বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৫, ০২:১৭:১৯

মনোনয়ন বঞ্চিতরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন

মনোনয়ন বঞ্চিতরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন

মসিউর রহমান খান : পৌরসভা নির্বাচনে দলের মনোনয়নবঞ্চিতদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পথ সুগম হয়েছে। এবার এক দল থেকে একাধিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়ার সুযোগ বন্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়াও মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ৩ ডিসেম্বরের আগেই রাজনৈতিক দলকে তার চূড়ান্ত প্রার্থী নির্ধারণ করতে হচ্ছে। পৌর নির্বাচনের সংশোধিত পরিচালনাবিধি অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়েই প্রার্থীর দলীয় পরিচয় জানাতে হবে। সঙ্গে জমা দিতে হবে দলের মনোনয়নের পক্ষে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়নপত্র। এর ফলে দল থেকে টিকিট না পেলেও তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন এবং পর্যাপ্ত সময় পাবেন। আইনে সরাসরি এ বিষয়ে কিছু উল্লেখ না থাকলেও ইসি সচিবালয়ের ঊর্ধ্বর্তন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। সংসদ নির্বাচনের আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) আলোকে পৌর নির্বাচনে বিধি সংশোধন করা হলেও জাতীয় নির্বাচনে এক দল থেকে একাধিক ব্যক্তিকে প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। পরে বাছাই শেষে প্রতীক বরাদ্দের আগে একজনকে চূড়ান্ত করার সুযোগ পায় রাজনৈতিক দলগুলো। দলের বাকি প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাওয়ার বিধান রয়েছে সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে। জানতে চাইলে ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়েই প্রার্থীকে দলের পক্ষে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষরিত প্রত্যয়নপত্র সংযুক্ত করতে হবে। বাছাইয়ের সময় দল মনোনীত কোনো প্রার্থীর পক্ষে সংশ্লিষ্ট দলের প্রত্যয়নপত্র না থাকলে তার মনোনয়নপত্র বাতিল বলে গণ্য হবে। নির্বাচন কমিশন থেকে বিধিমালা সংশোধনকালে প্রথমে জাতীয় নির্বাচনের মতোই পৌর নির্বাচনে দলের মনোনয়নবঞ্চিতদের প্রার্থী হওয়ার পথ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সংশোধিত বিধিমালা আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ে পাঠানোর সময়েও এ বিধানটি ছিল। তবে দ্বিতীয় দফায় বিধি সংশোধনকালে এ বিষয়টিতে পরিবর্তন আনা হয়। ফলে দলের মনোনয়নবঞ্চিতদের এখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে কোনো বাধা থাকছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহওনেওয়াজ বলেন, সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রার্থী দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। এর আগেও এসব নির্বাচনে বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে সমর্থন দেওয়া হতো। এবার সরাসরি মনোনয়নের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে স্থানীয়ভাবে এ নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নির্দলীয় ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হয়ে প্রার্থী হতেন। এসব বিবেচনায় নিয়েই স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে কমিশন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি আরও বলেন, সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসূচক সই বাধ্যতামূলক। কমিশন এখানেও বিষয়টি সহজ করে দিতে মাত্র ১০০ ভোটারের সমর্থনের বিধান সংযোজন করেছে। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ৩ ডিসেম্বর। বাছাই হবে ৫ ও ৬ ডিসেম্বর। একটি পৌরসভার মেয়র পদে এক দল থেকে একজনই মনোনয়নের ফলে রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন কর্তৃপক্ষ এবং প্রার্থীকে বিশেষ সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন নির্বাচন-সংশ্লিষ্টরা। তারা জানিয়েছেন, ঋণখেলাপি বা অন্য কোনো কারণে কোনো দলের মনোনীত ব্যক্তির প্রার্থিতা বাতিল হলে ওই দলের প্রতীক অন্য কাউকে বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগ থাকবে না। এ নিয়মের কারণে রাজনৈতিক দলের প্রার্থী বাছাই নিয়ে 'মনোনয়ন বাণিজ্য' কিছুটা হলেও বন্ধ হবে বলে তারা মনে করছেন। এদিকে গতকাল বুধবার ইসি সচিবালয় থেকে নিবন্ধিত রাজনৈতিক সব দলের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠির সঙ্গে ২৩৪ পৌরসভার রিটার্নিং কর্মকর্তার নামের তালিকা, সংশোধিত নির্বাচন পরিচালনাবিধি এবং আচরণবিধিমালা, পৌরসভা নির্বাচনের তফসিলসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহ করা হয়েছে। গতকাল ইসি সচিবালয় থেকে ঘোষিত তফসিলের অধীনেই নতুন আরও দুটি পৌরসভার নাম সংযুক্ত হয়েছে। এ দুই পৌরসভার মধ্যে রয়েছে রাজশাহীর নওহাটা এবং গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভা। মঙ্গলবার ঘোষিত ২৩৪ পৌরসভার তফসিলে যাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ৪২ জন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ১৩৩ জন এবং ৫৯ জন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রয়েছেন। কমিশন সদস্যরা জানিয়েছেন, এর আগে অনুষ্ঠিত জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর হয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কমিশনার জানান, সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার মন্ত্রী ও এমপিদের পছন্দের কর্মকর্তারাই বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন। এসব কর্মকর্তা ইসির নির্দেশ বাস্তবায়নে কতটা আন্তরিক হবেন তা নিয়ে কিছুটা হলেও সন্দেহ রয়েছে। যদিও কমিশনের যথেষ্ট নিজস্ব জনবল নেই, যাতে সব পৌরসভায় নিজেদের কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যায়। রাজনৈতিক দলের মনোনয়নের ক্ষেত্রে সংশোধিত এই বিধানের যৌক্তিকতা সম্পর্কে ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার এক ঊর্ধ্বর্তন কর্মকর্তা বলেন, দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের আয়োজন করতে গিয়ে ইসি এবার নানা জটিলতার সম্মুখীন হচ্ছে। এর পরও ব্যালট পেপার মুদ্রণসহ আরও অনেক চাপ কমিশনের সামনে রয়েছে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই এক দল থেকে একাধিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়ার সুযোগ এবার বন্ধ করা হয়েছে। কারণ এর ফলে নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত ভোগান্তি পোহাতে হয়। ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশে প্রথমবারের মতো দলভিত্তিক পৌরসভা নির্বাচনের এই নতুন নিয়মটি নিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে ব্যাপক অস্পষ্টতা রয়েছে। এমনকি ইসির নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারাও বিষয়টি ভালোভাবে অবহিত নন। যে কারণে তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল বুধবার বিভিন্ন দল ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের পক্ষ থেকে ইসি কার্যালয়ে গিয়ে খোঁজ-খবর নিতে দেখা গেছে। এমনকি সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদেরও দ্বারস্থ হচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তফসিল ঘোষণার ঠিক আগমুহূর্তে তড়িঘড়ি করে পরিচালনাবিধি প্রস্তুতের কারণেই এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। ইসি সচিবালয়ের ঊর্ধ্বর্তন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এবারে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কেননা, একটি পৌরসভায় একজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার সুযোগ পাবে একটি দল। ঋণখেলাপি বা অন্য কোনো কারণে কোনো প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হলে ওই দলের প্রতীক অন্য কোনো প্রার্থীকে দেওয়ার বিকল্প সুযোগ থাকছে না। সংশোধিত নতুন আইনে বলা হয়েছে_ রাজনৈতিক দলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের কাছ থেকে বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি প্রার্থী মনোনয়ন দেবেন। কোনো দল একাধিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিলে সেই দলের মনোনয়ন বাতিল করা হবে। রাজনৈতিক দল থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম ও পদবি তফসিল ঘোষণার ৫ দিনের মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দিতে হবে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হলে ওই ব্যক্তিকে ১০০ ভোটারের সমর্থনসূচক সই সংগ্রহ করে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দিতে হবে। তবে কোনো ব্যক্তি আগে পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়ে থাকলে তার ক্ষেত্রে এ সমর্থনসূচক সই লাগবে না। আইনে এ বিষয়টি সরাসরি উল্লেখ না থাকার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ইসির যুগ্ম সচিব (আইন) ড. মোহাম্মদ শাহজাহান বলেছেন, দু'একদিনের মধ্যেই রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের প্রশিক্ষণ শুরু হচ্ছে। সেখানেই এ বিষয়টি কমিশন সচিবালয়ের পক্ষ থেকে তাদের সামনে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে। ফলে এ নিয়ে কোনো জটিলতার আশঙ্কা নেই। তবে প্রার্থী ও সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোকে আগের তুলনায় অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। প্রচার সামগ্রী অপসারণে স্থানীয় প্রশাসনকে ইসির নির্দেশ :মঙ্গলবার তফসিল ঘোষণার সময়েই দেশের প্রায় সবক'টি পৌরসভার নির্বাচনী এলাকায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রচার উপকরণ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নিতে গতকাল সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপার ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপসচিব শামসুল আলম। -সমকাল ২৬ নভেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে