শনিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৫, ১০:৪৩:২৮

‘রাব্বি আঙ্কেল, আমি আম্মুর কাছে যাব’

‘রাব্বি আঙ্কেল, আমি আম্মুর কাছে যাব’

নিউজ ডেস্ক : ‘রাব্বি আঙ্কেল আমি আম্মুর কাছে যাব’- এমন আকুতিই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল শিশু রুপার (৫)। চিনে ফেলায় পাষণ্ড অপহরণকারীরা গলাটিপে হত্যা করে তাকে। আর একমাত্র বুকের ধন হারিয়ে রুপার মা লিপি আক্তার বাকশূন্য, পাগলপ্রায়। রুপার জন্য বিলাপ করছেন আর মূর্ছা যাচ্ছেন। রুপার বাবা মালয়েশিয়া প্রবাসী হজরত আলী এই দুঃসংবাদ বিশ্বাস করতে পারছেন না। তাই বারবার ফোন করে রুপাকে চাচ্ছেন আর হাউমাউ করে কাঁদছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে অপহরণের মাত্র ১৭ ঘণ্টা পর শুক্রবার সকাল ৭টায় বাড়ির পাশেই লাশ মিলেছে শিশুশ্রেণীর ছাত্রী হাফছা আক্তার রুপার। রুপাকে জীবিত উদ্ধার করতে না পারলেও গ্রেফতার করা হয়েছে এক অপহরণকারীকে। রুপাকে ফিরিয়ে দিতে সাড়ে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করলেও অপহরণকারীদের চিনে ফেলায় তাকে হত্যা করা হয়।পুলিশের হাতে গ্রেফতারকৃত অপহরণকারী রাব্বি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমনটিই জানিয়েছে। আড়াইহাজার থানা পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, হাফছা আক্তার রুপা গিরদা নজরুল ইসলাম বাবু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুশ্রেণীর ছাত্রী। সে উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়নের গিরদা গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী হজরত আলী ও লিপি আক্তারের একমাত্র সন্তান।বৃহস্পতিবার দুপুরে রুপা বাড়ির পাশে খেলছিল। রুপার মা তাকে ডাকতে এসে দেখেন রুপা সেখানে নেই। এরপর আশপাশে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও রুপাকে পাওয়া যায়নি। ওই দিন সন্ধ্যায় গিরদা বাজারের জনৈক লোকমানের ফ্ল্যাক্সি লোডের দোকানে অপহরণকারীরা ফোন করে হাফছা আক্তার রুপার মা ও তার দাদিকে জানাতে বলে যে, যদি এক ঘণ্টার মধ্যে তাদেরকে সাড়ে তিন লাখ টাকা দেয়া হয় তবে রুপাকে ফেরত দেয়া হবে।অপহরণকারীদের এমন ফোন পেয়ে ওই দোকানের মালিক লোকমান ছুটে যান রুপার মা ও দাদির কাছে। লোকমান ঘটনাটি জানালে লিপি আক্তার ও তার শাশুড়ি স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় ঘটনাটি থানা পুলিশকে জানান। আড়াইহাজার থানা পুলিশ বিষয়টি অবগত হওয়ার পরপরই অপহৃত রুপার সন্ধানে গিরদাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। শুক্রবার ভোরে রুপাদের বাড়ির সামনের একটি রাস্তার পাশের খাদে রুপার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন এলাকাবাসী। সকাল পৌনে ৭টার দিকে পুলিশ রুপার মরদেহ উদ্ধার করে। গিরদা বাজারের ওই ফ্ল্যাক্সি লোডের দোকানে অপহরণকারীদের ফোনের সূত্র ধরেই পুলিশ গ্রেফতার করে একই এলাকার শাহজাহানের ছেলে রাব্বিকে। এ সময় রাব্বির বাবা শাহজাহানকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও পরে রহস্যজনক কারণে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে এলাকাবাসী জানান। আড়াইহাজার থানার ওসি সাখাওয়াত হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরপরই শিশু রুপাকে উদ্ধারে একাধিক টিম নিয়ে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাতে থাকি। মুক্তিপণের ফোনের সূত্র ধরেই রাব্বিকে গ্রেফতার করি।’ ওসি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাব্বি অপহরণের কথা স্বীকার করেছে এবং সে বলেছে রুপা তাদের চিনে ফেলায় তারা ভয়ে শিশুটিকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে। এই অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ৬-৭ জন জড়িত বলে গ্রেফতারকৃত রাব্বি পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। ওসি আরও জানান, হত্যার পরিকল্পনাকারীর নাম আমরা জানতে পেরেছি। সেসহ অন্য সহযোগীদের গ্রেফতারে পুলিশের কয়েকটি টিম অভিযানে রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, শিশুটিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। ২৮ নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএম/ডিআরএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে