‘সেই সুযোগ নেই’
ঢাকা : দলীয়ভাবে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠেয় পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপি ভোট পেছানোর ‘শর্ত’ দিলেও তা পূরণের সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক।
দেশের ২৩৬টি পৌরসভায় ৩০ ডিসেম্বর ভোটের তারিখ রেখে মঙ্গলবার তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ।
চারদিন পর শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে পৌর নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরেন দলের মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন।
তিনি জানান, পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। তবে সেজন্য ভোট ১৫ দিন পিছিয়ে পুনঃতফসিল ঘোষণাসহ কয়েকটি শর্ত নির্বাচন কমিশনকে পূরণ করতে হবে।
নির্বাচন পেছানোর বিএনপির এই দাবির বিষয়ে আবদুল মোবারক সাংবাদিকদের বলেন, ‘যে কোনো আবদার করতে তো অসুবিধা নেই। কিন্তু এ আবদার রাখা যাবে কিনা সেটা দেখার বিষয়। ভোট পেছানোর সুযোগ নেই।’
২৪ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার সময় ডিসেম্বরের মধ্যে পৌরসভার ভোট শেষ করার কারণ ব্যাখ্যা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ভোটার হালনাগাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হবে ৩১ জানুয়ারিতে, ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি ও মার্চে এইচএসসি পরীক্ষা থাকায় জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে ভোট করা সম্ভব হবে না।
পৌর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বুধবার গুলশানে নিজের কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটি ও জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এরপর বৃহস্পতিবার তিনি বসেন ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গে, যার সিদ্ধান্ত শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে ভোটের দাবিতে বিএনপি সংসদ নির্বাচন বর্জন করলেও আগে-পরে স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনেই অংশ নিয়েছে।
সর্বশেষ গত এপ্রিলে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিলেও ভোটগ্রহণের মাঝপথে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে তা বর্জনের ঘোষণা দেন বিএনপিসমর্থিত প্রার্থীরা।
পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের নীতি নির্ধারণে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ ও পার্লামেন্টারি বোর্ডের সদস্যরাও বৃহস্পতিবার যৌথ সভায় বসে পৌর নির্বাচনে একক প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মেয়র প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের জেলা কমিটি, উপজেলা কমিটি, শহর বা পৌর কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা স্থানীয় সাংসদদের পরামর্শ নিয়ে একজন প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। মনোনীত প্রার্থীর নাম ৩০ নভেম্বরের মধ্যে দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয়ে পাঠাতে হবে।
পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় পার্টিও প্রার্থী মনোনয়নের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ২৯ নভেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেবেন দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। প্রার্থী ঠিক করে তাদের মনোনয়ন ফরম দেওয়া হবে।
নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা এবার প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীক নিয়ে পৌর নির্বাচনে ভোটে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবেন। তবে সংসদের মতো স্থানীয় নির্বাচনেও ভোটের বাইরে থাকছে জামায়াত।
মেয়র পদে দলীয় প্রার্থীর পাশাপাশি ১শ’ ভোটারের সমর্থনতালিকা দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থিতার সুযোগ রাখা হয়েছে। সাবেক মেয়রদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে সমর্থনতালিকা লাগবে না। সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে আগের মতো নির্দলীয়ভাবে ভোটের বিধান বহাল রয়েছে।
দলের ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধির ‘ক্ষমতা’ শেষ হচ্ছে
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, পৌরসভা নির্বাচনে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় রয়েছে।
নতুন বিধি অনুযায়ী, মেয়র পদে দল মনোনীত প্রার্থীদের প্রত্যয়ন করতে পারবে সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বা সম পর্যায়ের পদাধিকারী বা তাদের কাছ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি।
ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম রিটার্নিং অফিসার ও নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠাতে হবে তফসিল ঘোষণার পাঁচ দিনের মধ্যে, যার সময় শেষ হচ্ছে শনিবার।
তবে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর কোনোটি স্থানীয় পর্যায়ে কোনো ব্যক্তিকে ক্ষমতা দেওয়ার ঘোষণা দেয়নি; তারা কেন্দ্র থেকেই প্রার্থী মনোনয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
শুক্রবার পর্যন্ত কোনো দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশন ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তালিকা জমা দেওয়া হয়নি বলেও জানান কমিশনের কর্মকর্তারা।
এবিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক বলেন, ‘দলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বা সমপদাধিকারীর প্রত্যয়ন নিয়ে ৩ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা নেই। কিন্তু এর বাইরে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যয়নের ক্ষমতা কাউকে দেওয়া হলে তার নাম, নমুনা স্বাক্ষর ও পদবী ২৮ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় ও ইসিতে পাঠাতে হবে।’
বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রার্থী সংগ্রহ
এদিকে পৌরসভা নির্বাচনের প্রার্থী সংগ্রহ করতে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট বদরুদ্দোজা চৌধুরী। যোগ্য ব্যক্তি বিকল্পধারার সদস্যপদ নিয়ে কুলা প্রতীকে অংশ নিতে পারবেন বলে বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে। এজন্য আট বিভাগে যোগাযোগের নম্বরও দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, প্রার্থী হতে দলীয় সদস্যপদের সময়সীমা উল্লেখ না থাকায় নিবন্ধিত দলের নামে এখন অনেকে মনোনয়ন বাণিজ্যের সুযোগ নেবে। সেই সঙ্গে নিজের দল থেকে মনোনয়নবঞ্চিত হলে ভোটের আগেই ভিড়বে অন্য দলে।
অবশ্য দলীয়ভাবে একজনকে মনোনয়নপত্র দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ায় এবার মনোনয়নবঞ্চিতদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতেও বাধা নেই।
২৮ নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএম/ডিআরএ