রবিবার, ১৩ মে, ২০১৮, ১০:১২:৫৮

আবারও রাজনীতিতে সরব হচ্ছেন লতিফ সিদ্দিকী!

আবারও রাজনীতিতে সরব হচ্ছেন লতিফ সিদ্দিকী!

নিউজ ডেস্ক : আওয়ামী লীগ ও মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কৃত নেতা আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী আবার রাজনীতিতে সরব হচ্ছেন! আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতারও আভাস দিয়েছেন ডাকসাইটের এই নেতা। গত শুক্রবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলনে যোগ দেন তিনি। দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর রাজনৈতিক দৃশ্যপট থেকে আড়ালে থাকলেও তার সমর্থক ও অনুসারীরা এখনো তার সাথেই আছেন বলে মনে করেন সাবেক এই মন্ত্রী। সমর্থক ও অনুসারীদের সামনে রেখেই আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী আগামী নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে পারেন!

কালিহাতী উপজেলার বাংড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসমত আলীর গণসংবর্ধনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে তিনি এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন। গত ৫ মে কালিহাতীর ইছাপুর শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এই সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। 

চলতি বছর ২৯ মার্চ ওই ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে হাসমত আলী আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীকে পরাজিত করেন। হাসমত আলী কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কালিহাতি উপজেলা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে তিনি ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ায় দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়।

এদিকে, গত শুক্রবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের সম্মেলনে দর্শক সারির প্রথম দিকেই লতিফ সিদ্দিকীকে বসা অবস্থায় দেখা গেছে। তার বাম পাশে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম আর ডান পাশে দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক দীপু মনিকে বসা অবস্থায় দেখা গেছে।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে টাঙ্গাইল সমিতি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে হজ, মহানবী (স.) ও তাবলিগ জামায়াত এবং প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে কটূক্তি করে ফেঁসে যান আবদুল লতিফ সিদ্দিকী।

দেশে ও দেশের বাইরে তাকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন ও ইসলামিক সংগঠনগুলো লতিফ সিদ্দিকীর বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করে। এ ঘটনার পর লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন আদালতে মোট ২২টি মামলা হয়। এরমধ্যে ১৭ মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। পরে তিনি দেশে এসে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। দেশব্যাপী তুমুল আন্দোলনের মুখে তার মন্ত্রিত্ব কেড়ে নিয়ে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করে আওয়ামী লীগ।

গেল বছর ২৯ জুন আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী কেন্দ্রীয় কারাগারের অধীনে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেল থেকে মুক্তি পান। দীর্ঘদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল লতিফ সিদ্দিকী আবার রাজনীতিতে আসছেন। পাশাপাশি আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছেন।

গত ৫ মে লতিফ সিদ্দিকী সেটাই জানান দিলেন। নতুন করে রাজনীতিতে সরব হওয়ার বিষয়টি এখন অনেক পরিষ্কার বলে মনে করছেন কালিহাতীর জনগণ।

লতিফ সিদ্দিকী দল থেকে বহিষ্কার হওয়ার বিষয়টিকে মা-সন্তানের মান-অভিমানের সাথে তুলনা করে বলেন, কোনো সন্তান যখন ভুল করে তখন মা তাকে বকাঝকা করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। তাই বলে কি কোনো মা তার সন্তানকে মন থেকে বের করে দেয়?

তিনি বলেন, আমিও আওয়ামী লীগ ছাড়িনি, আওয়ামী লীগও আমাকে ছাড়েনি। আমিতো এর আগেও পাঁচবার দল থেকে বহিষ্কার হয়েছি। দল বহিষ্কার করলেওতো আর দলকে বহিষ্কার করা যায় না।

লতিফ সিদ্দিকী তার বক্তৃতায় বলেন, আমার কাছে মতামত চাওয়া হয়েছে, আমি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসব কিনা। আচ্ছা এ ব্যাপারে মতামত বা সিদ্ধান্ত দেয়ার আমি কে? মতামত দেবে জনগণ। আমি সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতা রাখি না। সিদ্ধান্ত দেবে সময়। সিদ্ধান্ত দেবে পরিবেশ। বঙ্গবন্ধুর সাথে যেমন বাংলাদেশের সম্পর্ক, কালিহাতীর সাথে তেমন আমার সম্পর্ক।

শেখ হাসিনার প্রশংসা করে তিনি বলেন, আমি যখন টাঙ্গাইলে আসি তখন আমার নিরাপত্তার জন্য পুলিশ দিয়ে রাখে। তার মানে নেত্রী আমাকে কাজে লাগাবে। নেত্রীর প্রতি আমার আস্থা আছে। আপনারাও শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রাখুন।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে লতিফ সিদ্দিকীর সহধর্মিণী লায়লা সিদ্দিকীও বক্তব্য দেন। তার বক্তৃতায় কালিহাতীর রাজনীতিতে লতিফ সিদ্দিকীর আগমনী বার্তা আরো স্পষ্ট হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের সাথে যতই ষড়যন্ত্র হোক না কেন আপনারাও আমাদের ছাড়বেন না, আমরাও আপনাদের ছাড়বো না। আপনাদের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে চাই লতিফ সিদ্দিকী, আমিও আপনার দিকে তাকিয়ে আছি।

তিনি বলেন, আমরা মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত লতিফ সিদ্দিকীকে কালিহাতীর মাটিতে দেখতে চাই। নেত্রীর উপর আমাদের আস্থা আছে। ইনশাআল্লাহ, আমরা আবার আসব।

কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগকে উন্নয়নের গতিধারায় ফিরিয়ে আনতে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বা তার সহধর্মিণীর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বর্তমান স্থানীয় সংসদ সদস্য হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারির নানা কর্মকাণ্ডে উপজেলা আওয়ামী লীগ নাখোশ। ফলে বর্তমান এমপি’র সাথে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের বৈরিতা তুঙ্গে পৌঁছেছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা আগামীতে লতিফ সিদ্দিকীকে সামনে নিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চাইছেন। তৃণমূলের মনোভাবও একই। আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে সামনে নিয়ে আসার অংশ হিসেবেই এই সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছিল বলে মনে করছেন সাধারণ নেতাকর্মীরা।

লতিফ সিদ্দিকী রাজনীতিকে সরব হওয়ার ব্যাপারে কথা হয় কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মোল্লার সাথে। তিনি বলেন, লফিত সিদ্দিকী দলে আসার বিষয়টি আমার কাছে ‘প্রজেটিভ লাগছে’। সরকার বিভিন্ন সময় তাকে সাপোর্ট দিচ্ছে। লতিফ সিদ্দিকী কালিহাতীতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন।

আনোয়ার হোসেন দাবি করে বলেন, উপজেলার আওয়ামী লীগের ৮০ ভাগ লোক তাকে চাচ্ছেন এবং তিনি যাতে দলে ফিরে আসুক। এছাড়া সাধারণ জনগণ লতিফ সিদ্দিকী চাচ্ছেন।

তিনি বলেন, ছাত্রলীগ সম্মেলনেও লতিফ সিদ্দিকী ভিআইপিতে বসেছিলেন। দাওয়াত ছাড়া তিনি কখনও ছাত্রলীগ সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করেনি। দলের ভেতরে এখন কোন্দল এবং তিনটি গ্রুপিং রয়েছে। লতিফ সিদ্দিকী আসলে দলের গ্রুপিং এবং কোন্দল থাকবে না। বিভিন্ন কারণে আবার মনে হচ্ছে তিনি দলে ফিরবেন। আমরা শতভাগ আশাবাদি তিনি আবারও দলে আসছেন এবং রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন।

এ বিষয়ে কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজহারুল ইসলাম তালুকদার বলেন, উনি (লতিফ সিদ্দিকী) দলে ফিরবেন কিনা এ বিষয়টি আমার জানা নেই। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলতে পারবেন। লতিফ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের একজন বহিষ্কৃত নেতা।

স্থানীয় সংসদ সদস্য হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারি বলেন, একজন বহিষ্কৃত নেতার সাথে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে থাকা তার মোটেও ভালো হয়নি। কারণ আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়ে যিনি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন, তার সংবর্ধনায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের থাকা ঠিক হয়নি।

তিনি দাবি করে বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাথে আমার কোনো কোন্দল নেই। কে দলে আসবেন এটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করবেন।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে