মঙ্গলবার, ০১ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৫:১০:২২

আবারো ভয়াবহ নাশকতার আশঙ্কা!

আবারো ভয়াবহ নাশকতার আশঙ্কা!

শিপন হাবীব : আবারও ভয়াবহ নাশকতার আশংকা প্রকাশ করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তাদের বিবেচনায়, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে সামনে বড় ধরনের হামলা হতে পারে রেলে। আশংকা করা হচ্ছে, রেলের নেটওয়ার্কিংয়ে জটিলতা সৃষ্টি, ইঞ্জিন, রেলস্টেশন ও বগিতে হামলা, অগ্নিসংযোগ, লাইন উপড়ে ফেলা ও ব্রিজ ভেঙে দেয়ার মতো ভয়াবহ নাশকতা হতে পারে। বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠী ও জামায়াত-শিবিরের সদস্যসহ পেশাদার অপরাধীরা নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে নাশকতার অন্যতম টার্গেট হিসেবে রেলওয়েকে বেছে নেয়ার পরিকল্পনা করেছে। এমন আশংকার পরিপ্রেক্ষিতে রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের যে বিচার চলছে তা বাধাগ্রস্ত করতে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা রেলওয়েতে আবারও নাশকতা চালাতে পারে এমন গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে। তবে যে কোনো ধরনের নাশকতা প্রতিরোধে রেলওয়ের আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছেন। রেলপথমন্ত্রী আরও বলেন, গত বছরগুলোতে বিএনপির নেতৃত্বে সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা রেলওয়েতে নাশকতা চালিয়ে প্রায় ২০০ কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট করেছে। তবে আবার নাশকতার চেষ্টা চালানো হলে কাউকেই রেহাই দেয়া হবে না। কঠোর হস্তে নাশকতাকারীদের দমন করা হবে। গোয়েন্দা সংস্থা ও রেলওয়ের নিজস্ব আইনশৃংখলা বাহিনীর তথ্যমতে, নাশকতাকারীরা আবারও রেলওয়েতে বড় ধরনের নাশকতা চালাতে পারে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সম্ভাব্য নাশকতা প্রতিরোধে ইতিপূর্বে অতিরিক্ত প্রায় ৯ হাজার আর্মস পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল। আবারও এসব বাহিনীকে মোতায়েন করা হবে।’ রেলওয়ে পুলিশের ডিআইজি এসএম রুহুল আমিন জানিয়েছেন, দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে নাশকতাকারীরা আবারও রেলওয়েতে নাশকতা চালাতে পারে। জামায়াত-শিবির তথা জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্যরা নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে রেলে বড় ধরনের হামলা ও অগ্নিসংযোগ করতে পারে। এমন আশংকা প্রতিরোধে ইতিমধ্যে রেলওয়ের আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের সতর্কাবস্থায় থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নিরাপত্তায় নিযুক্ত হচ্ছে নতুন করে নেয়া প্রায় ৭০০ রেলওয়ে পুলিশ। রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের নভেম্বর থেকে ’১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত রেলওয়েতে প্রায় ১৪০০ ছোট-বড় নাশকতার ঘটনা ঘটানো হয়। নাশকতকারীরা ট্রেনের ইঞ্জিন, বগি, স্টেশন, ব্রিজ ও লাইনে অগ্নিসংযোগ করে। এতে প্রায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এসব ঘটনায় রেলওয়ের বিভিন্ন থানায় ৯৪টি মামলা হলেও মূল পরিকল্পনাকারীদের গ্রেফতার করতে পারেনি রেলওয়ে পুলিশ। এ বিষয়ে রেলওয়ে পুলিশের ডিআইজি জানান, নাশকতার মামলায় অনেক আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে, অনেকে জেলে রয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। রেলওয়ে পুলিশ ও রেলপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের শেষের দিকে ২৩টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। নাশকতাকারীরা রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও খোদ কমলাপুর স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা ৪টি আন্তঃনগর ট্রেনে অগ্নিসংযোগ করে। এতে দুটি ইঞ্জিনসহ মোট ১৩টি বগি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। প্রধান প্রধান স্টেশনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটলেও নাশকতাকারী মূল পরিকল্পনাকারীদের এখনও গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, ঢাকা বিমানবন্দর ও কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, হেডকোয়ার্টার থেকে বার্তা পাঠানো হয়েছে, রেলওয়েতে আবারও নাশকতা হতে পারে। আগের নাশকতা ও তা প্রতিরোধের অভিজ্ঞতা থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছিল, অন্তত বড় বড় স্টেশনগুলোতে স্ক্যানিং মেশিন বসানোর জন্য। কিন্তু এখন পর্যন্ত এসব স্টেশনে কোনো স্ক্যানিং মেশিন বসানো হয়নি। ফলে সন্দেহজনক যাত্রীদের ও মালামাল যথাযথ তল্লাশি করা সম্ভব হচ্ছে না। দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব স্টেশনে স্ক্যানিং মেশিন বসানোর অনুরোধ জানান মাঠ পর্যায়ের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। এ প্রসঙ্গে রেলপথমন্ত্রী বলেন, গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলোতে সিসি ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে। সন্দেহজনক যাত্রীদের তল্লাশি করা শুরু হয়েছে। স্টেশন ও যাত্রীবাহী ট্রেনগুলোতে নিয়মিত বাহিনীর পাশাপাশি সাদা পোশাকের নিরাপত্তাকর্মীদের সতর্কাবস্থায় থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলোর প্রবেশ ও বাহির পথে অচিরেই স্ক্যানিং মেশিন বসানো হবে। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল রেলপুলিশের এসপি মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, আগের অভিজ্ঞতায় নাশকতাকারীরা কি কি করতে পারে সে সম্পর্কে ধারণা রয়েছে। নাশকতা প্রতিরোধে সতর্ক থাকতে ইতিমধ্যে প্রতিরোধকারী সংস্থার সদস্যদের বার্তা পাঠানো হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজ, স্টেশন, লাইন এলাকায় সতর্কাবস্থায় রয়েছেন তারা। স্থানীয় প্রতিনিধি, জেলা পুলিশ, আর্মড পুলিশ ও মেট্রো পুলিশ সমন্বয়ে ইতিমধ্যে এ বিষয়ে বৈঠক করা হয়েছে। সচেতন করা হচ্ছে লাইনসংলগ্ন এলাকায় বসবাসকারীদেরও। তাদেরকে নির্দিষ্ট কিছু মোবাইল ফোনের নম্বর দেয়া হচ্ছে, যাতে নাশকতাকারীদের উপস্থিতি টের পেলেই আইনশৃংখলা বাহিনীকে খবর দিতে পারেন। রেলওয়ে মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন জানান, দেশের সাধারণ মানুষ সবসময়ই রেলওয়েকে নাশকতার হাত থেকে বাঁচাতে সহযোগিতা করেছেন। যেখানেই নাশকতাকারীদের দেখা হবে সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, রেলওয়েতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রেললাইন ও ট্রেনের ভেতর সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখতে বলা হয়েছে। রেলওয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. ফিরোজ সালাহ উদ্দিন জানান, রেলওয়ের নিরাপত্তায় ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্টদের সতর্কাবস্থায় থাকার জন্য বার্তা পাঠানো হয়েছে। রেলওয়েতে যাতে কেউ কোনো ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটাতে না পারে সে বিষয়ে তারা প্রস্তুত রয়েছেন। -যুগান্তর ০১ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে