পৌর-নির্বাচনে বিকল্প পরিকল্পনা বিএনপির
হাবিবুর রহমান খান ও নজরুল ইসলাম : বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ২৩৬ পৌরসভাতেই মেয়র পদে বিকল্প বা ডামি প্রার্থী রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। শরিকদের যে কটি পদে ছাড় দেয়া হবে সেখানেও দলের ডামি প্রার্থী থাকবে। কেবল জোটের ভরসায় থাকবে না বিএনপি।
মূল প্রার্থীর পাশাপাশি বিকল্প প্রার্থীদের তালিকাও চূড়ান্ত করা হচ্ছে। তবে আগেভাগে তা প্রকাশ করা হবে না। কোনো কারণে দল বা জোটের শরিকদের মনোনীত প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল হলে বিকল্প প্রার্থীকেই সরাসরি সমর্থন জানাবে বিএনপি। শরিকদেরও ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে বলা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় রোববার বলেন, প্রথম কথা হচ্ছে- আমাদের দলের সব নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হলেও আমরা এ নির্বাচনে থাকব। তৃণমূলের মতামত নিয়ে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করার কাজ প্রায় শেষের দিকে। কোনো কারণে সরকার যদি নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে আমাদের দলীয় প্রার্থীদের প্রার্থিতা বাতিল করে সে ক্ষেত্রে আমাদেরও বিকল্প চিন্তা রয়েছে। দল মনোনীত প্রার্থীর পাশাপাশি প্রত্যেক জায়গায় আমরা বিকল্প প্রার্থীও রাখব। তবে কৌশলগত কারণে তাদের নাম আগেভাগে প্রকাশ করা হবে না। কোথাও প্রার্থিতা বাতিল হলে দল থেকে ওই বিকল্প প্রার্থীকে সমর্থন দেয়া হবে।
থানীয় সরকার আইন সংশোধন, বিশেষ করে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার পেছনে সরকারের অন্য কোনো মতলব রয়েছে বলে মনে করে বিএনপি। বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক জানান, ক্ষমতাসীনরা যে কোনোভাবে জয়ী হয়ে দেশে-বিদেশে তাদের জনপ্রিয়তা প্রমাণ করতে চাইবে। এটা করতে গিয়ে তারা নির্বাচনে আশ্রয় নিতে পারে নানারকম কারচুপির।
বিরোধী পক্ষের প্রার্থিতা বাতিলের মধ্য দিয়েই তা শুরু করতে পারে। ওই নেতার মতে, নির্বাচন কমিশন নানা অজুহাতেই যে কারও প্রার্থিতা বাতিল করতে পারে। যেহেতু একাধিক প্রার্থীর সুযোগ নেই সে ক্ষেত্রে বিএনপির প্রার্থিতা বাতিল করিয়ে ক্ষমতাসীনরা ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চাইবে। সম্ভাব্য এই কূটকৌশল মোকাবেলায় তারাও বিকল্প প্রার্থী দেয়ার এ কৌশল নিয়েছে।
সংশোধিত বিধি অনুযায়ী আসন্ন পৌর নির্বাচনে একই প্রতীক নিয়ে জোটগতভাবে অংশ নেয়ার সুযোগ নেই। তবে জোটগতভাবে সমর্থন জানানোর সুযোগ রয়েছে। নানা প্রেক্ষাপটে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের বর্তমান অবস্থা বেশ নাজুক। একসময়ে জামায়াতের মাঠপর্যায়ে শক্তি থাকলেও বিগত কয়েক বছরে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তাদের সাংগঠনিক শক্তি নেই বললেই চলে।
এ ছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের দলের পরিচয় নিয়ে ভোটারদের কাছে যাওয়াও এখন তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। সাধারণ ভোটারদের মধ্যে জামায়াতকে নিয়ে নেতিবাচক ধারণা গাঢ় হয়েছে। বর্তমানে দলটির গুরুত্বপূর্ণ কোনো নেতাই প্রকাশ্যে আসতে পারছেন না। জামায়াত বাদে এক এলডিপি ছাড়া জোটের অন্য শরিকদের সাংগঠনিক শক্তিও বলার মতো কিছু নয়।
এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান এককভাবে নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে মত দেন। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও কাছাকাছি মনোভাব দেখান। জোটের বৈঠকে তিনি বলেন, আশা করি, আপনারা সমন্বয় করে কাজ করবেন। ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে জোটগতভাবে সমর্থন জানাবেন। যদি আপনাদের কোনো যোগ্য প্রার্থী থাকে তাদের তালিকা দেবেন। আমলে নেয়া হবে।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে কৌশলগত কারণেই জোটের শরিকদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। তবে বিগত দিনের মতো প্রার্থী নিয়ে দরকষাকষির তেমন সুযোগ দেয়া হয়নি। জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতও ছিল অনেকটা নমনীয়।
অথচ বিগত উপজেলা ও সর্বশেষ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জামায়াতকে ডেকেও কাছে পাওয়া যায়নি। বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করে নিষ্ক্রিয় থাকেন দলটি নেতাকর্মীরা। এমনকি অনেক জায়গায় নিজেদের প্রার্থীও দাঁড় করিয়ে দেয়। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার জোটের বৈঠকে খালেদা জিয়া জামায়াতকে সতর্ক করে দেন। তিনি জামায়াত নেতা আবদুল হালিমকে উদ্দেশ করে বলেন, এবারও কি উপজেলা নির্বাচনের মতো করবেন? জবাবে আর সেরকম হবে না বলে জানান হালিম।
সূত্র জানায়, শরিকদের কাছ থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১০০টি পৌরসভায় তারা মেয়র পদে প্রার্থী দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। তবে পাশাপাশি তারা এটাও বলেছে, জোটনেত্রী যা দেবেন তাতেই সন্তুষ্ট থাকবে। কোনো দরকষাকষি করবে না। জোট নেতাদের এমন নমনীয় মনোভাবে শেষ পর্যন্ত ২০-২৫টি মেয়র পদে ছাড় দিতে পারে বিএনপি।
সূত্র জানায়, শরিকদের যে কটি পদে ছাড় দেয়া হবে তার বড় একটি অংশ পাচ্ছে জামায়াত। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় তারা দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে তারা দলীয় প্রার্থী দেবে স্বতন্ত্র হিসেবে। বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় জামায়াত মনোনীত প্রার্থীদের এলাকায় অবস্থান করাটাই দায় হয়ে পড়েছে।
নির্বাচনের মাঠে নামতে না পারলে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কম। সেই বিবেচনায় জামায়াতের পাশাপাশি বিএনপির পক্ষ থেকেও বিকল্প প্রার্থী দেয়া হবে ওই সব পৌরসভায়। একই কৌশল জোটের অন্য শরিকদের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা হবে। কোনো কারণে শরিকদের প্রার্থিতা বাতিল বা জয়ের সম্ভাবনা দেখতে না পেলে বিএনপির বিকল্প প্রার্থীকেই আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন জানানো হবে।
জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনু বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমাদের প্রার্থীরাই বিপুল ভোটে জয়ী হবেন। সরকার নির্বাচনে কারচুপি করার নানা চেষ্টা চালাবে। ভোটারদের সঙ্গে নিয়ে তাদের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করা হবে। -যুগান্তর
৩০ নভেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস