রবিবার, ১৩ মে, ২০১৮, ০৬:৪৫:২৯

দুর্যোগেও নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট

দুর্যোগেও নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট

নিউজ ডেস্ক : বর্তমানে গণমাধ্যমে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। একে ঘিরে সারাদেশের মানুষের মাঝে নানা আলোচনা ও প্রশ্ন। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এই স্যাটেলাইটের কাজ কি? বাংলাদেশের প্রথম এ স্যাটেলাইট মূলত একটি কমিউনিকেশন ও ব্রডকাস্টিং স্যাটেলাইট। 

এ স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া যাবে অন্তত ৪০ টি সেবা। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সেবার একটি, দুর্যোগের সময় টেলিযোগাযোগ সেবা বিঘ্নিত হলে স্যাটেলাইটটি দ্রুত যোগাযোগ স্থাপনের কাজে আসবে। ফলে দুর্যোগেও দেশের সব মানুষকে রাখা যাবে যোগাযোগের আওতায়। 

এই স্যাটেলাইটের মিশনের ১৫ বছর মেয়াদে সম্প্রচার, টেলিযোগাযোগ ও ডেটা কমিউনিকেশনের কাজে ব্যবহার করা যাবে। এ জন্য স্যাটেলাইটটিতে রয়েছে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার।

বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের ব্যবস্থাপনার জন্য রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ‘বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড’ (বিসিএসসিএল) নামে একটি কোম্পানি গঠন করেছে সরকার। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, স্যাটেলাইটটির ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে ১৪টি সি ব্যান্ড এবং ২৬টি কেইউ ব্যান্ডের। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের মিশন লাইফ ১৫ বছর এবং ডিজাইন লাইফ ১৮ বছর।

বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটটি ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চ প্যাড থেকে বাংলাদেশ সময় শুক্রবার দিবাগত রাত ২টা ১৪ মিনিটে স্পেসএক্স-এর ফ্যালকন-৯ রকেটের ব্লক ফাইভের মাধ্যমে সফল উৎক্ষেপণ করা হয়। মহাকাশের ১১৯.১ পূর্বদ্রাঘিমাংশে স্থাপিত হবে স্যাটেলাইটটি। এটি নিয়ন্ত্রণের জন্য গাজীপুর ও রাঙামাটিতে গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের তথ্যমতে, এ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ডিটিএইচ (ডাইরেক্ট টু হোম) ডিশ সার্ভিস, ভিডিও সম্প্রচার করা যাবে। এ ছাড়া ভি-স্যাট নেটওয়ার্ক, ব্রডব্যান্ড, কমিউনিকেশন ট্র্যাংক সুবিধাও পাওয়া যাবে।

ডিটিএইচ: কেইউ ব্যান্ডের মাধ্যমে এই সেবা দেওয়া হবে। ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ডিজিটাল টিভি ও রেডিও সম্প্রচার পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। গ্রাহক ছোট একটা অ্যান্টেনা দিয়ে এ সেবা নিতে পারবেন।

ভিডিও সম্প্রচার: স্যাটেলাইটের সি ব্যান্ডের মাধ্যমে এ সেবা দেওয়া হবে। এ সেবার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের কাভারেজ এরিয়ার যেকোনও জায়গায় ভিডিও সম্প্রচার করা সম্ভব হবে।

ভি-স্যাট নেটওয়ার্ক: স্যাটেলাইটের এ সেবার মাধ্যমে যেকোনও সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব সুরক্ষিত নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারবে। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট সি ব্যান্ডের মাধ্যমে এ সেবা দিতে পারবে।

ব্রডব্যান্ড: বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের কেইউ ব্যান্ডের বিমে এ সেবা পাওয়া যাবে। এর মাধ্যমে যেকোনও প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব ইন্টারনেট সুরক্ষিত রেখে ব্যবহার করতে পারবে।

কমিউনিকেশন ট্র্যাংক: বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের সি ব্যান্ডের মাধ্যমে এ সেবা দেওয়া যাবে। এর মাধ্যমে দুর্গম এলাকায় টেলিকমিউনিকেশন ও মোবাইল কমিউনিকেশন সেবা পৌঁছে দেওয়া যাবে।

বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ পরবর্তী বার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, এ স্যাটেলাইট দিয়ে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান, কাজাকিস্তান এবং উজবেকিস্তানের অংশ বিশেষে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।

বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট কবে নাগাদ বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হবে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম  বলেন, ‘এখনও বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের অনেক কাজ বাকি আছে। সেগুলো শেষ হলে তখন আমরা ঠিক করবো কবে নাগাদ বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হবে।’

স্যাটেলাইট বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে বলে জানান ন্যানো স্যাটেলাইট ‘ব্র্যাক অন্বেষা’র প্রকৌশলী আবদুল্লাহ হিল কাফি। তিনি বলেন, ‘কার্যক্রমের ধরন অনুসারে স্যাটেলাইটও বিভিন্ন রকমের স্যাটেলাইট বানানো হয়। যেমন আর্থ অবসারভেশন স্যাটেলাইট, কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট, নেভিগেশন স্যাটেলাইট, ওয়েদার স্যাটেলাইট। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আবহাওয়া নিয়ে গবেষণা, পূর্বাভাষের জন্য যেসব স্যাটেলাইট ব্যবহার হয়, সেগুলো ওয়েদার স্যাটেলাইট হিসেবে পরিচিত।’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু-১ কমিউনিকেশন ও ব্রডকাস্টিং স্যাটেলাইট। মানে যোগাযোগের কাজে এটি ব্যবহার করা সম্ভব হবে। এটি দিয়ে আর্থ অবসারভেশন, নেভিগিয়েশন বা ওয়েদারের কোনও কাজ করা সম্ভব হবে না।’

আবদুল্লাহ হিল কাফি বলেন, ‘আমরা যতটুকু জেনেছি, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে ১৪টি সি ব্যান্ড, ২৬টি কেইউ ব্যান্ডের। কেইউ ব্যান্ডের ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জ ১২ থেকে ১৮ গিগাহার্জ। সি ব্যান্ডের ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জ ৪ থেকে ৮ গিগাহার্জ। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের অবস্থান হবে ইন্দোনেশিয়ার উপরে, এ কারণে বাংলাদেশ থেকে সিগ্যানাল পাওয়া যাবে ৩০ ডিগ্রি কোণে (অ্যাঙ্গেল)।’

আবদুল্লাহ হিল কাফি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো এখন বিদেশি স্যাটেলাইটের উপর নির্ভরশীল। এখন আমাদের দেশের স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচার সম্ভব হবে। তবে কেইউ ব্যান্ডে সমস্যা হচ্ছে ঝড়বৃষ্টিতে সিগ্যানাল কিছুটা বিঘ্নিত হয়।’

সম্প্রচার ছাড়াও টেলিযোগাযোগ কাজেও স্যাটেলাইটটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও জানান আবদুল্লাহ হিল কাফি। তিনি বলেন, ‘দেশের যেসব এলাকায় ক্যাবলের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়নি, সেখানে স্যাটেলাইটটি মাধ্যমে যোগোযোগ স্থাপন করা সম্ভব হবে। 

তবে স্যাটেলাইট যোগাযোগ ব্যয়বহুল, এক্ষেত্রে সরকার কী ধরনের ফি নির্ধারণ করবে, তার উপর নির্ভর করছে খরচের বিষয়। এছাড়া দুর্যোগের সময় টেলিযোগাযোগ সেবা বিঘ্নিত হলে স্যাটেলাইটটি দ্রুত যোগাযোগ স্থাপনের কাজে আসবে। বর্তমানে আমরা সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে ইন্টারনেটসহ টেলিযোগাযোগ করছি, কোনও কারণে এটি বিঘ্নিত হলে বিকল্প যোগাযোগে এই স্যাটেলাইট কাজে আসবে।’
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে