রবিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৫, ০৪:৩৪:২৫

পৌর নির্বাচনেও বিএনপি-জামায়াত গাঁটছড়া!

পৌর নির্বাচনেও বিএনপি-জামায়াত গাঁটছড়া!

শফিক সাফি : নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাওয়ায় আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নিজেদের মার্কা ‘দাঁড়িপাল্লা’ নিয়ে লড়তে পারছে না। বাধ্য হয়েই দলটির প্রার্থীদের স্বতন্ত্র বা অন্য কোনো দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে তাদের প্রথম পছন্দ ‘ধানের শীষ’। এবারের পৌর নির্বাচনে ২৩৪টির মধ্যে ৫০টি দাবি করেছে জামায়াত। যদিও বিএনপি ১০ শতাংশ হিসেবে ২৫টির বেশি দিতে রাজি নয়। প্রশ্ন উঠেছে, যে দলের নিবন্ধনই নেই, তাদের এতগুলো আসন দিয়ে পৃষ্ঠপোষকতা কেন? বিএনপির সাফাই, জোট আর ভোটের রাজনীতিতে এটাই স্বাভাবিক। আর বিশ্লেষকদের মন্তব্য, স্বার্থের রাজনীতিতে সব কিছুই সম্ভব। বিএনপি তো একাই ২৩৪টিতে প্রার্থী দিতে পারে, তাহলে জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতা কেন-এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, জোটগতভাবে আওয়ামী লীগ নির্বাচন করতে পারলে বিএনপি কেন পারবে না? আওয়ামী লীগ যদি মহাজোটের শরিকদের আসন ছেড়ে দেয় তাহলে বিএনপি দিলে দোষ কোথায়? তিনি আরো বলেন, ‘জামায়াত কিছু পৌরসভা দাবি করছে। আমার বক্তব্য স্পষ্ট, জামায়াত নিবন্ধিত দল না হলে তারা কোনো ছাড় পাবে না। আর যদি দলটির কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয় তাহলে ভিন্ন কথা। সেখানে বিএনপি তাদের সমর্থন করবে কি করবে না সেটা ভবিষ্যৎই বলে দেবে।’ তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, একটি নির্দিষ্ট মতাদর্শ নিয়ে জামায়াত কাজ করে। যে যেভাবেই বলুক না কেন, তাদের দলের কর্মী-সমর্থকরা ফেলে দেওয়ার মতো নয়। যে কারণে ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করার পর এই জামায়াতকে সঙ্গে নিয়েই আওয়ামী লীগ আন্দোলন করেছিল। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ধরে নিলাম সারা দেশে জামায়াতের ভোট রয়েছে মাত্র ৫ শতাংশ। এখন দলটিকে জোট থেকে বের করে দিলে এই ভোট কি বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে পড়বে? অবশ্যই না। তবে জোটে থাকলে তারা বাধ্য হবে বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে। আর নির্বাচনী খেলায় ৫ শতাংশ ভোট জয়-পরাজয়ের হিসাব-নিকাশ উল্টে দিতে পারে। জানিপপের চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, ৯১ সাল থেকে বিএনপি আর আওয়ামী লীগ জোটবদ্ধ রাজনীতি করে আসছে। তাই চাইলেই কেউ কাউকে ছেড়ে দিতে পারছে না। যেমন নানা বিতর্কের পরও এরশাদকে ছাড়েনি আওয়ামী লীগ। আবার ২০ দলীয় জোটে রয়েছে জামায়াত। জোটবদ্ধ রাজনীতির পুরো প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সব সময় ছোট দলগুলোকে ছাড় দিয়ে আসছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এত কিছুর পরও বিএনপি কেন জামায়াতকে ছাড়তে পারছে না? বিষয়টা হলো-কংক্রিটের বন্ধন ছাড়ানো একটু কঠিন। সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না। তবে এ কথা দিবালোকের মতো স্পষ্ট, স্বার্থের রাজনীতিতে সব কিছুই সম্ভব।’ বিএনপির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মার্কা সংকটের কারণে জামায়াতের প্রার্থীরা কোন প্রক্রিয়ায় নির্বাচন করবেন, সে বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে। বিএনপির এক নেতা জানান, জামায়াত নেতারা জানিয়েছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী দিলে দল ও জোটের সুবাদে আসা ভোটের একটি অংশ বাদ পড়ার আশঙ্কা রয়েছে তাদের। জোটের শরিক কোনো দলের ‘মার্কা’ নিয়ে নির্বাচন করলে সেটাও জামায়াতের জন্য কতটা সুফল বয়ে আনবে, এ নিয়েও তারা চিন্তিত। তাই ধানের শীষই সবচেয়ে নিরাপদ মার্কা বলে তারা মনে করছেন। এটিও যদি নির্বাচন কমিশনের কারণে সম্ভব না হয়, ২০ দলীয় জোটে ইসলামী ঐক্যজোট, কল্যাণ পার্টি ও বাংলাদেশ ন্যাপের নিবন্ধন রয়েছে। তাদের সহযোগিতাও নিতে পারে দলটি। তবে ওই নেতা জানান, ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা সম্ভব না হলে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ার দিকেই মনোযোগী হবে জামায়াত। জামায়াত কতগুলো পৌরসভা দাবি করছে-জানতে চাইলে বিএনপির এক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, দলটির অবস্থান যেসব জায়গায় শক্তিশালী সেখানেই কেবল ছাড় দেওয়া হতে পারে। আর জোটের অন্যান্য দলের জন্য আট থেকে ১০টি ছাড়া হতে পারে। প্রার্থী বাছাইয়ের অগ্রগতি সম্পর্কে বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম জানান, প্রার্থী বাছাইয়ে স্বচ্ছতা আনার কারণে একটু দেরি হচ্ছে। খুব শিগগিরই তা জানানো হবে। জামায়াতকে কতগুলোতে ছাড় দেওয়া হচ্ছে-জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। -কালের কণ্ঠ ২৯ নভেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে