পারলে বাসে চড়েন কেন? মেয়েটি আমার পাশে এসে দাঁড়ালো। জিজ্ঞেস করলাম আপু কী হয়েছিলো? তিনি যা বললেন আমি রীতিমত চমকে গেলাম। আরও বেশি চমকে গেলাম এই শুনে যে, ভদ্রবেশী এক যাত্রীর দ্বারাই নাকি তিনি যৌন হেনস্তার স্বীকার হয়েছেন।

শুধু ওই মেয়েটিই নয়, গণপরিবহনে প্রতিদিন কোনো না কোনো মেয়ে এ ধরণের হয়রানির শিকার হরহামেশা হয়ে থাকেন। সামাজিক মান-মর্যাদার ভয়ে যার অধিকাংশ ঘটনায় প্রকাশ করেন না নির্যতিত নারীরা।

সম্প্রতি কয়েকজন নারী লোকলজ্জ্বার ভয় আর কলঙ্ক উপক্ষো করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সেই সব অপ্রীতিকর ঘটনা প্রকাশ করেছেন। আর তা দেখে যারা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন তারা হয়তো জানেনই না যে, গণপরিবহনে নারীরা প্রতিনিয়তই হয়রানির শিকার হন। হয় পুরুষ যাত্রী দ্বারা নয়তো পরিবহণ শ্রমিকদের দ্বারা।

তিতুমির কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্রী পুষ্পিতা (ছদ্মনাম) বলেন, ‘বাসে উঠতে গেলে আজকাল খুব ভয় লাগে। উঠার সময় দেখা যায় উঠেন উঠেন বলে গায়ে হাত দেয় হেলপাররা, হাত ধরে; উঠার সময় পিঠেও হাত দেয়। যদি বলি মামা হাত ধরা লাগবে না। তখন হাসাহাসি করে। কেমন অশ্লীল চাহনি দিয়ে তাঁকায়, যা দেখতেই খুব বাজে লাগে।

বাংলা কলেজের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী রুখসানা বলেন, ‘শুধু বাসের হেলপারদের দ্বারা নয়, পুরুষ যাত্রীদের দ্বারাও হয়রানির শিকার হতে হয়। বাসে মেয়েরা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলে তো কথাই নেই। ছোঁক ছোঁক করে শরীরের সাথে শরীর লাগিয়ে দিতে চায়।

তিনি বলেন, তাছাড়া পুরুষ যাত্রীর পাশে বসলে সারাক্ষণ তটস্থ হয়ে থাকতে হয়, কোনো ছুতো পেলেই গায়ের সাথে গা লাগাতে চায়।আর যাত্রার সময় বাস একটু এদিক ওদিক করলেই গায়ের উপর এসে পড়তে চায়।
তিনি বলেন, অনেক সময় তাল সামলাতে না পেরে এ ধরণের ঘটনা ঘটে থাকে। কিন্তু ওইসব সিচুয়েশন মেয়েরা ঠিকই বুঝতে পারে। আর সহযাত্রীর লোভী চোখের চাহনিও মেয়েরা সহজে চিনে ফেলে ।

গত সপ্তাহে সুপ্রভাত পরিবহনের বাসে চড়ে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছে ভিকারুন্নিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের এক ছাত্রী। আব্দুল্লাহপুর থেকে মায়ের সঙ্গে রামপুরা আসার জন্য সুপ্রভাত পরিবহনের বাসে চড়ে সে। মাঝপথে বাসটির বাতি নিভিয়ে দেয়া হয়। রামপুরায় জ্যামে পড়লে মা-মেয়ে বাস থেকে নামতে চান। কিন্তু মা সহজে নামতে পারলেও ওই ছাত্রী হেনস্থার শিকার হন। সে নামতে চেষ্টা করলে তার হাত টেনে ধরে ওই বাসের হেলপার। তখন হাতে থাকা টিফিন বক্স দিয়ে পরিবহন কর্মীকে আঘাত করে বাস থেকে লাফিয়ে নামে ওই ছাত্রী। বাসটি ৪/এ নম্বর রুটে সদরঘাট থেকে গাজীপুর অবধি চলাচল করে।

সেদিন ওই ছাত্রীর হাতে থাকা একটা স্টিলের টিফিন তাকে বাঁচিয়ে দিলেও প্রতিনিয়ত পরিবহণ কর্মিদের হাতে হয়রানীর স্বীকার হচ্ছে হাজারও নারী। কিন্তু এর প্রতিরোধ বা প্রতিকার কী জানা আছে কারও?

কড়া অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন। তারপরেও দিনদিন বেড়ে চলা এ হয়রানি কিছুতেই কমিয়ে আনা যাচ্ছেনা। আর বিষয়টি দেখেও যেন না দেখার ভান করছেন পরিবহণ মালিকরা।

যদিও বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, রেডিও ও টেলিভিশনে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। তারপরেও কী এর কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে? নাকি উসকে দেয়া হচ্ছে অপরাধীদের। এ নিয়েও নানা জনের রয়েছে নানামত।
এমটি নিউজ/এপি/ডিসি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে