সোমবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৫, ১২:০৯:১২

‘তারানা আপা ফেসবুকটা খুলে দিননা, প্লীজ’

‘তারানা আপা ফেসবুকটা খুলে দিননা, প্লীজ’

ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী সাকা চৌধুরী এবং জামায়াত নেতা মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকরে দেশের সার্বিক নিরাপত্তা বজায় রাখতে সরকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। গত ১৮ নভেম্বরের পর থেকে বাংলাদেশে এখনো চালু হয়নি ফেসবুক, ভাইবার, মেসেঞ্জার, হোয়াটঅ্যাপ ও টুইটার। দুই সপ্তাহ হতে চললো সরকার এখনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর সবগুলো পথ বন্ধ রেখেছে। দেশের বর্তমান অবস্থা স্বাভাবিক হওয়ার পরেও ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বন্ধ থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সৃজনশীল মানুষ গড়ার আন্দোলন ‘আলোর মিছিল’এর নিবার্হী পরিচালক বইপ্রেমী জুবায়ের আল মাহমুদ রাসেল। এমটি নিউজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতে রাসেল বলেন, ‘দেশের মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে সরকার যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বন্ধ করে দিয়েছিলেন আমরা তখন মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে আসার পরেও ফেসবুকসহ সামাজিত মাধ্যমগুলো সরকার কেন বন্ধ রেখেছেন তা আমার বোধগম্য নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকার দেশে ফেসবুক বন্ধ রেখেছে কিন্তু এর ব্যবহার বন্ধ হয়নি। আমাদের সৃজনশীল তরুণ সমাজ তাদের ফেসবুক আইডির আইপি পরিবর্তন করে তারা ফেসবুক চালাচ্ছে। শুধু তাই নয় বন্ধ ফেসবুকে সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের ফ্যান পেজ নিয়মিত আবগ্রেড হচ্ছে। অপরদিকে যারা বিকল্প পদ্ধতিতে ফেসবুক চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতে আমি খুবই উদ্বিগ্ন।’ নিজের ফেসবুক আইডি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ফেসবুক বন্ধ হওয়ার পর আমি আমার ফেসবুক আইডির আইপি পরিবর্তন করে অন্যদের মতো করেই চালাচ্ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ গত ২৫ তারিখের পর আমি আর ফেসবুক ওপেন করতে পারছি না। আমি আমার ফোন নম্বর দিয়ে আইডিটি খুলেছিলাম। কিন্তু এখন ওপেন করতে গেলেই লেখা আসছে ‘ফোন নম্বরটি ভুল’। যার ফলে তিন যাবৎ বহু চ্ষ্টে করেও আমি ফেসবুকে বসতে পারিনি। আমার আইডি হ্যাক হয়েছে কিনা তাও জানি না। আমার আইডির বিরুদ্ধে সরকার কোন পদক্ষেপ নিয়েছে কিনা সেটাও বুঝতে পারছি না। নাকি ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আমাকে ব্লক করে দিয়েছে তাও জানি না। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ নিজের আইডিটি যদি ব্লক করে দেয় তাহলে তার কোন দুঃখ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সামাজিক মাধ্যমগুলো খুলে দেয়া সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। ফেসবুক বন্ধ করার অর্থ তরুণ প্রজন্মের কণ্ঠ রোধ করার অপচেষ্টা। সরকার তরুণ প্রজন্মকে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েই কিন্তু ক্ষমতায় এসেছে। আর সরকারের দেখানো সেই স্বপ্নের হাত ধরে আমরা যখন এগিয়ে যাচ্ছি, তখন সরকারই সেটা বন্ধ করে দিল! তাই গত ১৮ নভেম্বর থেকে বন্ধ হওয়া ফেসবুকসহ সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো অতিদ্রুত খুলে দিয়ে তরুণদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রদানের জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘তারানা আপা দয়া করে ফেসবুকটা খুলে দিননা, প্লীজ। আমার আইডি ব্লক হয়েছে তাতে দুঃখ নেই। আরেকটি আইড খোলা যাবে, কিন্তু ফেসবুক ওপেন করলে কোটি কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারীরা উপকার পাবে। অনলাইন পত্রিকাগুলোসহ যাদের ব্যবসা শুধুমাত্র ফেসবুকের উপর নির্ভশীল তারা উপকৃত হবে। তাই ফেসবুক খুলে দেয়া এখন সময়ের দাবী।’ প্রসঙ্গত, বইপ্রেমী রাসেল রাজশাহীর বাঘা-চারঘাট এবং নাটোরের লালপুর-বাগাতিপাড়ার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে স্কুল ভিত্তিক লাইব্রেরী গড়া ও বইপড়া কর্মসূচী পরিচালনার মাধ্যমে ২০১১ সাল থেকে সৃজনশীল মানুষ তৈরির জন্য বইপড়ার আন্দোল করে আসছেন। পাশাপাশি প্রতিবছর ওই সকল বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে বাংলাদেশকে রক্ষার জন্য স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে একটি নিরব আন্দোলন করে আসছেন। তিনি এখন পর্যন্ত রাজশাহীর বাঘা ও চারঘাট এবং নাটোরের লালপুর ও বাগাতিপাড়ার মোট ৪১টি স্কুলে তার এই আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন। উল্লেখ্য, বাঘার ওই যুবকের সৃজনশীল এই আন্দোলনের উপর গত বছর ১৫ই মার্চ বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোতে ‘এক তরুণের বইপড়ার আন্দোলন’ শিরোনামে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এরপর চলতি বছর ২০ সেপ্টেম্বর ‘বিনা পয়সায় বই বিলিয়ে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছেন বাঘার এক যুবক ‘শিরোনামে এমটি নিউজ২৪ ডট কমে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ৩০ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ/ এমআর/আরএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে