মঙ্গলবার, ০১ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৫:৫২:০২

এখনও একক প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি!

এখনও একক প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি!

বিশেষ প্রতিনিধি : দীর্ঘ সোয়া ৬ ঘণ্টা বৈঠক করেও আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে সারাদেশে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেননি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ঢাকা, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ বিভাগের একক প্রার্থী তালিকা প্রায় চূড়ান্ত করে ফেললেও অনেক পৌরসভাতে তৃণমূল থেকে দুই থেকে সর্বাধিক ৭ জন মনোনয়নপ্রত্যাশীর নাম সুপারিশ থাকায় সব একক প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে বেশ হিমশিমই খেতে হচ্ছে দলটির মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের। সে কারণে সভাটি মুলতবি রেখে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুনরায় বৈঠকে বসে ২৩৬ পৌরসভাতে মেয়র পদে দলীয় একক প্রার্থিতা চূড়ান্ত করে তা প্রকাশ এবং দল মনোনীত চূড়ান্ত প্রার্থীদের অনুকূলে দলীয় প্রতীক বরাদ্দের চিঠি প্রেরণ করা হবে বলে জানা গেছে। এক সূত্রে জানা গেছে, আজ সন্ধ্যায় বৈঠক শেষে আনুষ্ঠানিক সাংবাদিক সম্মেলনে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হতে পারে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় পৌরসভা নির্বাচনে একক মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত করতে সোমবার গণভবনে আওয়ামী লীগের ১৮ সদস্যের স্থানীয় সরকার/পৌরসভা নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের এক সভা সন্ধ্যা ছয়টা থেকে শুরু হয়ে রাত পৌনে ১২টা পর্যন্ত চলার পর মুলতবি করা হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও স্থানীয় সরকার/পৌরসভা নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে তৃণমূল থেকে আসা মেয়র পদে প্রার্থী তালিকা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে ২৩৬ পৌরসভাতে মেয়র পদে দলীয় একক প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়। বৈঠক চলাকালে নৈশভোজের বিরতির ফাঁকে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বোর্ড সদস্য এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক সাংবাদিকদের জানান, বেশিরভাগ পৌরসভায় দল মনোনীত প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে। আজ মঙ্গলবারই সব পৌরসভার মেয়র পদে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হবে। মনোনয়ন বোর্ডের অপর সদস্য লে. কর্নেল (অব) ফারুক খান রাতে জানান, প্রার্থিতা প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। আজ সন্ধ্যায় পুনরায় বৈঠকে বসে প্রার্থীদের অনুকূলে প্রতীক বরাদ্দের চিঠি চূড়ান্ত শেষে তা পাঠানো হবে। সবচেয়ে অধিক জনপ্রিয়, ত্যাগী এবং আদর্শবান নেতারাই দলীয় মনোনয়নে প্রাধান্য পাচ্ছেন। ধানমন্ডির আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার বিকেলের মধ্যেই সারাদেশ থেকে তৃণমূল নেতাদের প্রস্তাবিত মেয়র পদে প্রার্থী তালিকা ধানমণ্ডির কার্যালয়ে পৌঁছায়। তবে সেই তালিকায় তৃণমূলের নেতারা মেয়র পদে ৭০ ভাগ একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন। মাত্র শতকরা ৩০ ভাগ পৌরসভাতে মেয়র পদে একক প্রার্থিতার সুপারিশ আসলেও বাকি ৭০ ভাগ পৌরসভাতেই দুই বা ততোধিক প্রার্থীর নাম সুপারিশ করে তালিকা পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রীয় অফিসে। এমনকি অর্ধশতাধিক পৌরসভাতে তিন থেকে সর্বাধিক ৬ জনের নামের প্রস্তাব পাঠিয়েছে জেলার নেতারা। সব যাচাই-বাছাই করে বিকেলের মধ্যেই সব তালিকা গণভবনে নিয়ে যান দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এরপরে মনোনয়ন বোর্ডে দীর্ঘ রাত পর্যন্ত চলে বিচার-বিশ্লেষণ। নির্বাচন কমিশন আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা স্বাক্ষর করে যাকে মনোয়ন দেবেন, সেই মেয়র প্রার্থীই পাবেন দলীয় প্রতীক নৌকা। মনোনয়ন বোর্ডের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, মন্ত্রী-সংসদ সদস্য এবং জেলার নেতাদের নগ্ন হস্তক্ষেপের কারণেই অধিকাংশ পৌরসভাতে প্রার্থী তালিকা দীর্ঘ হয়েছে। এ নিয়ে একাধিক মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা বৈঠকে তাদের অসন্তোষের কথা জানান। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ নিয়ে তার ক্ষোভের বিষয়টি ঢেকে রাখতে পারেননি। এ কারণেই একাধিক প্রার্থী প্রস্তাবকারী জেলার পৌরসভাগুলোতে ইতোপূর্বে দলীয় ও গোয়েন্দা সূত্রে পরিচালিত জরিপ মিলিয়েই একক প্রার্থী চূড়ান্ত করা হচ্ছে বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে। সূত্রগুলোর দাবি, তৃণমূল কিংবা সংসদ সদস্যরা এবং জেলার নেতারা প্রভাবিত হয়ে যতই নাম পাঠাক না কেনো, চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে গোপন জরিপই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তবে বেশ ক’জন মন্ত্রী ও এমপি দলের ত্যাগী ও জনপ্রিয় নেতাদের বাদ দিয়ে তাদের স্ত্রী, বোন জামাই, শ্যালক কিংবা নিকটাত্মীয়দের নাম সুপারিশ করতে ব্যাপক চাপ প্রয়োগ এবং তদ্বিরের বিষয়টি বৈঠকে উঠে আসে বেশ স্পষ্টভাবেই। জানা গেছে, আজ মঙ্গলবারই পুনরায় বৈঠকে বসে সারাদেশের ২৩৬ পৌরসভাতেই মেয়র পদে দলের একক প্রার্থিতা চূড়ান্ত করে তা ঘোষণা করা হতে পারে। প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর দল মনোনীত চূড়ান্ত ২৩৬ মেয়র প্রার্থীকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত দলীয় প্রতীক বরাদ্দের চিঠি হস্তান্তর করা হবে। আর আজকের মুলতবি বৈঠকেই চূড়ান্ত মেয়র প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দের আবেদনে স্বাক্ষর করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জানা গেছে, বৈঠকে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও আমির হোসেন আমু ছাড়া মনোনয়ন বোর্ডের সভায় তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিম, ওবায়দুল কাদের, কাজী জাফরউল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. আলাউদ্দিন আহমেদ, মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ড. আবদুর রাজ্জাক, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক লে. কর্নেল (অব) ফারুক খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। -জনকণ্ঠ ০১ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে